বিশ্বকাপের সেরা একাদশ

কাতার বিশ্বকাপকে বিবেচনা করা হচ্ছে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা বিশ্বকাপ হিসেবে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম বিশ্বকাপে চমকের অভাব ছিল না। সর্বোচ্চ গোল, গ্রুপপর্বে জার্মানির বিদায়ের পাশাপাশি প্রথম আফ্রিকার দল হিসেবে সেমিফাইনালে মরক্কোর রূপকথার যাত্রার সাথী হয়েছে গোটা বিশ্ববাসী। 

অনেক তারকাই হতাশ করেছেন, আবার অনেক তরুণ ফুটবলারই নিজের প্রতিভা জানানোর মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছেন বিশ্বকাপকেই। সেখান থেকেই এবারের বিশ্বকাপের সেরা একাদশ নির্বাচন করেছে খেলা ৭১। আসুন দেখে নেয়া যাক খেলা ৭১ নির্বাচিত এবারের বিশ্বকাপের সেরা একাদশ। 

  • এমিলিয়ানো মার্টিনেজ – গোলরক্ষক (আর্জেন্টিনা)

কাতার বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে দুটো শট ফিরিয়ে বিশ্বকাপ জেতার পেছনের কারিগর এই গোলরক্ষক।

কেবল ফাইনাল নয়, পুরো বিশ্বকাপ জুড়েই আর্জেন্টিনার গোলবারে চীনের প্রাচীর গড়ে তুলেছিলেন এমি মার্টিনেজ। কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষেও এমিতে ভর করে টাইব্রেকারে ম্যাচ জিতেছিলো আর্জেন্টিনা। 

  • আশরাফ হাকিমি – রাইটব্যাক (মরক্কো)

মরক্কোর সেমিফাইনালে পৌঁছানোর পেছনে বড় অবদান ছিল তাঁদের তারকা রাইটব্যাক আশরাফ হাকিমির। আক্রমণের পাশাপাশি রক্ষণেও ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। ৪৬ বার প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নেবার পাশাপাশি ১৭ ট্যাকল করেছেন হাকিমি।

এছাড়া ডানপ্রান্তে হাকিম জিয়েশের সাথে মিলে গড়ে তুলেছিলেন দারুণ এক আক্রমণ জুটি। ছয়টি গোলের সুযোগ সৃষ্টির পাশাপাশি একটি গোলের অ্যাসিস্টও আছে তাঁর নামের পাশে। 

জসকো গিভার্দিওল – সেন্টারব্যাক (ক্রোয়েশিয়া)

এবারের টুর্নামেন্টের সেরা আবিষ্কার ক্রোয়েশিয়ার ২০ বছর বয়সী সেন্টারব্যাক জসকো গিভার্দিওল। সেমিফাইনালে একবার লিওনেল মেসির কাছে পরাস্ত হওয়া ছাড়া তাঁকে একবারও নড়বড়ে লাগেনি পুরো টুর্নামেন্টে।

গোলরক্ষক লিভাকোভিচের সাথে মিলে যেন ক্রোয়াট রক্ষণে দুর্গ গড়ে তুলেছিলেন জার্মান ক্লাব লাইপজিগে খেলা এই তরুণ। তৃতীয় স্থান নির্ধারণী ম্যাচে মরক্কোর বিপক্ষে ডাইভিং হেডে নিজের প্রথম গোলও পেয়ে গেছেন গিভার্দিওল। 

  • রোমান সাইস – সেন্টারব্যাক (মরক্কো)

সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে ২-০ গোলে হেরে বাদ পড়ার পূর্বে পুরো টুর্নামেন্টে মোটে একবার গোল হজম করেছে মরক্কো। অ্যাটলাস সিংহদের অধিনায়ক রোমান সাইসের গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তাঁদের এই যাত্রার পেছনে। 

কোয়ার্টার ফাইনালে যেন একাই রুখে দিয়েছিলেন রোনালদো-রামোসদের। কে জানে হয়তো সেমিতে খেলতে পারলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার স্বপ্নটা পূরণ হতে পারতো মরক্কোর।

  • থিও হার্নান্দেজ – লেফটব্যাক (ফ্রান্স)

ফ্রান্সের আক্রমণ এবং রক্ষণভাগ দুই জায়গাতেই সমান ভূমিকা রেখেছেন লেফটব্যাক থিও হার্নান্দেজ। বড় ভাই লুকাস হার্নান্দেজ ইনজুরিতে পড়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেলেও ফ্রান্সের ফাইনালে উঠার পেছনে বড় অবদান ছিল ছোট ভাই থিওর। 

দশটি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করা ছাড়াও টুর্নামেন্টে একটি করে গোল এবং অ্যাসিস্ট আছে থিওর। মরক্কোর বিপক্ষে গোল করে সেমিতে ফ্রান্সকে এগিয়ে দিয়েছিলেন তিনিই। এছাড়া রক্ষণ সামলাতেও দারুণ পটু এসি মিলানের এই ফুটবলার। 

  • সোফিয়ান আমরাবাত – মিডফিল্ডার (মরক্কো)

বিশ্বকাপ শুরুর আগে মরক্কোর এই তরুণ মিডফিল্ডারকে ক’জনই বাঁ চিনতেন! কিন্তু বিশ্বকাপে দারুণ পারফর্ম করে গোটা বিশ্ববাসীর নজর নিজের দিকে টেনে নিতে বাধ্য করেছেন সোফিয়ান আমরাবাত। 

প্রতিপক্ষের আক্রমণ নস্যাৎ করার পাশাপাশি নিচে থেকে দলের খেলা তৈরি করে দিয়েছেন আমরাবাত। মরক্কোর মিডফিল্ডের প্রাণ ছিলেন ফিওরেন্টিনায় খেলা এই তরুণ। আসন্ন দলবদলের মৌসুমে তাঁকে নিয়ে কাড়াকাড়ি লেগে যাবে বড় দলগুলোর মাঝে সেটা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না।

  • এনজো ফার্নান্দেজ – মিডফিল্ডার (আর্জেন্টিনা)

এবারের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা দলে সবচেয়ে বড় চমকের নাম ছিল ২০ বছর বয়সী তরুণ মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ। শুরুতে দলের একাদশে না থাকলেও মেক্সিকোর বিপক্ষে বদলি হিসেবে নেমে দর্শনীয় এক গোল করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ফাইনাল পর্যন্ত দলের একাদশের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিলেন এনজো। 

জিতেছেন বিশ্বকাপের সেরা তরুণ ফুটবলারের খেতাব। শোনা যাচ্ছে ইতোমধ্যেই তাঁর ব্যাপারে খোঁজ নিতে শুরু করেছে ইংলিশ জায়ান্ট লিভারপুল।

আঁতোয়ান গ্রিজম্যান – আক্রমণাত্নক মিডফিল্ডার (ফ্রান্স)

ক্লাবের হয়ে সময়টা ভালো না কাটলেও এবারের বিশ্বকাপে ফ্রান্সের হয়ে দারুণ ফর্মে ছিলেন আঁতোয়ান গ্রিজম্যান। দলের সবচেয়ে পরিশ্রমী ফুটবলারদের একজন ছিলেন তিনি। গোল করার পাশাপাশি করানোতেও সমান পটু এই তারকা।

আক্রমণভাগে করিম বেনজেমার অনুপস্থিতি মোটেই টের পেতে দেননি এই গ্রিজম্যান। নয়বার গোলের সুযোগ তৈরির পাশাপাশি তিনটি গোলে অ্যাসিস্ট আছে তাঁর। দলের রক্ষণ কাজেও সহায়তা করেছেন তিনি। প্রতিপক্ষের পা থেকে আটবার বল কেড়ে নেবার পাশাপাশি ৩৪ রিকোভারি আছে তাঁর নামের পাশে। 

  • লিওনেল মেসি – রাইট উইঙ্গার (আর্জেন্টিনা)

বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার পর ট্রফি ক্যাবিনেট পূর্ণতা পেয়েছে লিওনেল মেসির। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের বিপক্ষে আর্জেন্টিনা হেরে গেলেও ঘুরে দাঁড়িয়েছে তাঁর নেতৃত্বেই।

টুর্নামেন্টে সাত গোল করার পাশাপাশি তিনটি অ্যাসিস্ট আছে তাঁর নামের পাশাপাশি। আগের কোনো বিশ্বকাপেই নক আউট পর্বে গোল না করার তকমা ঘুচিয়ে দিয়েছেন এক নিমেষে।

এবারের বিশ্বকাপের নক আউট পর্বের প্রতিটি ম্যাচেই গোলের দেখা পেয়েছেন। লুসাইলে ফাইনালের মঞ্চেও করেছেন জোড়া গোল। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব  গোল্ডেন বল জেতার পাশাপাশি সর্বোচ্চ পাঁচবার ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরষ্কার জিতেছেন মেসি।

  • কিলিয়ান এমবাপ্পে – লেফট উইঙ্গার (ফ্রান্স)

কাতার বিশ্বকাপে নিজেকে দুর্ভাগাই ভাবতে পারেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। ফাইনালে হ্যাটট্রিক করেও তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রানার্স আপ হয়েই। তবে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে তিনি রাঙিয়ে দিয়েছেন এবারের বিশ্বকাপ, আট গোল করে জিতেছেন সর্বোচ্চ গোলদাতা গোল্ডেন বুটের পুরষ্কার।

মাত্র ২৩ বছর বয়সেই দুবার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলা হয়ে গেছে তাঁর। এমনকি পেলে, ম্যারাডোনাদের ছাপিয়ে বিশ্বকাপ ফাইনালে সর্বোচ্চ চার গোলের রেকর্ড তাঁর দখলে। মাত্র দ্বিতীয় ফুটবলার হিসেবে টানা দুই বিশ্বকাপ ফাইনালে গোল আছে ফরাসি এই তরুণের। 

  • জুলিয়ান আলভারেজ – স্ট্রাইকার (আর্জেন্টিনা)

অথচ এবারের বিশ্বকাপে শুরুর একাদশে থাকারই কথা ছিল না তাঁর। কিন্তু লাউটারো মার্টিনেজের অফফর্মের সুবাদে একাদশে সুযোগ মেলে তাঁর। ভাগ্যক্রমে পাওয়া সেই সুযোগটা দুহাত ভরে কাজে লাগিয়েছেন আর্জেন্টিনার তরুণ এই স্ট্রাইকার। দলকে বিশ্বকাপ জেতানোর পথে চারবার প্রতিপক্ষের জালে বল জড়িয়েছেন।

ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে অনবদ্য এক গোল করে তো স্বয়ং ম্যারাডোনার স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছিলেন। মেসির সাথে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে গড়ে তুলেছিলেন দারুণ এক জুটি। তাঁদের যুগলবন্দিতেই ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link