এক ওভারে তিন উইকেট। প্রথমে মুশফিকুর রহিম। এরপর সৌম্য সরকার। তারপর এক ইয়োর্কার বলে পরাস্ত সেট ব্যাটার কাইল মায়ার্স। নিজের প্রত্যার্বতনের নতুন আখ্যানই যেন লিখে যেতে চাইলেন আবু হায়দার রনি। সেই একটি ওভারেই যেন বুঝিয়ে দিলেন ফিরছেন তিনি স্বরুপে।
শিরদাঁড়া সোজা রেখে, অপেক্ষার দীর্ঘ প্রহর পার করতে হয়। ফিরে আসার জন্যে প্রতিটা মুহূর্তে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হয়। একটু খানিক সময় পেলেই সেটাকে বানিয়ে নিতে হয় একেবারে নিজের। আবু হায়দার রনি সে কাজটাই করেছেন ফরচুন বরিশালের হয়ে। অসাধারণ বোলিং স্পেলে সাকিব-তামিমের মুখোমুখি হওয়াকেও যেন খানিকটা স্তিমিত করে দিলেন রনি।
এবারে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) দ্বিতীয়বারের মত ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন আবু হায়দার রনি। একটা সময় এই বিপিএলে দুর্দান্ত পারফরম করে জাতীয় দলে নিজের জায়গাটা খুঁজে নিয়েছিলেন রনি। এরপর ছন্দপতনের পথ ধরে কোথাও একটা বিলীন হতে বসেছিলেন। পারফরমেন্সের ধার কোথাও একটা হারিয়ে যেতে বসেছিল।
ঠিক সে কারণেই হয়ত দলের তার প্রতি থাকা আস্থা কমতে শুরু করেছিল। কিন্তু সেই আস্থা ফিরিয়ে আনলেন তিনি। ফরচুন বরিশালকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েই ভরসার প্রতিদান দিলেন। সেই সাথে একেবারেই যেন নিভে যায়নি আশার প্রদীপ, সেটাও জানিয়ে রাখলেন।
আবু হায়দার রনি যখন প্রথমবার বল হাতে এলেন, তখন বরিশাল বেশ স্বস্তিতেই রয়েছে। ১২ ওভার শেষ ২ উইকেটের বিনিময়ে বরিশালের স্কোরবোর্ডে ১১৫ রান। কিন্তু এক লহমায় রনির চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলেন ফরচুন বরিশালের বড় রানের স্বপ্ন। একটি ওভারে বরিশালের সকল পরিকল্পনার ছকে পানি ঢেলে দিলেন।
প্রথম বলেই তুলে নিলেন মুশফিকুর রহিমকে। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলটা ভেতরে ঢুকবে ভেবেই ড্রাইভ করতে চাইলেন ইনফর্ম মুশফিক। তবে হুট করেই বলটা বাঁক খেয়ে বেরিয়ে যায় ব্যাটের সাথে আলতো সংযোগ ঘটিয়ে। পেছনে নুরুল হাসানের বিশ্বস্ত দস্তানায় বন্দী। এরপরের বলটায় নতুন ব্যাটার সৌম্যকে ভরকে দিলেন বাউন্সারে।
ঠিক তার পরের বলেই আবারও ব্যাটের খোঁচা। এবার উপড়ে গেল স্ট্যাম্প। তিন বলের মাঝেই দুইজন অভিজ্ঞ ব্যাটারকে প্যাভিলিয়নে ফেরালেন তিনি। কিন্তু তখনও যে অনেকটা পথ বাকি। তখনও বাকি হায়দারের বিষাক্ত কামড় দেওয়া।
এক বল বাদে কাইল মায়ার্সকে নিজেই তালুবন্দী করলেন রনি। নিচু হতে থাকা এক ফুলটস বলে পরাস্ত হন ফরচুন বরিশালের আশার প্রদীপ মায়ার্স। সেই এক ওভারেই যেন পুরো ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন রনি। এক রান খরচায় তিন-তিনটি উইকেট নিজের করে নেন রনি।
একটা স্বপ্নের মত শুরু হওয়া স্পেল সেখানেই থেমে যাবে তা কি করে হয়? তিনি নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসেও উইকেট শিকারের নেশায় মত্ত হলেন। তুলে নিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের উইকেট। তারপরের ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজও তার শিকারে পরিণত হন। তাতেই পাঁচটি উইকেট যুক্ত হয়ে যায় আবু হায়দার রনির নামের পাশে।
ফরচুন বরিশালকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সময়টাই যেন দিতে চাইলেন না রনি। শেষ ওভারেও রান দিয়েছেন স্রেফ ছয় রান। চার ওভার শেষে বা-হাতি এই পেসারের খরচ মাত্র ১২ রান। আর এবারের বিপিএলের তৃতীয় ফাইফার তার দখলে। শুধু তাই নয় বিপিএলের ইতিহাসে চতুর্থ সেরা বোলিং স্পেলের মালিকও এখন তিনি।
এমন একটি স্পেলই তো বদলে দেয় সবকিছু। এমন একটি বোলিং স্পেল রনিদের মত খসে যাওয়া তারকাদের আত্মবিশ্বাস জোগায়। তাদেরকে পুর্নজাগরণের নতুন উন্মাদনায় উজ্জীবিত করে। শেজদাহ লুটিয়ে পড়ে তাই সৃষ্টিকর্তাকেই জানিয়েছেন সমস্ত শুকরিয়া। প্রত্যাবর্তনের নতুন সূচনায় আশির্বাদ তো চাই।