জয়সওয়াল আসলেই কি ফুচকা বিক্রেতা ছিলেন?

রঙ চড়ানো গল্পের আবেদন সবসময়ই বেশি। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া মানুষের চড়াই উৎরাইয়ের গল্পগুলোই আমজনতাকে বেশি টানে। এই যেমন ভারতীয় ক্রিকেটের তরুণ সেনসেশন জশস্বী জয়সওয়ালকে নিয়ে জনপ্রিয় একটি গুজব।

রঙ চড়ানো গল্পের আবেদন সবসময়ই বেশি। সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া মানুষের চড়াই উৎরাইয়ের গল্পগুলোই আমজনতাকে বেশি টানে। এই যেমন ভারতীয় ক্রিকেটের তরুণ সেনসেশন জশস্বী জয়সওয়ালকে নিয়ে জনপ্রিয় একটি গুজব-  যশস্বী নাকি জনপ্রিয় হওয়ার আগে বাবার সঙ্গে ফুচকা বিক্রি করতেন।

পরবর্তীতে ভাগ্যের চাকা ঘুরে আজ তিনি ভারতীয় ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ হওয়ার পথে। অথচ এই তথ্যের পুরোটাই গুজবে পূর্ণ। আদতে, জশস্বী কখনো ফুচকাই বিক্রি করেননি। আর তাঁর বাবা পেশায় ফুচকাওয়ালাও নন।

জয়সওয়ালের ছেলেবেলা কেটেছিল উত্তর প্রদেশের ভাদোহিতে। ভাদোহি বেনারস থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। উত্তর প্রদেশ থেকে মুম্বাইয়ে ক্রিকেটীয় সুবিধা বেশি পাবেন। এই ভাবনাতেই ২০১৩ সালে মুম্বাইয়ে চলে আসেন জয়সওয়াল। এরপর আজাদ ময়দানের কাছে তাঁবু খাটিয়ে বেশ কিছুদিন কাটিয়েছেন। ফুচকা বিক্রি না করলেও শুরুর দিকে জয়সওয়ালের গল্পটা ছিল এমনই।

এরপর কোচ জোয়ালা সিংয়ের নজরে আসেন জয়সওয়াল। একটা সময় পর জোয়ালা সিংয়ের বাড়িতেই আশ্রয় হয় তাঁর। এর নেপথ্যেও রয়েছে একটি গল্প। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জয়সওয়ালের বাবা ভূপেন্দ্র সিংয়ের সাথে সাক্ষাৎ হয় জোয়ালা সিংয়ের।

সেখানেই জোয়ালা সিংয়ের কাছে একটি আবদার করে বসেন জয়সওয়ালের বাবা। তিনি বলেন, ‘আপনি ওর জীবনে দেবতার মতো এসেছেন। আপনি যশস্বীকে দিয়ে ঝাড়ু দেওয়ান, ঘর পরিষ্কার করান, শুধু আপনার কাছে রাখুন এবং তাকে একজন ক্রিকেটার বানিয়ে তুলুন।’

ব্যাস। এরপর থেকেই জোয়ালা সিংয়ের সাহচর্যে বড় হতে থাকেন জয়সওয়াল। জোয়ালা সিংয়ে নিজের যে খুব অর্থ প্রতিপত্তি ছিল, তা নয়। তবে জয়সওয়ালের মাঝে তিনি বিশেষ কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন। আর সে কারণেই ২০১৩ সালের পর জয়সওয়ালকে আর কোনও সংগ্রাম করতে হয়নি।

জোয়ালা সিং নিজে তাঁকে ৪০ হাজার টাকার ব্যাট কিনে দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়রা যে ব্যাটে খেলে সেই ব্যাট দেওয়া হয়েছিল তাঁকে কিশোর বয়সেই। এমনকি জয়সওয়ালে ব্যাটিংয়ে উন্নতির জন্য তিনি নিজের খরচে ইংল্যান্ডেও পাঠিয়েছিলেন। মূল কথা জোয়ালা সিং তাঁর সঙ্গে কোচ হিসেবে নয়, বাবা হিসেবেই কাজ করেছেন। যেখানে দারিদ্র্যতার আবহ ছিল। কিন্তু তাঁর সংস্পর্শ কখনোই পাননি জয়সওয়াল।

কিন্তু তারপরও কেন জয়সওয়ালকে নিয়ে এমন একটা জনপ্রিয় গুজব রটিয়ে পড়ল? মূলত আজাদ ময়দানে অনেক ফুচকা বিক্রেতা বসত। এর মধ্যে জয়সওয়ালের অনেক বন্ধুও ছিল। তাদের সঙ্গে রোজ বিকালে দেখা যেতে জয়সওয়ালকেও। কখনও কখনও বন্ধুর দোকানে নিজেও ফুচকা বিক্রি করেছেন। কিন্তু কখনোই তাঁর বা বাবার কোনো দোকান ছিল না।

মূলত এই গুজবটা আরো পোক্ত হয়েছিল ২০১৮ সালে সামাজিক মাধ্যমে একটা ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে। কোনো এক ফুচকা বিক্রেতার পাশে দাঁড়িয়েছিলেন জয়সওয়াল। আর ঐ ছবিটাকে কেন্দ্র করেই তাঁকে ফুচকা বিক্রেতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয় পরবর্তীতে।

এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দলে সুযোগ পাওয়ার পর ফুচকা বিক্রেতা এক ব্যক্তি নিজেকে জয়সওয়ালে বাবা বলে দাবি করেছিলেন সে সময়। অবশ্য সেই ভিডিওতে জয়সওয়াল নিজেও ছিলেন। কিন্তু সেদিন হয়তো তিনি ভাবেননি, ওই এক ভিডিওই তাঁকে ও তাঁর বাবাকে ফুচকাওয়ালা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিবে।

জশস্বী জয়সওয়াল কখনোই ফুচকা বিক্রেতা ছিলেন না। এর অর্থ কি তাঁর শ্রম ছিল না? এই যে ২১ বছর বয়সে এসে লাল বলের ক্রিকেটে ক্রমেই নিজেকে উচ্চাসনে আসীত করছেন, এর নেপথ্যে কি কোনো সংগ্রাম ছিল না? অবশ্যই ছিল।

বরং ফুচকাওয়ালার চেয়ে কার্যত বেশিই ছিল। কিন্তু আমজনতা দারিদ্র্যে ঘেরা গল্পের দারুণ পরিণতিতে তৃপ্ততা খুঁজে পায়, নিজেকে ওই আসনে অনুমেয়ভাবে কল্পনা করে। আর এ কারণেই এ রকম একটা গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সময়ের সাথে।

এমন গুজবে সবচেয়ে বেশি কষ্টটা হয়তো পান, জোয়ালা সিং। তাঁর বাড়িতে জয়সওয়ালের ১০ বছর থাকাকালে কোনো অভাবই বুঝতে দেওয়া হয়নি। বরং উন্নতি সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন সব সময়। অথচ, ক্যারিয়ারের সুসময়ে এসে কিনা তাঁকেও এই অত্যাচার শোনা লাগে।

ফুচকাওয়ালা থেকে জনপ্রিয় ক্রিকেটার। জোয়ালা সিং এই জনপ্রিয় শব্দটাই যতটা তৃপ্তবোধ করেন, নিশ্চয়ই ঠিক ততটুকুই বিরক্তির ভাবলেশ ফুটে ওঠে ‘ফুচকাওয়ালা’ ট্যাগলাইনে জনপ্রিয় গুজবে।

 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...