তারা লড়তে এসেছে

এই মেয়েরা লড়াই করতে জানে, জিততে জানে। সেটা তাঁরা বারবারই প্রমাণ করেছে। তবে এবার একটূ নতুন করে নিজেদের চেনানোর লড়াই ছিল। কেননা বাংলার মেয়েরা এবার বিশ্বমঞ্চে, নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপে। আর এই প্রথম যে একটা লম্বা ইতিহাসের শুরু তাও বোঝাচ্ছেন নিগার সুলতানা জ্যোতিরা। সবমিলিয়ে নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ মিশনের শুরুর চার ম্যাচে তাঁরা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন নতুন এক ভোরের।

প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা যেকোন দেশের জন্যই বিশেষ। যেমন বাংলার মেয়েরা এই বিশেষ স্মৃতিটাকে একটু রাঙিয়েই রাখতে চাইছেন। তবে জাহানারা, জ্যোতিদের জন্য চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। একে তো নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ তাও আবার খেলা হবে নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনে।

বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররা অবশ্য চ্যালেঞ্জ নিতে ভয় পান না। কেননা বাংলাদেশের মেয়েদের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই পেরিয়ে আসতে হয়েছে নানা বাঁধা। এছাড়া অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এই মেয়েরা নিজেদের জাত চিনিয়েছেন। এমনকি বাংলাদেশ একমাত্র এশিয়া কাপও জেতে মেয়েদের হাত ধরেই।

তবুও নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়েই এগিয়েছে মেয়েদের ক্রিকেট। তবে জ্যোতি, সালমা, রুমানারা প্রতিনিয়িত পরীক্ষা দিয়েছেন। কখনো মাঠে, কখনো মাঠের বাইরেও। তবেই মিলেছে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলার টিকিট। নিঃসন্দেহে বিশ্বকাপ খেলাটা এই মেয়েদের জন্য বড় অর্জন ছিল।

তবে এতটুকুতেই তাঁরা খুশি নন। নিউজিল্যান্ডের কঠিন কন্ডিশনেও নিজেদের উপস্থিতিটা জানান দিতে চেয়েছেন। এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে বাংলাদেশ চারটি ম্যাচ খেলেছে। আর এই চার ম্যাচেই নিজেদের চিনিয়েছেন জাহানারারা। একটা সুদিনেরও আভাষ পাওয়া যাচ্ছে তাঁদের ক্রিকেটে।

বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই অবশ্য বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল কঠিন প্রতিপক্ষের। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মেয়েদের সাথে ম্যাচ। তবে জাহানারারাও ঘাবড়ে জাননি। বরং চোখে চোখ রেখে লড়াই করেছেন। আগে ব্যাট করতে নামা দক্ষিণ আফ্রিকাকে মাত্র ২০৭ রানেই অল আউট করে দিয়েছিল ফারিয়া তৃষ্ণারা।

ব্যাট হাতেও দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন দুই ওপেনার শামিমা সুলতানা ও শারমিন আকতার। দুজনে মিলে ৬৯ রানের জুটি গড়েছিলেন। ফলে বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচেই একটা জয়ের সুবাস পাওয়া যাচ্ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর জ্যোতিরা পেরে উঠেননি। ফলে প্রথম জয়ের জন্য অপেক্ষা বেড়েছে।

বিশ্বকাপে এই একটা ম্যাচে বাংলাদেশ আসলে সেভাবে লড়াইটা করতে পারেনি। সেটা হচ্ছে স্বাগতিকদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ। ফারজানা হকের দারুণ একটি হাফ সেঞ্চুরির পরেও ৮ উইকেট হারিয়ে ১৪০ রান করে বাংলাদেশ। বৃষ্টিবিঘ্নিত সেই ম্যাচে সহজ টার্গেট কিউই মেয়েরা পেরিয়ে যায় ৯ উইকেট হাতে রেখেই।

তবে এরপরের আবার লেখা হলো ফিরে আসার গল্প। দেখা মিললো স্বপ্নের সেই জয়ের। যেই জয়ের জন্য অপেক্ষা করছিল একটা গোটা জাতি। পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েরা পেল বিশ্বকাপের প্রথম জয়। পাকিস্তানকে ৯ রানে হারিয়ে লিখা হলো নতুন ইতিহাস। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ছেলেরাও প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে জয় পেয়েছিল এই পাকস্তানের সাথে। মেয়েরা যেন ফিরিয়ে আনলেন পুরনো সেই স্মৃতিই।

তবে সেই আনন্দের রেশ কাটতে না কাটতেই আরেকটি ম্যাচ। এবার বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আগের ম্যাচে অসাধারণ জয়ের পর মেয়েরাও চাঙা ছিল। আর ভোর রাত থেকেই টিভি পর্দায় নজর রেখেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা।

খেলা দেখার জন্য ভোর বেলায় ঘুম থেকে উঠা দর্শকদের হতাশ করেনি বাংলাদেশ। আগে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কঠিন পরীক্ষার সামনে ফেলে দিয়েছিলেন নাহিদা আকতাররা। ফলে মাত্র ১৪০ রানেই থেমে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস।

আরেকটি জয়ের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল সকালে। আজও লড়াই করলেন ফারজানা হক ও নিগার সুলতানা জ্যোতি। নাহিদা আকতারও লড়লেন ব্যাট হাতে। তবে আজ আবারো একটি স্বপ্ন ভঙ্গ। মাত্র চার রানের জন্য হারতে হলো বাংলাদেশের জন্য।

তবে ক্রিকেট মাঠে বাংলার মেয়েদের লড়াই, আগ্রাসন মন জিতে নিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। এত বাঁধার মধ্যেও নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপেই ক্রিকেট দুনিয়াকে একটা বার্তা দিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। এই মেয়েরা শুধু অংশগ্রহণ করতে আসেনি, লড়াই করতে এসেছে, জিততে এসেছে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link