তিনি প্রতি ম্যাচে সেরা ছন্দে থাকেন না, কিন্তু যেদিন থাকেন সেদিন তাঁর হাত থেকে বের হয় একের পর এক আগুনের গোলা – আর সেই আগুনের উত্তাপ টের পেয়েছে কলম্বোর বাতাস, আগুনে পুড়ে ভস্ম হয়েছে কেপ টাউনের উইকেট। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে গিয়েছেন মোহাম্মদ সিরাজকে নিয়েই কথা হচ্ছে।
হায়দ্রাবাদের অটো চালক বাবার ঘরে বেড়ে ওঠা সিরাজ যখন এলাকার মাঠ দাপিয়ে বেড়াতেন তখন কে ভেবেছিল এই ছেলে ভারতের জার্সি গায়েও দুর্ধর্ষ এক পেসার হবে। কেউ হয়তো সম্ভাবনা দেখেছিল খানিকটা, কেউ কল্পনা করেনি – তবে প্রচন্ড পরিশ্রম ও দৃঢ়তার বদৌলতে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন তিনি; গায়ে জড়িয়েছেন আরাধ্য জার্সিটা।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাঁদের মাটিতে আগে কখনোই সিরিজ জেতেনি ভারত; সেঞ্চুরিয়নে বিশাল ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় এই সফরেও সিরিজ জেতার স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছিল। সেটার ক্ষোভকে সঙ্গী করেই পরের টেস্টে বিধ্বংসী রূপ ধারণ করেছিলেন এই ডানহাতি – টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেয়া প্রোটিয়ারা অসহায় আত্মসমর্পণ করেছিল তাঁর কাছে।
এইডন মার্করামকে দিয়ে শুরু, এরপর একে একে ফিরিয়েছিলেন ডিন এলগার, ডি জর্জিদের। শেষপর্যন্ত তাঁর ঝুলিতে ঢুকেছে ছয়খানা উইকেট – বিনিময়ে স্রেফ পনেরো রান খরচ করেছেন তিনি। এমন দুর্ধর্ষ স্পেলের বদৌলতে ৫৫ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা, ফলে জয়ের পথে তখনি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। তাই তো ম্যাচসেরার পুরষ্কারটাও উঠেছে এই পেসারের হাতে।
এর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালে তাঁর এমন অতিমানবীয় বোলিংয়ের সাক্ষী হয়েছিল শ্রীলঙ্কা। স্রেফ ১৬ বলের ব্যবধানে ফাইফার পূর্ণ করেছিলেন তিনি, সবমিলিয়ে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। তাতেই ৫০ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা।
নিজের দিনে এই তারকা কাউকেই ছাড় দেন না, রীতিমতো আনপ্লেয়েবল হয়ে ওঠেন। আসুরিক কোন শক্তি ভর করে তাঁর ওপর, এমন দিনে বিশ্বের কোন ব্যাটারই বাইশ গজে নামতে চাইবেন না।
ব্যাটাররা আসলে বুঝতেই পারেননা মোহাম্মদ সিরাজের হাত থেকে কি বেরিয়ে আসছে; একটা স্পেলে কত কত ঘরানার ডেলিভারি করেন তিনি। অথচ সবসময় একই স্টাইল, একই গ্রিপ, এমনকি মুখে ফুটে ওঠা বিদ্রোহী ভাবটাও প্রতিটা ডেলিভারিতে একইভাবে দৃশ্যমান; মনে হয় যেন সবগুলো একটা বলেরই প্রতিলিপি।