টেপ টেনিস ফেরত বিপিএল বিস্ময়

তানভির ইসলাম পারফরম করেন, যখন যেখানে সুযোগ পান সেখানেই। আসলে তানভির ইসলামের জন্য পারফরম করে যাওয়াটা খুবই জরুরি। কারণ, ঢাকা শহরে তিনি এসেছিলেনই যে বড় ক্রিকেটার হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই।

বরিশাল জেলার উজিরপুর থানার ছেলে তানভির। গ্রামে টেপ টেনিস খেলে বেড়াতেন। টেনিস বল ঘোরানোটা প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার। সেই বলেই দূরন্ত স্পিন করতেন। নিজের মধ্যে স্বপ্ন ছিলো ক্রিকেটার হওয়ার। সাহস করে বাবাকে বলতে পারছিলেন না।

বাবা থাকেন ঢাকায়। ছুটিতে বাড়ি এলে এলাকার কয়েক জন গিয়ে ধরলেন-আপনার ছেলেকে ক্রিকেটে দিয়ে দেন। বাবা এক বাক্যে ‘না’ করে দিলেন-ক্রিকেট খেলে কিছু হবে না। এখানেই শেষ হয়ে যেতে পারতো ক্রিকেটার তানভিরের গল্প।

এই সময় ত্রানকর্তা হয়ে এলেন তানভিরের নানা। তিনি বললেন, ‘ক্রিকেটই যখন ভালোবাসে, ওকে একটা সুযোগ দাও। অন্তত দুটো বছর চেষ্টা করুক। না পারলে আবার বাড়ি ফিরে আসবে।’

সেটা ২০১২ সালের ঘটনা। বাবার সাথে ঢাকায় এলেন তানভির। বাবাই ধরে রায়ের বাজার ক্লাবে ঢুকিয়ে দিলেন। সেখানে তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট খেললেন তানভির। প্রথম বছরেই সংগঠকদের চোখে পড়ে গেলেন। সেখান থেকে দ্বিতীয় বিভাগের দল খেলাঘর নিয়ে এলো তানভিরকে।

এই দলে পাঁচ মৌসুমেই দারুণ সাফল্য পেলেন। আর এই খেলাঘরে তাকে দেখলেন সাবেক টেস্ট তারকা নাফিস ইকবাল। নাফিসের প্রতি তাই কৃতজ্ঞতার শেষ নেই তানভিরের। আরেকজনকে খুব স্মরণ করেন। তিনি হলেন প্রথম কোচ সাইফুল ইসলাম। এই দু’জনই অনেকটা গড়েপিটে ক্রিকেটার হিসেবে বড় করেছেন তানভিরকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই তো বাঁহাতি স্পিনারদের ছড়াছড়ি। সেই মোহাম্মদ রফিক থেকে শুরু করে এখনকার সাকিব আল হাসান কিংবা তাইজুল ইসলাম – বাঁ-হাতি স্পিনাররা এখান থেকে যেমন হাত ভরে পেয়েছেন, তেমনি পারফরম্যান্স করে প্রাণ ভরে ফিরিয়েও দিয়েছেন অনেকবার।

ফলে, এখানে তানভিরের স্বপ্নপূরণের পথটা সোজা হবে না। তবে তানভির চ্যালেঞ্জ নিতে তৈরি। তাই বলে আবার নিজেকে খুব দ্রুত পরের ধাপে দেখার আশাও করছেন না। আস্তে আস্তেই নিজেকে তৈরি করছেন তিনি।

পারফরম্যান্স বলছে, নিজেকে তৈরি করার পথেই আছেন তানভির। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে পারফরম করেছেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) তিনি ভাল করেন বরাবরই। গত আসরেও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের শিরোপা জয়ে বড় অবদান রেখেছিলেন। তারপরও এবার প্রথম কয়েকটা ম্যাচে টিম কম্বিনেশনের কারণে একাদশে ছিলেন না তানভির। তবে, যখন ফিরলেন বুঝিয়ে দিলেন তিনি হারিয়ে যাননি। চার উইকেট নিলেন বিপিএল মৌসুমে নিজের প্রথম ম্যাচেই।

না, পারফরম করার চ্যালেঞ্জটা আজো ধরে রেখেছেন তানভির। তানভিরও চান পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা রাখতে। তাই হোক। হঠাৎ ফুরোতে থাকা বাংলাদেশের স্পিন ধারায় উঠে আসুক নতুন স্বপ্ন। সবচেয়ে বড় কথা বাংলাদেশের মূল বয়সভিত্তিক ক্রিকেট কাঠামোর বাইরে থেকেও উঠে আসুক দু একটা প্রতিভা। প্রমাণ হোক, দেশে সহজাত প্রতিভার স্রোতেরও জায়গা আছে মূল ধারায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link