ইংল্যান্ড হয়ে জিম্বাবুয়ে ফেরা ব্যালান্স

নাড়ির টান পড়লেই নীড়ে ফিরতে হয়! কথায় আছে মানুষ যতো দূরে যাক না কেন, নাড়ির টান বলে একটা ব্যাপার আছেই। সম্ভবত গ্যারি ব্যালান্সের বেলায়ও তাই হলো। নইলে এই ‘ইংলিশ’ ক্রিকেটারের হঠাৎ জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার মনোবাসনা জাগবে কেন! গ্যারি ব্যালান্সের জন্ম ও বেড়ে ওঠা জিম্বাবুয়ের হারারে শহরে।

এমনকি জিম্বাবুয়ে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের হয়েও খেলেছিলেন। পরবর্তীতে স্কুলে থাকাকালীন পাড়ি জমিয়েছিলেন ইংল্যান্ডে। নইলে হয়তো ক্রিকেটবিশ্ব ইংল্যান্ড দলের গ্যারিকে নয়, চিনতো জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটার গ্যারি ব্যাল্যান্সকে।

জন্মভূমির হয়ে খেলার ইচ্ছেটা পুষে রেখেছিলেন অনেক দিন ধরেই। গ্যারির বয়সটা এখন বত্রিশ। তাতে কি! বেটার লেট দ্যান নেভার। এক জীবনের আফসোসের চেয়ে একটা সাহসী পদক্ষেপ- বেশ ভালো অপশন। এই বছরের শুরুতেই ইংল্যান্ড ছেড়ে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার জন্য আইসিসি-র কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। জাতীয় দল বদলাতে আইসিসির নিয়মটি হল – পূর্ণ সদস্য দেশের হয়ে সর্বশেষ খেলার পর তিন বছর অব্দি আন্তর্জাতিক ম্যাচ না খেলে থাকতে হবে। এদিকে গ্যারি ব্যালান্স আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন ২০১৭ সালে। এদিক বিবেচনায় জাতীয় দল বদলানোর যোগ্যতা আছে তাঁর। অপেক্ষা এখন কেবল মাত্র আইসিসির অনুমোদনের।

অবশ্য সম্প্রতি বর্ণবাদের অভিযোগে অভিযুক্ত গ্যারি। সতীর্থ আজিম রফিকের প্রতি বর্ণবাদের অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। যদিও গ্যারি নিজের ভুল স্বীকার করে নিয়েছেন এবং জানিয়েছেন এই ঘটনায় তিনি অনুতপ্ত। শুনতে খারাপ শোনালেও এটা ঠিক যে, সেই ঘটনাটাই হয়তো  ব্যালান্সের জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলার পথটা কিছুটা সহজ করেছে। কারণ, বর্ণবাদী আচরণের কারণে ইংলিশ ক্রিকেটে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমেছে।

গ্যারি ইংল্যান্ডে ঘরোয়া ক্রিকেটের পথ পাড়ি দিয়েই নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন জাতীয় দলে। ইংল্যান্ডের হয়ে গ্যারির টেস্ট অভিষেক ঘটেছিল ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ইংল্যান্ডের জার্সিতে খেলেছেন ২৩ টি টেস্ট। ৩৭.৪৫ গড়ে করেছেন মোট ১৪৯৮ রান। রয়েছে চারটি শতক ও সাতটি অর্ধশতক। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ঘটেছিল ওয়ানডে অভিষেক। ১৬ ওয়ানডেতে করেছেন ২৯৭ রান।

গ্যারির ক্যারিয়ারের শুরুটা ছিলো দুর্দান্ত। মাত্র ১০ টেস্টে ইংলিশ ক্রিকেটের দ্রুততম ক্রিকেটার হিসেবে এক হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে ফেলেছিলেন ব্যালান্স। কিন্তু দারুণ সেই ফর্ম পরে আর ধরে রাখতে পারেননি তিনি। ধীরে ধীরে মিইয়ে গেলেন। এক পর্যায়ে দল থেকেই বাদ পড়লেন।

গ্যারি প্রসঙ্গে জিম্বাবুয়ের কোচ ডেভ হটনও বেশ ইতিবাচক। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ডের সাবেক ব্যাটার গ্যারি ব্যালান্স যদি তার জন্মভূমিতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তবে জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলতে তাকে স্বাগত জানানো হবে।’

কোচ ডেভ হাটনের সঙ্গে গ্যারির পারিবারিক যোগসূত্র সেই ছোট্টবেলা থেকে। গ্যারির বাবা সম্পর্কে হাটনের স্ত্রীর কাজিন। যাই হোক বলাই যায় জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট (জেডসি) গ্যারিকে দলে ভেড়াতে মুখিয়ে আছে। গ্যারি এখন খেলছেন কাউন্টি ক্লাব ইয়র্কশায়ারের হয়ে। জিম্বাবুয়ের হয়ে খেলতে হলে তাকে ইয়র্কশায়ারের সঙ্গে ২০২৪ সাল পর্যন্ত মেয়াদী আকর্ষণীয় চুক্তিটি ভঙ্গ করতে হবে।

আইসিসি অনুমোদন দিলে এবং সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে গ্যারি ব্যাল্যান্সের সম্ভাব্য স্থানান্তর পরবর্তী বছরের শুরুর দিকে হতে পারে। যদি তিনি জিম্বাবুয়ে দলে ফিরে যান ক্রিকেটবিশ্ব তখন নতুন করে পরিচিত হবে ‘জিম্বাবুইয়ান ক্রিকেটার গ্যারি ব্যালান্স’ এর সাথে!

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link