জার্মান প্রতাপে ম্লান রোনালদোরা

‘ফুটবলে ২২ জন খেলোয়াড় একটা বলের পেছনে ৯০ মিনিট ছোটে আর খেলাটা শেষ পর্যন্ত জার্মানি জিতে যায়!’

জার্মানির ফুটবল দল নিয়ে কিংবদন্তি গ্যারি লিনেকারের এই উক্তি অমর হয়ে আছে ফুটবলে। কিন্তু গত কয়েকবছরে বিশেষ করে ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ের পর থেকে হার না মানা জার্মানদের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। ফিলিপ লাম, মিরোস্লাভ ক্লোসাদের অবসরের পর পালাবদলের মাঝে দিয়ে যাওয়া জার্মান দল চাপের মুখে অল্পতেই ভেঙে পড়ে গত দুইটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে। ২০১৬ ইউরোতে তবু সেমিফাইনালে পৌঁছেছিল, ২০১৮ বিশ্বকাপে তো গ্রুপপর্বের গন্ডিই পেরোতে পারেনি জার্মানরা।

২০১৮ বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচে মেক্সিকোর বিপক্ষে হেরে ব্যাকফুটে চলে যাওয়া জার্মানরা আর ফিরতে পারেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে জিতলেও শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ পড়েন টনি ক্রুস- টমাস মুলাররা। এই হারের পর তুমুল সমালোচনার সম্মুখীন হয় জার্মান দল।

গ্যারি লিনেকার পর্যন্ত তার উক্তি পরিবর্তন করেন। খানিকটা পরিমার্জন করে তিনি বলেন, ‘২২ জন খেলোয়াড় একটি বলের পেছনে ৯০ মিনিট ছুটলেও দিন শেষে সব সময় জার্মানি জেতে না। আগে যা বলেছিলাম তা এখন কেবলই ইতিহাস !’

মূলত বিশ্বকাপ হারের পর থেকে এখনো পর্যন্ত কক্ষপথে ফিরতে পারেনি জার্মান ফুটবল। মাঝেমাঝে ভালো ফুটবল উপহার দিয়ে ক্ষণিকের আশা জাগালেও পূর্বের ধারাবাহিক ভালো ফুটবল উপহার দিতে পারেনি একবারও। উয়েফা ন্যাশন্স লিগেও বাদ পড়তে হয়েছে গ্রুপপর্ব থেকেই। ইউরোর বাছাইপর্বে হেরেছে উত্তর মেসিডোনিয়ার মতো দলের কাছেও!

২০০৪ সালে ইয়ুর্গেন ক্লিন্সম্যানের সহকারি হিসেবে হিসেবে জার্মানির কোচিং স্টাফে যোগ দেন জোয়াকিম লো। দুই বছর পর ক্লিন্সম্যান দায়িত্ব ছেড়ে দিলে জার্মান ফেডারেশন তাকেই প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়। সেই যে গাঁটছড়া বাঁধা, জার্মানি আর জোয়াকিম লো এখনো চলছেন সমান গতিতে।

কিন্তু, সবকিছুরই শেষ বলে একটা শব্দ অভিধানে আছে, শুনতে শ্রুতিমধুর না হলেও বাস্তবতার নিরিখে মেনে নিতে হয়। এবারের ইউরো দিয়েই জার্মানির সাথে প্রায় ১৭ বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করছেন লো। নিজের শেষটা যে তিনি শিরোপা জিতেই রাঙাতে চাইবেন সেটা নিশ্চয় বলার অপেক্ষা রাখে না।

এবারে ইউরোতে গ্রুপ অব ডেথে জার্মানির সঙ্গী বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স এবং হাঙ্গেরি। প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের বিপক্ষে হার দিয়েই এবারের যাত্রা শুরু করে জার্মানি। ম্যাটস হামেলসের আত্নঘাতী গোলে হেরে যায় ফরাসিদের কাছে। তবে স্কোরলাইন আপনাকে কখনোই জানাবে নাহ জার্মানি মোটেও হেরে যাওয়ার মতো খেলেনি সেদিন। বল পজেশনে এগিয়ে থাকার পাশাপাশি ফ্রান্সের গোলমুখে শট নেয় ১০টি।

স্রেফ ভাগ্য পাশে না থাকায় সেদিন পয়েন্ট শূন্য হাতে ফিরতে হয় তাদের। দ্বিতীয় ম্যাচেই জার্মানির তোপের মুখে পড়ে রোনালদোর পর্তুগাল। ম্যাচের শুরুতে রোনালদো গোল করে এগিয়ে দিলেও ম্যাচে ফিরতে সময় নেয়নি জার্মানরা। মুহুর্মুহু আক্রমণে দিশেহারা করে ফেলে পর্তুগিজ রক্ষণভাগকে, প্রথমার্ধ শেষ হবার আগেই এগিয়ে যায় ২-১ গোলে। দ্বিতীয়ার্ধেও পর্তুগিজদের নিয়ে ছেলেখেলা করে লো’র শিষ্যরা।

ম্যাচ জিতে নেয় ৪-২ গোলে। ম্যাচের ফলাফল দেখে আপনি বুঝতে পারবেন নাহ জার্মান বুলডোজারের সামনে কতটা অসহায় ছিলেন রোনালদোরা। শেষের দিকে কয়েকটা সহজ সুযোগ মিস না করলে হাফ ডজন গোল দেয়াও অসম্ভব ছিল না জার্মানদের পক্ষে। ফেবারিট হিসেবে শুরু না করলেও দ্বিতীয় ম্যাচের ক্ষুরধার পারফরমেন্স জানান দেয় শিরোপা জিততে কতটা মরিয়া জার্মানি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link