নন্দিত নক্ষত্রের নিন্দিত পতন

জ্বিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে তখন সোনালী প্রজন্ম। ইতিহাসের সেরা সময় পাড় করা জিম্বাবুয়ে দলটায় তখন তারার মেলা। সেই সময় দেশটার ক্রিকেটে আসেন এক নতুন নক্ষত্র। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট পেয়েছিল তাঁদের সর্বকালের সেরা পেসারকে। যিনি দেশটার পেস বোলিং রেকর্ডকে ভেঙে চূড়ে গড়েছিলেন এক নতুন ইতিহাস। তাই জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটে পেস বোলিং ইতিহাস মানে একজনই, তিনি হিথ স্ট্রিক।

হিথ স্ট্রিকের বাবাও ছিলেন জিম্বাবুয়ে দলের ক্রিকেটে। বাবার অনুপ্রেরণাতেই স্কুল দলের হয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তিনি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই দলের সেরা বোলার বনে যান তিনি। সেরা বোলার হয়ে একটা বিপদেও পড়েছিলেন তিনি। তাঁকে ব্যাটিং এ নামানো হতো ৭-৮ এ। ফলে তখন থেকেই তাঁর সম্ভাবনীয় ব্যাটিং ক্যারিয়ারের অপমৃত্যু হতে থাকে। তবে তাঁর প্রতিভার তো আর নষ্ট করা যায়নি।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও হিথ স্ট্রিক পেসার হিসেবেই অধিক পরিচিত হলেও জিম্বাবুয়ের প্রেক্ষাপটে তিনি ছিলেন কার্যকরী অলরাউন্ডার। ১৯৯৩ সালে তাঁর অভিষেক টেস্টেই ম্যাচ বাঁচাতে দুই ঘন্টা বাইশ গজ আঁকড়ে প্ড়ে ছিলেন। অভিষেক ইনিংসেই খেলেছিলেন ১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। যদিও অভিষেক টেস্টে কোনো উইকেট পাননি তিনি।

তবে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেই রাওয়ালপিন্ডিতে নেন ৫ উইকেট। ওই ম্যাচে মোট ৮ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। সেই ম্যাচে পাকিস্তানের ইনজামামুল হক কে দুই ইনিংসেই বোল্ড করেছলেন এই পেসার। সেই ম্যাচের পর তাঁকে আর কখনো পিছনে তাকাতে হয়নি। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটের ইতিহাস লিখেছেন নতুন করে। প্রতিনিয়িত নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়ে হয়েছেন কিংবদন্তি।

ক্যারিয়ারের প্রথম ৫০ টেস্ট উইকেট নিতে খেলেছেন মাত্র ১১ ম্যাচ। ক্যারিয়ারের ২৫ তম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের প্রথম বোলার হিসেবে নেন ১০০ উইকেট। তারপর কালক্রমে দেশটির একমাত্র বোলার হিসেবে ১৫০ ও ২০০ তম উইকেটও নেন। ওয়ানডে ফরম্যাটেও হিথ স্ট্রিকের ঝুলিতে আছে ২৩৯ উইকেট। সবমিলিয়ে জিম্বাবুয়ের হয়ে ৬৫টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন এই কিংবদন্তি। ৬৫ ম্যাচে তাঁর সংগ্রহ মোট ২১৬ উইকেট।

ব্যাটসম্যান হিসেবে সেই ছোট বেলা থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অবধি কখনোই নিজের পুরোটা দেয়ার সুযোগ পাননি তিনি। তবুও দলের প্রয়োজন প্রায়শই জ্বলে উঠতো তাঁর ব্যাট। ১৮৯ ওয়ানডে ম্যাচে প্রায় ৩০ গড়ে করেছেন ২৯৪৩ রান। ২৩টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে ২৭ গড়ে করেছেন ৩৩৩ রান। এই ফরম্যাটে তাঁর স্ট্রাইকরেট প্রায় ১৭০। টেস্ট ক্রিকেটেও তাঁর ঝুলিতে আছে ১৯৯০ রান। লোয়ার মিযল অর্ডারে তাঁর ব্যাটিংটা ছিল বেশ কার্যকর।

হিথ স্ট্রিক ফিল্ডার হিসেবেও ছিলেন তাঁর সময়ের অন্যতম সেরা। জিম্বাবুয়ের এই পেসার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন ২০০৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাঁকে বাংলাদেশের বোলিং কোচ হিসেবে নিয়োগ দেয়। ২০১৬ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশের বোলিং কোচের দায়িত্ব পালন করেন। তারপর তিনি ২০১৬ সালে আবার জিম্বাবুয়ের হেড কোচ পদে নিয়োগ পান।

জিম্বাবুয়ের এই সাবেক অধিনায়ককে আসলে এসব পরিসংখ্যানে ঠিক মাপা যাবে না। তাঁর পরিসংখ্যান দেখে খুব সাদামাটা একজন পেসার মনে হলেও তিনি ছিলেন জিম্বাবুয়ের সর্বকালের সেরা। ওয়ানডে বা টেস্ট – যেকোনো ফরম্যাটে তিনি জিম্বাবুয়ের হয়ে যে পরিবান উইকেট পেয়েছেন – সেটা আর কারো নেই।

দেশটিতে তাঁর মানে পেসার এর আগে বা পরে কখনো আসেনি। তিনি ছিলেন দেশটির সোনালী দিনের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। নতুন কোনো নক্ষত্র আসেনি বলেই হয়তো জিম্বাবুয়ের ক্রিকেটে এমন ঘোরতর অমানিশা! স্ট্রিক নিজেও সেই অন্ধকারেই হারিয়েছেন। ফিক্সি-স্পট ফিক্সিংয়ে জড়িয়ে নিজের গোটা ক্যারিয়ারের সুনাম খোয়া দিয়েছেন।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link