মাঙ্কিগেটের দুয়ার বন্ধ

অস্ট্রেলিয়ার কঠিন কন্ডিশনে ব্যাটিং করছিলেন ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং। ব্রেট লির মত বলারকে সামলে উঠেই তিনি কিছু একটা বললেন অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি অলরাউন্ডার অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে। মুহূর্তেই পরিস্থিতির অবনতি। আম্পায়ারদের হস্তক্ষেপ। নিন্দার ঝড়। সে ঝড় ক্রমশ বাঁক নিতে থাকে।

হরভজন সিং নাকি সাইমন্ডসকে ‘মাঙ্কি’ বলেছিলেন। ব্যাস! তাতেই পুরো গণমাধ্যম বিভক্ত দুইভাগে। একের পর এক সংবাদ সম্মেলন। তাছাড়া হরভজনের নিষেধাজ্ঞার বিপক্ষে ভারতীয় খেলোয়াড়দের অবস্থান। গণমাধ্যমে সিরিজ বয়কটের ঘোষণা দেওয়া কতকিছুই হয়েছিল ২০০৮ সালে সিডনি টেস্টকে ঘিরে। ‘মাঙ্কিগেট’ নামেই সে ঘটনা স্থান করে নেয় ইতিহাসের পাতায়।

তবে সে ঘটনার পেছনে অস্ট্রেলিয়ার খেলোয়াড়দের অতিরিক্ত স্লেজিংকে দায়ী করেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। খোদ শচীন টেন্ডুলকার অবধি বলেছিলেন অজি ক্রিকেটাররা প্রতিনিয়ত নানান ধরণের উষ্কানিমূলক মন্তব্য করছিলেন। আর খেলার মাঠে অ্যান্ডু সাইমন্ডস ঠিক কতটা আগ্রাসী ছিলেন তা নিশ্চয়ই সবার জানা। তিনি প্রতিপক্ষের জন্যে বিন্দুমাত্র স্বস্তির জায়গা ছেড়ে দিতেন না।

তবে সে ঘটনার হয়ে গেছে এখন প্রায় ১৪ বছর। আর সে ঘটনা যেমন ইতিহাসের অতলে ক্রমশ ফিঁকে হচ্ছে ঠিক তেমনি পৃথিবী নামক মঞ্চ থেকে চিরকালের জন্যে আড়ালে চলে গেলেন অ্যান্ড্রু সায়মন্ডস। এই তো সেদিন তিনি চলে গেলেন পরলোকে। কতশত স্মৃতির মায়া বাড়িয়ে তিনি অসীম নিন্দ্রায় নিমগ্ন হয়ে গেলেন। এমন এক স্মৃতি হরভজন সিং ও অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মনমালিন্যের সমাপ্তি।

‘মাংকিগেট’ কান্ডের পর তাঁদের সম্পর্কের তিক্ততা যেন ছড়িয়ে গিয়েছিল পুরো ক্রিকেট বিশ্বে। সে তিক্ততার অবসান ঘটে ২০১১ সালে। প্রায় তিন বছর বাদে এই দুই খেলোয়াড় নিজেদের মধ্যে থাকা ভুল বোঝাবুঝির বেড়াজাল মিটিয়ে বুক মিলিয়েছিলেন।

এই যে একটা সম্পর্কের নতুন জোড়া লাগানোর জন্যে অবশ্য খানিক কৃতীত্ব ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগও প্রাপ্য। কেননা এই আইপিএলই সুযোগ করে দিয়েছিলেন এই দুই খেলোয়াড়কে নিজেদের মধ্যে থাকা ঝামেলা মিটিয়ে নেবার। প্রায় তিন আসর ডেকান চার্জার্সের হয়ে আইপিএল মাতিয়েছিলেন সাইমন্ডস। এরপর সেখান থেকে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে আসেন তিনি।

সেখানে তাঁর সতীর্থ হিসেবে ছিলেন হরভজন সিং। একই দলে দুইজনের মধ্যে কোন্দল দলের পারফরমেন্সে প্রভাব ফেলে। তবে তাই বলে যে মুম্বাই কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে তাঁদের ঝামেলার ইতি ঘটেছিল তা নয়। বরং তাঁরা নিজেরাই নিজেদের সে সমস্যার সমাধান করেছিলেন।

মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের সব খেলোয়াড়েরা মোহালিতে ছিলেন। কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল তাঁদের। সেখানেই পুরো মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স দল একটি পার্টিতে নিমন্ত্রণ পান। আর সে পার্টিতেই এই দুইজন কিংবদন্তি তাঁদের মধ্যে থাকা সকল ক্ষোভ ঝেড়ে ফেলে গলা মিলিয়ে নেন একজন আরেকজনের সাথে। শুরুটা অবশ্য হরভজনই করেছিলেন।

তিনি আগ বাড়িয়ে তিন বছর আগের সে ঘটনার জন্যে দু:খ প্রকাশ করে অশ্রুসিক্ত নয়নে ‘সরি’ বলেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে। সাইমন্ডসের চোখের কোণেও ছিল নোনাজলের আভাস। এরপর থেকেই এই দুইজন খেলোয়াড় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে খেলে গেছেন মুম্বাইয়ের হয়ে।

তবে মুম্বাইয়ের সবাই সেবার ভেবেছিল দলের সাথে অ্যান্ড্রু সাইমন্ডকে মানিয়ে নিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হবে। তবে তা আর হয়নি। সায়মন্ডস ঠিকই সবার সাথে মিলেমিশে থেকেছিলেন খেলেছিলেন নীল জার্সিটি পড়ে।

ক্রিকেটটা তো আখেরে ভদ্রলোকেরই খেলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link