বাংলাদেশের বোলিং এখন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে সেরা। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়গুলোতে পেস আক্রমণভাগ বিশ্বসেরা হয়ে উঠেছে। আর এর পিছনে যে কয়েকজনের অবদান রয়েছে তাঁদেরই একজন হাসান মাহমুদ; তেইশ বছর বয়সী হাসান বাংলাদেশের অন্যতম নির্ভরযোগ্য পেসার।
তাঁর স্থিরতা, বু্দ্ধিদীপ্ত বোলিং আর নানাবিধ ভ্যারিয়েশন বাংলাদেশের পেস বিভাগকে আরো সমৃদ্ধ করেছে৷ অভিষেকের পর থেকেই তাসকিন, শরিফুলদের সাথে তাল মিলিয়ে তিনি পারফর্ম করে যাচ্ছেন; বিশ্বকাপেও তাই এই ডানহাতির দিকে নজর থাকবে পুরো বাংলাদেশের।
১৮ ম্যাচের সংক্ষিপ্ত ক্যারিয়ারে ২৫ উইকেট শিকার করেছেন হাসান; ইকোনমি ৫.৬৩ আর বোলিং গড় মাত্র ২৯.৮৪। এখন পর্যন্ত এক ইনিংসে পাঁচ আর চার উইকেট পেয়েছেন একবার করে; এছাড়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তাঁদের মাটিতে শেষ ওভারে দশ রান ডিফেন্ড করে জয় এনে দেয়ার কীর্তিও আছে তাঁর ঝুলিতে।
তাসকিন আহমেদ কিংবা মুস্তাফিজুর রহমানের মত ক্যারিয়ারের শুরুতেই আহামরি কিছু করেননি এই পেসার। তবে ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে যাচ্ছেন প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই। অবশ্য ছোট এই ক্যারিয়ারেই বারবার ইনজুরির সঙ্গে লড়াই করতে হয়েছে তাঁকে। যদিও প্রতিবারই জয়ী হয়ে ফিরেছেন তিনি, ফিরেছেন আরো শক্তিশালী হয়ে।
নতুন, পুরনো দুই ধরনের বলেই হাসান মাহমুদ দারুণ কার্যকর। পাওয়ার প্লেতে ইনসুইং, আউটসুইংয়ে ব্যাটসম্যানের পরীক্ষা নিতে পারেন তিনি; আবার পুরনো বলে গতির পাশাপাশি বাউন্সারে প্রতিপক্ষকে পরাস্ত করেন। অবশ্য এই পেসারের সিগনেচার ডেলিভারি ইয়র্কার; হুটহাট ইয়র্কারে উইকেট তুলে নিতে সিদ্ধহস্ত তিনি।
এছাড়া ডেথ ওভার স্পেশালিষ্ট হিসেবেও খ্যাতি আছে হাসানের। ম্যাচের বাকি সময় যেমন পারফর্মই করুক না কেন, শেষদিকে এসে চোখ বন্ধ করেউ ভরসা করা যায় তাঁকে। তাই তো বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে প্রতিপক্ষের রানের লাগাম টেনে ধরতে সাকিবের মূল অস্ত্র হতে পারেন তিনি।
আগে কখনো ওয়ানডে বিশ্বকাপ না খেললেও বিশ্ব মঞ্চে খেলার অভিজ্ঞতার আছে তরুণ এই ক্রিকেটারের। ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছিলেন, সেই টুর্নামেন্টে চার ম্যাচ খেলে ১৬ গড়ে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। ভারত বিশ্বকাপেও এমন ফর্ম ধরে রাখতে নিশ্চয়ই বদ্ধপরিকর তিনি।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারাটা বোধহয় হাসান মাহমুদের সবচেয়ে বড় গুণ। ভাল করলে অতিরিক্ত খুশিও হন না তিনি, অন্যদিকে খারাপ করলেও ভেঙে পড়েন না। আবার স্নায়ুচাপের সময়ও স্বাভাবিক ছন্দেই বোলিং করতে পারেন লক্ষ্মীপুরের এই তারকা। সেজন্য হয়তো টিম ম্যানেজম্যান্টের বিশেষ পরিকল্পনা সাজাবে তাঁকে ঘিরে।
ইবাদত হোসেন না থাকায় একাদশে হাসানের জায়গা পাওয়া প্রায় নিশ্চিত। প্রতিপক্ষ বিবেচনায় ম্যাচের যেকোনো পরিস্থিতিতে বোলিংয়ে আসতে হতে পারে তাঁকে; আর অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান তখন নিশ্চয়ই চেষ্টার কমতি রাখবেন না এই ডানহাতি, সেরাটা নিংড়ে দিতে চাইবেন লাল-সবুজের হয়ে। দেশের কোটি ভক্ত-সমর্থকেরাও তেমনটা দেখতে চায় তাঁর কাছ থেকে।