ঝড়ো হাওয়া লেগে তাঁর শিখা নিভে যাবে

গম্ভীর আমার কাছে বহুদিন তুলে রাখা ধুঁলোমাখা অ্যালবামে সাজানো ছেলেবেলা। সৌরভ গাঙ্গুলি নেই, শচীন টেন্ডুলকার রান পাচ্ছেন না, রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে আর গ্রেগ চ্যাপেল সংসারে ড্রেসিংরুম থমথমে। তখন তাঁর উত্থান। সেই ২০০৭ সালের ইংল্যান্ড সিরিজ। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ছোট ফরম্যাটের প্রথম বড় আসর।

আজ, নিরালা অবসরে গৌতম গম্ভীরের কিছু খেলা দেখছিলাম। কোনও এক অজানা ভালোলাগা থেকে। ব্যাপারটা নিছক কোনও অবসর যাপন নয় আদৌ। যারা গৌতিকে ব্যাট হাতে ক্রিজে দেখে এসেছে, তারা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করবে কেন বারবার গম্ভীরকে দেখতে ইচ্ছে হয়। ক্রিজ থেকে একটু এগিয়ে এসে মিড উইকেট দিয়ে যে বাউন্ডারিগুলো অনায়াসে মারতো, সত্যি … দিনগত পাপক্ষয়।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে বিশ্বকাপের আগে ক্যাপ্টেন হয়ে দুরমুশ করে ঘরে ফিরল। ইনফ্যাক্ট, খুব করে চাইতাম ধোনির পর যেন গৌতি ক্যাপ্টেন হয়। ওর মধ্যে একটা ক্যাপ্টেন্সি ম্যাটেরিয়াল ছিল এবং সেটা খুব সহজাত। গৌতি টিমকে চালনা করতেও মনে হয় ভালই পারতো।

ভারতীয় ক্রিকেটের কালো অধ্যায় নিয়ে কথা বলতে আর ভাল লাগে না, ধোনি-গম্ভীরের ক্যাচালও বহু পুরনো। সাইলেন্ট ৯৭ আর ধ্বংসাত্মক ৯১ নিয়ে বহু কথা হয়েছে, হবেও, কিন্তু সব ছাপিয়ে যেটা থেকে যায় তার নাম স্মৃতি। স্মৃতি অন্য জিনিস। ওটার কোনও রিপ্লেসমেন্ট নেই।

যেমন খুব ভাল মনে পড়ে ২০১০ নিউজিল্যান্ড সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট। টেস্টটা ড্র করতে পিচকে প্রায় ঘরবাড়ি বানিয়ে ফেলা গম্ভীর সেদিন যেন বোধিবৃক্ষের তলায় বসে সাধনা করা বুদ্ধ। দ্য লেভেল অফ টেস্ট ক্রিকেট। স্থৈর্য্য, দরবারি রাগের রাজা আমির খাঁ।

গম্ভীর চিরকাল নিভৃতে। সময় পিছু টেনে নিয়ে চলে গেছে সেই সোনালি অধ্যায়। কাদা মাখা জামা। হামলে পড়া পিচে রান নেওয়ার অদম্য প্রয়াস। সবচেয়ে দেখার মতো ছিল প্রায় বাউন্সার হয়ে আসা বলকে গ্যাপে ঠেলে রান নেওয়ার ভঙ্গিটা।‌ অসাধারণ রান বিটুইন দ্য উইকেট ছিল গোতির।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) তো বাদই দিলাম, দু’বার ক্যাপ্টেন হিসেব জিতেছে। কিন্তু আজ আর ওসব নয়। গ্যাদ্গ্যাদে স্ট্যাট আর কাপের জয়-পরাজয়ের নিরস হিস্ট্রি বাদ থাকুক। সবসময় কচকচি ভাল লাগে না। সে সময় বিগত। আড়ালে যেটা পড়ে আছে সেটাকেই সামনের ড্যাশবোর্ডে তুলে ধরা হোক। ভালোবাসা বলে লোকে যাকে ডাকে নাম ধরে।

গম্ভীর আমার কাছে বহুদিন তুলে রাখা ধুলোমাখা অ্যালবামে সাজানো ছেলেবেলা। সৌরভ গাঙ্গুলি নেই, শচীন টেন্ডুলকার রান পাচ্ছেন না, রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে আর গ্রেগ চ্যাপেল সংসারে ড্রেসিংরুম থমথমে। তখন তাঁর উত্থান। সেই ২০০৭ সালের ইংল্যান্ড সিরিজ। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ছোট ফরম্যাটের প্রথম বড় আসর।

পরপর ছবি সাজানো। অমন সাহস সঞ্চয় করে ফাস্ট বোলারের বিরুদ্ধে এগিয়ে এসে স্টেপ আউট। আর ক্লাসমেটের খাতায় খবরের কাগজ থেকে আলাদা করে কেটে রাখা তার ছবি। গৌতম গম্ভীর, সে পাতা হলুদ, বিবর্ণ। হঠাৎ একদিন তাকে মনে পড়া।

আজ অনেকদিন পর গম্ভীরের খেলা দেখছিলাম নিরালা অবসরে। কী কুক্ষণে যে সুমন লিখেছিলেন – ‘দেখো হঠাৎ ফেরারি কোনো স্মৃতিই কাঁদাবে, যত দূরে যাবে বন্ধু …’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...