ঐতিহাসিক গ্যাবায় অস্তিত্বের লড়াই

সিডনিতে বাংলাদেশের গল্পটা ছিল দুঃস্বপ্নে ভরা। রানের দিক দিয়ে নিজেদের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যবধানের পরাজয়টার সাক্ষী তাঁরা হলো বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে। এই মুহূর্তে আত্মবিশ্বাস তাই তলানিতেই থাকার কথা। তবে ব্যর্থতা নিশ্চয়ই ঝেড়ে ফেলতে চাইবে টাইগাররা। সেই পথযাত্রায় দু’দিন বাদেই ব্রিসবেনে নিজেদের পরবর্তী ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে সাকিবরা। 

পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ জিতে আত্মবিশ্বাসে একদম টইটম্বুর জিম্বাবুয়ে। সিকান্দার রাজা, রায়ান বার্লদের হাত ধরে নতুন করে পুনর্জাগরণেরই পথ দেখছে দেশটির ক্রিকেট। একদিকে মানসিকভাবে চাঙ্গা একটি দল আর অন্যদিক দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হেরে বিধ্বস্ত একটি দল। এর সাথে এই মাস খানেক আগেই জিম্বাবুয়ের সফরে গিয়ে জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি, দুই সিরিজই হারার গ্লানি তো আছেই। তাই অঙ্কটা এখন বাংলাদেশের অনুকূলে নেই, তা বলাই যায়। 

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পর বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের মানসিক অবস্থা যে খুব শোচনীয় সেটিও বলা যায় না। অন্তত ম্যাচ পরবর্তী প্রেস কনফারেন্সে সাকিবের কথার সুরে সেটি আঁচ করাই যায়।  টি-টোয়েন্টিতে এমন দিন আসতেই পারে বলে নিজেদের আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবার পথ খুঁজেছেন। এমনকি প্রেস কনফারেন্সে নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে নিজেদের মাটিতে অজিদের ধরাশয়ী হওয়ার উদাহরণও টেনেছেন সাকিব।

তাছাড়া ব্রিসবেনের উদ্দেশ্যে ফ্লাইটের আগে বিসিবির অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুসের সাথে সাকিব, নাসুমদের খুনসুটি, অন্য ক্রিকেটারদের হাস্যজ্বল চেহারা- সব কিছু মিলিয়ে টিম টাইগারদেরকে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এমন ম্যাচ হারার পরও খুব একটা হতাশাগ্রস্ত মনে হয়নি। অবশ্য বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে একটা দলের এমন বডি ল্যাঙ্গুয়েজই দরকার। বরং হতাশায় জেঁকে বসলেই সমস্যা। 

আগামী৩০ অক্টোবরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটা হবে ব্রিসবেন। যেটাকে ‘গ্যাবা’ বলেই অনেকে চেনে। গ্যাবার এই মাঠ বাউন্ডারি এরিয়ার দিক দিয়ে বেশ বড়ো। এজন্য মেলবোর্নের পর সবচেয়ে কম বাউন্ডারির হার এই মাঠে। পরিসংখ্যান বলছে, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোট রানের ৫২.১ শতাংশ বাউন্ডারি থেকে আসে এই মাঠ থেকে। তাছাড়া, গ্যাবার এই মাঠ পেসারদের জন্যও বেশ কঠিন। এই মাঠে পেসারদের ইকোনমি রেট ৮.৬৫। অথচ গ্যাবায় রিস্ট স্পিনারদের ইকোনমি ৭.১১। আর লেগ স্পিনারদের জন্য সেটা ৬.৬৮। তাই গ্যাবায় সুবিধাটা সবচেয়ে বেশি পাবে লেগ স্পিনাররা। 

গ্যাবা মূলত ব্যাটিং পিচ। ব্যাটিং স্বর্গের এই উইকেটে তাই ব্যাটারদেরই মূল দায়িত্বটা নিতে হবে। গত দুই ম্যাচেই বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল যাচ্ছেতাই। টপ অর্ডার থেকে শুরু করে মিডল অর্ডার, কোনো খানেই ধারাবাহিকতার ছিটেফোটা ছিল না। অথচ গ্যাবার এই উইকেটে ব্যাটারদেরই জ্বলে উঠতে হবে। তাই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টাইগারদের জন্য মোটেই সহজ হবে না। 

ব্রিসবেনে প্রথমে ব্যাট করা দলের জয়ের হার ৫৫%। আর চেজ করে ম্যাচ জয়ের হারটা ৪৫ শতাংশ। তাই টস খুব একটা গুরুত্ব রাখবে না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রত্যেকটি ভেন্যুই এই মুহূর্তে বেশ বৃষ্টিপ্রবণ। সেটির কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশের টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্তটাই যৌক্তিক হবে। 

যেহেতু গ্যাবার এই উইকেটে পেসাররা একটু খরুচে তাই পরবর্তী ম্যাচেও এবাদত কিংবা শরিফুলকে দেখার সম্ভাবনা কম। তবে মিরাজের পরিবর্তে নাসুমকে একাদশে দেখা যেতেই পারে। তবে গ্যাবার উইকেটে পেসাররা একটু খরুচে হলেও তারা বাউন্সটাও পায় বেশি। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাসকিন বাউন্স দিয়েই সফলতা পেয়েছিলেন।

তাই জিম্বাবুয়েকে আটকাতে হলে পেসারদের ঠিকঠাক বাউন্সারও দিতে জানতে হবে। অবশ্য জিম্বাবুয়ের বোলিং লাইনআপও কিন্তু একটুও পিছিয়ে নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে তারা ১৩১ রান ডিফেন্ড করেছিল বোলিং শৈলী দিয়েই। তাই গ্যাবার উইকেটে বোলারদের লড়াইও হবে সমানে সমান।

দুই দলের জন্যই ব্রিসবেনে আগামী ম্যাচটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেমির রেসে টিকে থাকতে হলে বাংলাদেশকে এ ম্যাচ জিততেই হবে। একই সাথে রানরেটের ব্যাপারটিও তাদের মাথায় রাখতে হবে। কারণ প্রোটিয়াদের বিপক্ষে হেরে এরই মধ্যে রানরেটে বেশ পিছিয়ে গেছে টাইগাররা। অন্যদিকে, জিম্বাবুয়েও আপ্রাণ ভাবে চাইবে এ ম্যাচ জিততে।

কারণ এখনো কোনো ম্যাচ না হারা জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশকে হারাতে পারলে সেমির পথে তারাও এগিয়ে যাবে। সিকান্দার রাজারাও নিশ্চয় এ সুযোগটি হেলায় হারাতে চাইবেন না। আর বাংলাদেশের জন্য এই সিকান্দার রাজাই হতে পারেন আরেকটি সমস্যার নাম। জিম্বাবুয়ের এখন  পর্যন্ত জেতা তিন ম্যাচেই ম্যাচসেরা হয়েছে সিকান্দার রাজা। ব্যাটিং, বোলিং- দুই রোলেই দারুণ পারফর্ম করছেন তিনি। পাকিস্তানের বিপক্ষে আগের ম্যাচে প্রায় হাত ফসকে যাওয়া ম্যাচটা বলতে গেলে তিনিই বোলিং দিয়ে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তাই সিকান্দার রাজা বাংলাদেশি বোলারদের জন্য যতটা চ্যালেঞ্জের নাম, ঠিক ততটাই ব্যাটারদের জন্যও। 

প্রেস কনফারেন্সে সাকিব বলেছেন, এখনো তাদের সামনে সম্ভাবনা আছে। ভাল কিছু করার প্রত্যয়ও আছে। সাকিবের এমন সুর আমাদের আশা জোগায়। তবে দিনশেষে মাঠের ক্রিকেটেই সাকিবদের প্রমাণ করতে হবে। নয়তো, প্রত্যহই এমন আশার বাণী, দিন বদলের বুলি বড্ড বিরক্তিকর লাগবে। এটা বাংলাদেশের সমর্থকরা যেমন চান না, ঠিক ক্রিকেটাররাও সেই সমালোচনার স্রোতে ডুবতে চান না। 

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link