স্রোত আর সময় চিরবহমান। ফলস্বরূপ সভ্যতাও বহমান। সময়ের টানে গাছের পাতারা ফিকে হয়ে যায়। অজস্র টাকার মোড়কে রচিত লোকমুখে অহোরাত্র চর্চিত দেওয়ালে নোনা ধরে। তরুণ যুবক বৃদ্ধ হয়ে ওঠে, অপরপক্ষে সবার কাছে তাড়া খাওয়া শুঁয়োপোকাও বর্ণময় প্রজাপতি হয়ে ওঠে। জীবন নামক খেলার এমনই মাহাত্ম্য।
এরই মাঝে লুকিয়ে থাকে কিছুজনের গিটার হয়ে ওঠার দুস্তোষ্য উপাখ্যান। সেই গিটারের গায়ে খেলা করে গিটারের তারসমূহ। নিরীহ তারের উপর আঙুলের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলস্বরূপ বিভিন্ন ধ্বনির, সুরের উত্থিতি ঘটে সমগ্র পরিবেশে। সুরের আঁচ পায় সুবিস্তৃত গ্যালারি। সবুজ গালিচা এবং তার উপরের শিশিরকণা। সুর ছড়িয়ে পড়ে সমগ্র ধরিত্রীতে।
ঠিক এ’রকমই কোনো গিটারের মতো থেকে গিয়েছেন আর্জেন্টিনার সোনালী দাঁড়ি প্রাপ্ত এক ভদ্রলোক। ঈশ্বরপ্রদত্ত ক্ষমতার বলে পেরিয়ে গিয়েছেন বুঁফো, ক্যাসিয়াস, ডি-জিয়া প্রমুখকে। সোনায় মোড়া বাঁ পা থেকে আঘাতপ্রাপ্ত বলের গতিতে বার্সেলোনা ভেসে গিয়েছিলো ট্রফির বন্যাতে। ফুটবল রোম্যান্টিসিজমের সমস্ত প্রকার সুর ছড়িয়ে দিয়েছিলেন আট থেকে আশির মধ্যে।
খুশিতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ে এই চরাচরে। কথিত আছে, এগারো বছর বয়সী মেসির কুশলতা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন বার্সেলোনার তৎকালীন ক্রীড়া পরিচালক কার্লেস রেক্সাচ। হাতের কাছে কাগজ না পেয়ে মেসির বাবার সঙ্গে চুক্তি করেন ন্যাপকিন পেপারে। এরপরে বাকিটুকু ইতিহাসের খাতায় উল্লিখিত।
এক একটা বছর অতিক্রান্ত হয় আর পকেট ভরে যায় এক একটা ব্যালন ডি অর-এ! কখনও এক মৌসুমে ৯১ গোলের রেকর্ড। অজস্র সব অবিস্মরণীয় মুহূর্ত। কখনও হয়ে উঠেছেন ইউনিসেফের শুভেচ্ছা দূত। কিংবা নিজের নামে চালু করেছেন চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, রোগাক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার সুব্যবস্থা করার স্বার্থে। একজন রোল মডেলই বটে।
গিটারের সেই সুর দ্বিমুখী। কখনও সে প্রেমিক হয়ে ওঠে। রোমান্টিক সুর ঝরে পড়ে সমগ্র গা হতে। সেই সুরের ঝর্ণাতে তলিয়ে যায় কোটি কোটি মানুষ। এক লহমায় সেই সুরের সৌন্দর্যকে আগলে নেয় জীবকূল, এমনই তাঁর মহিমা। গিটার যে কেবল রোমান্টিক সুরেই পথ পেরোবে তা নয়, এর সঙ্গে তোলে বিষাদের ঝঙ্কার।
সবাই তা বুঝতে পারে না, তাই হয়তো সেই বিষাদের বাণী সবার পছন্দ হয় না। কিন্তু আলো-আঁধারির মতোই বিপরীতধর্মী সুরে গড়ে ওঠে এই গিটারও। কিছুটা পথ এভাবেও পেরোতে হয় তাকে। সেই গীটারের কাঁদো-কাঁদো রব। তাঁর দেহের তারে আছড়ে পড়তো আঙুলের অতিরিক্ত ঢেউ। ছিঁড়ে যেত তারসমূহ। ছোটো চেহারার ভদ্রলোক আজ কাঁদছেন।
পরপর দু’বছর কোপা আমেরিকা কাপ ফাইনালের হারের যন্ত্রণা। একবার বিশ্বকাপ ফাইনালে হারের যন্ত্রণা দিনান্তে বিষাদের রেখা এঁকে দিয়ে গিয়েছে। বাড়িয়ে তুলেছে চিত্তক্ষোভের প্রদীপ! সেই প্রদীপের স্বয়ং সলতে হয়ে জ্বলেছেন তিনি। তবুও সেই গিটারকে নিয়ে আজও স্বপ্ন বুনতে থাকে দর্শকমহল। খুব শীঘ্রই নূতন ভাবে ফুটবলীয় রোমান্টিকতার সুর আছড়ে পড়বে স্প্যানিশ উপকূলে।
দৈহিক উচ্চতা কম ছিল। রিভারপ্লেটের সামর্থ্য ছিল না গ্রোথ হরমোনের অভাবে ভুক্তভোগী সেই বালকের জন্য চিকিৎসার খরচ বহন করা। অথচ সেই বালক কোনো এক জাদুবলে, ঐশ্বরিক ক্ষমতায় কিংবা বাঁ পায়ের ম্যাজিকে নিজেকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন এক অনন্য মাত্রায়, অনন্য উচ্চতায়।