কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের আধিপত্যের নেপথ্যে

‘যাচ্ছেতাই’ – বিপিএলের পাশে এই বিশেষণ যে কেউ অনায়াসেই যুক্ত করতে পারেন। তবে যাচ্ছেতাই লিগের দলগুলোকেও এই বিশেষণের মধ্যে ফেলা খুব দোষ হবে কি?

সম্ভবত না। নয় আসরে এমন কয়টা ফ্রাঞ্চাইজির ধারাবাহিকতা আছে বলতে পারেন? ঢাকা কখনো গ্ল্যাডিয়েটর্স হয়, কখনো ডাইনামাইটস হয়, আবার কখনও বা ডোমিনেটর্স হয়। দুরন্ত রাজশাহী, রাজশাহী কিংসরা তো নিশ্চিহ্নই হয়ে গেছে বলতে গেলে। বরিশাল বুলসও ফরচুন বরিশাল হয়ে ওঠে। এদের মধ্যে একটি দল ব্যতিক্রম। দলটার নাম কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

‘উইন অর উইন’ স্লোগান নিয়ে যে দলটা ২০১৫ সাল থেকে একই গতিতে এগিয়েছে। এগিয়েছে তাদের জয়যাত্রা। আগের মতো এবারের বিপিএল শিরোপাও তাই কুমিল্লার ঘরে। এ নিয়ে ৪ বার শিরোপা জিতল ভিক্টোরিয়ান্সরা।

কুমিল্লার এ ফ্রাঞ্চাইজি এবারের আসর দিয়ে ষষ্ঠ বারের মতো বিপিএলে অংশগ্রহণ করছে। এর মধ্যে ৪ বারই চ্যাম্পিয়ন। আর অন্য যে দুইবার তারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি তার মধ্যে একবার আবার পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে প্লে-অফে উঠেছিল তারা। মোদ্দাকথা, এক আসর বাদ দিয়ে, প্রতিটা আসরেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলটা ভিক্টোরিয়ানদের মতোই ছিল।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স দলটার মধ্যে কী এমন বিশেষত্ব? যার কারণে বারবার সাফল্য ধরা দিচ্ছে তাদের। প্রথম ব্যাপারটা হচ্ছে, ক্রিকেট নিয়ে তাদের দুরদর্শিতা, ভাবনা, দারুণ চিন্তাবোধ। দল গঠন থেকে শুরু করে কোচিং প্যানেল সব ক্ষেত্রে দলটার পেশাদারিত্ব, ধারাবাহিকতয় আপনি মুগ্ধ হতে বাধ্য।

তারুণ্যের পাশাপাশি অভিজ্ঞদের সংমিশ্রণে বরাবরই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য দল গড়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এ কথা সবার জানা। তবে তাদের বিশেষত্বটা হচ্ছে, সময়ের সেরা তারকাকে দলে ভেড়ানো চেষ্টা করে। যেমন টানা দুই বারের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যাত্রায় তারা দুই বারই লিটন দাশ ও মুস্তাফিজুর রহমানকে দলে টেনেছে। একই সাথে দলটা পুরনো সদস্যদেরও রেখে দিয়েছে। যেমন এই দলটার সেই আদিলগ্ন থেকেই খেলেন ইমরুল কায়েস।

খুব বাজে একটা বিপিএল কাটালেও কুমিল্লা তাঁর অধিনায়কত্বে এই নিয়ে তিনবার শিরোপা জিতলো। আর কুমিল্লা চার শিরোপার প্রত্যেকটিতেই তিনি দলে ছিলেন। কুমিল্লার শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে আরেকটি কারণ হলো, দারুণ আনক্যাপড খেলোয়াড় সংযোজন।

যেমন প্রথম বিপিএলে আবু হায়দার রনি তাদের দলের শিরোপা জয়ের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় গত দুই আসরেও দারুণ পারফর্ম করে নজর কেড়েছেন তরুণ স্পিনার তানভীর ইসলাম। এবারের বিপিএলে তো সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী হয়েছেন এ বাঁহাতি স্পিনার।

দেশি ক্রিকেটার, প্রতিভাবান ক্রিকেটার সংযোজন গেল। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস কিন্তু বিদেশি ক্রিকেটার ভেড়ানোর ব্যাপারেও বেশ চমক দেয়। এই দলে খেলেছেন রশিদ খান, স্টিভ স্মিথ, ডু প্লেসির মতো তারকারা।

এবারেও সেই ধারাবাহিকতা রেখেছিল দলটা। দলে ছিল মোহাম্মদ রিজওয়ান, খুশদিল শাহ্‌, নাসিম শাহ্‌র মতো তারকারা। তবে কুমিল্লার পরিকল্পনা কতটা সুদৃড় ছিল তা বুঝা যায় টুর্নামেন্টের শেষ পথে। পিএসএল খেলার জন্য পাকিস্তানিরা ফিরে যাবেন- আগে থেকেই এ বিষয়ে তারা অবগত ছিল। সেই ভাবনায় কুমিল্লার ফ্রাঞ্চাইজি বিকল্প আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিল। সেই হিসেবে পরে দলে যুক্ত হয়েছে খুশদিল শাহ্‌, মোহাম্মদ রিজওয়ানের জায়গায় মইন আলী, আন্দ্রে রাসেল, সুনীল নারাইনরা।

দারুণ পরিকল্পনা, টিম ম্যানেজমেন্টের দক্ষতা, বছরের পর বছর প্রায় একই দলে খেলার সুবাদে কুমিল্লাও তাই বারবার সফলতার পথে হেটেছে। তবে এবারের শুরুটা কিন্তু হয়েছিল বেশ বিবর্ণ। টানা তিন হারে শুরু। কিন্তু এরপরেই রাজকীয় ভাবে ঘুরে দাঁড়ানো। টানা ১১ জয়। এর এমন অপ্রতিরোধ্য দলের সাথেই তো বিপিএল ট্রফিটা মানায়। হয়েছেও তাই। কুমিল্লার জার্সিতে বসেছে চার তারকা। তিন তারকাখচিত জার্সিটায় সামনের বারে বসছে আরেকটা তারকা।

টানা দুই বিপিএল শিরোপা। সব মিলিয়ে চারবার। কুমিল্লার দৌড় নিশ্চয় এখানেই থেমে থামছে। গত ৮ বছর যারা বিপিএলে নিজেদের রাজত্ব তৈরির পথে এগিয়েছে তাদের জয়যাত্রা তো এখানেই শেষ হওয়ার নয়। অপ্রতিরোধ্য, আধিপত্যে বিপিএল কাটানোর লক্ষ্যে বোধহয় এখন থেকে ছক কষা শুরু করে দিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কারণটা যে দলটার নামের পাশে আছে  ভিক্টোরিয়ানস নামক শব্দটা, তাদের তো জয়ের দিকেই চোখ থাকবে। সেটাই যেন স্বাভাবিক, সেটাই যেন অনুমেয়।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link