রঙিন রয় রহস্য

গত কয়েক ম্যাচ ধরেই ব্যাট হাতে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না জেসন রয়ের। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও রান পাননি, সব মিলিয়ে তাই বেশ চাপে ছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজের স্বরূপে ফিরলেন এই ইংরেজ তারকা। সুইপ এবং রিভার্স সুইপে ব্যতিব্যস্ত রেখেছেন বাংলাদেশের ফিল্ডারদের, স্পিনাররা বিন্দুমাত্র বাঁধা সৃষ্টি করতে পারেননি তাঁর ব্যাটিংয়ে। তাঁর ১৩২ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে ভর করে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজ জিতে নিয়েছে সফরকারীরা। 

গত সাত বছরে ঘরের মাঠে সিরিজ হারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু আরো একবার বাংলাদেশের মাটি থেকে ত্রফি নিয়েই ফিরছে জস বাটলারের দল। তাঁদের দেয়া ৩২৭ রানের পাহাড়সম লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৯৪ রানেই গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা। মূলত রয়ের অনবদ্য ইনিংসটাই ব্যবধান গড়ে দিয়েছে দুই দলের মাঝে। 

বাঁ-হাতি স্পিনারদের বিপক্ষে ভীষণ সাবলীল ছিলেন এই ইংরেজ ওপেনার। চিরায়ত সুইপ শটে রান তো বের করেছেনই, পাশাপাশি রিভার্স সুইপে বল সীমানাছাড়া করেছেন চারবার। 

তিনি বলেন, ‘যেহেতু বল টার্ন করবে জানতাম, সেই কারণে সুইপ শট বেশি খেলার পরিকল্পনা ছিল। পয়েন্টের উপর দিয়ে খেলাই সবচেয়ে নিরাপদ ছিল আমার জন্য। আমি অবশ্য কয়েকবার কাভারের উপর দিয়ে খেলার চেষ্টা করেছি, কিন্তু বল অনেক আস্তে আসছিল এবং টার্ন করছিল। একবার সাকিব আন্ডারকাটার করছিল, আমি সোজাসুজি খেলার বদলে সুইপের চেষ্টা করছিলাম। এটা ছিল খুবই বাজে সিদ্ধান্ত। এছাড়া অবশ্য সব ঠিকই ছিল। আপনি যখন রান পাবেন, তখন সবদিকেই খেলতে পারবেন। তবে আজকের জন্য সুইপ আর রিভার্স সুইপই ছিল আমার রান করার একমাত্র অবলম্বন।’

রয় জানান এদিনের পিচ ব্যাটসম্যানদের জন্য ভীষণ সহায়ক ছিল। বল খানিকটা ঘুরলেও আগের মতো উঁচু নিচু বাউন্স ছিল না, বরং একই উচ্চতায় ব্যাটে এসেছে। ফলে ব্যাটাররা বেশ সহজেই স্ট্রোক খেলতে পেরেছেন।

তিনি বলেন, ‘আমি আগের দিন মাত্র চার বল খেলতে পেরেছি, সুতরাং আজকে ব্যাট করা বেশ সহজ ছিল। স্পিন বেশি ছিল, কিন্তু বল ব্যাটে এসেছে। আগের দিন স্পিনের সাথে উল্টাপাল্টা বাউন্স হচ্ছিল। আমার ধারণা আজকের পিচে রান করে খেলোয়াড়রা নিজেদের দক্ষতার জানান দিয়েছে।’ 

তিনি আরো জানান, বাংলাদেশের বিপক্ষে রান পেয়ে তিনি যেন চাপের মুখ থেকে রেহাই পেলেন। বলেন, ‘আমি প্রথম ম্যাচের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছি। আমি খুবই ছোটখাটো ভুল করছিলাম এবং রান করতে মরিয়া ছিলাম। আপনি যখন চল্লিশ রান পেরোবেন, আপনার আত্নবিশ্বাস বাড়বে। প্রতিটা বাউন্ডারি আপনার আত্নবিশ্বাসকে বাড়িয়ে তুলবে। আজকে বাটলারের সাথে দারুণ একটা জুটি হয়েছে। সে দারুণ ব্যাট করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘প্রতিটি জায়গাতে ভালো খেললে আলাদা আলাদা স্কিলের দরকার পড়ে। আমি ভারতে রান পেয়েছি। এই ধরনের কন্ডিশনে রান তোলা মোটেই সহজ কিছু না। আমি রান করতে পেরে ভীষণ খুশি। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে বোলারদের জন্য এত বড় রানের লক্ষ্য এনে দিতে পেরে আমি খুশি।’

এছাড়া প্রথম ওয়ানডেতে দাভিদ মালানের দুর্দান্ত সেঞ্চুরির ইনিংস থেকেও শিক্ষা নিয়েছেন এই ওপেনার। মালানের চতুর্থ ওডিয়াই সেঞ্চুরিতে ভর করেই সেদিন ম্যাচ জিতে নিয়েছিল সফরকারীরা।

রয় বলেন, ‘মালান যেভাবে তাঁর ইনিংসটা এগিয়ে নিয়েছে সেটা সত্যিই দারুণ। আমি বুঝতে পারছিলাম কিভাবে এই পিচে ব্যাট করতে হবে। আমি জানতাম শুরুতে ক্রিজে কিছুটা সময় কাটাতে পারলে ব্যাটিংটা সহজ হয়ে যাবে। তাই শুরুতে কিছুটা খোলস বন্দীই ছিলাম। যে বলটাতে বাউন্ডারির জন্য সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়েছি, সেটাতেই আউট হয়েছি।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link