সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে। অধীর আগ্রহে ভারতের সবাই যেন বসে ছিলেন অপেক্ষায়। ঠিক কাকে কাকে নেওয়া হবে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে সে নিয়ে নানানরকম গুঞ্জন ছিল। সবকিছুকে পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের জন্যে ১৫ সদস্যের নাম ঘোষণা করে ফেলেছে টিম ইন্ডিয়া।
সবচেয়ে বড় সংশয় ছিল হার্দিক পান্ডিয়াকে নিয়ে। কেননা ফর্মটা ঠিক ভাল যাচ্ছিল না হার্দিকের। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) তিনি ধুকছিলেন ক্রমাগত। অন্যদিকে তার সাথে পাল্লা দেওয়া খেলোয়াড়রা ছিলেন বেজায় দারুণ ফর্মে। ঠিক সে কারণেই হার্দিকের ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল।
তবে শেষ অবধি তেমন কিছু ঘটেনি। হার্দিক পান্ডিয়া যাচ্ছেন ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে। অন্যদিকে তার মূল প্রতিদ্বন্দী ছিলেন শিভাম দুবে। আইপিএলের চলমান আসরে তিনি রীতিমত রানমেশিন। বড় বড় শটের পসরা সাজিয়ে বিধ্বংসী সব ইনিংস উপহার দিয়ে যাচ্ছেন তিনি নিয়ম করে। তাকে বাদ দেওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।
অসম্ভবকে সম্ভব করতে চায়নি ভারতীয় নির্বাচকরা। শিভাম দুবের দুর্দান্ত ফর্মের পূর্ণ ফায়দা নিতে চায় দলটি। ঠিক সে কারণেই তাকে রাখা হয়েছে দলে। অন্যদিকে উইকেটরক্ষক ব্যাটার হিসেবে সাঞ্জু স্যামসনকে দলে ভেড়ানোর জোর দাবি উঠেছিল।
কিন্তু সাঞ্জুর লড়াইটা ছিল ঋষাভ পান্ত ও লোকেশ রাহুলের সাথে। সেই লড়াইয়ে সাঞ্জু এবার জিতেছেন। রাজস্থান রয়্যালস দলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বকাপের পথটা খুলে ফেলেছেন সাঞ্জু স্যামসন। তিনি ছাড়াও দলে জায়গা হয়েছে ঋষাভ পান্তের। তার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে ধোঁয়াশা অবশ্য ছিল না। কিন্তু নিজেকে প্রমাণ করবার একটা চ্যালেঞ্জ ছিল ঋষাভের।
কেননা দীর্ঘদিন ধরে তিনি ছিলেন ইনজুরি আক্রান্ত। এবারের আইপিএল দিয়েই তিনি ফিরেছেন প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে। দীর্ঘ ইনজুরি কাটিয়ে ঠিকঠাক পারফরম করতে পারলেই তার জায়গা ছিল সুনিশ্চিত। খোদ ভারত ক্রিকেট বোর্ডের সচিব জয় শাহ তেমনটি জানিয়েছিলেন।
ঋষাভ তাকে হতাশ করেননি। তিনি মাঠে ফিরেছেন নিজের সেই পুরনো আনঅর্থোডক্স রুপকে সাথে নিয়েই। লম্বা সময় মাঠের বাইরে থাকার কোন ছাপ ছিলনা তার পারফরমেন্সে। ঠিক সে কারণে তাকেও রাখা হয়েছে দলে। এছাড়াও রবীন্দ্র জাদেজা ও অক্ষর প্যাটেলের মধ্যে যেকোন একজন সুযোগ পাবেন বলেই ছিল সকলের ধারণা।
সে ধারণাকেও ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকরা ভুল প্রমাণিত করেছেন। দুইজনকেই রাখা হয়েছে বিশ্বকাপের স্কোয়াডে। তবে খানিকটা বিস্মিত সম্ভবত হয়েছেন অনেকেই। কেননা দলে রিঙ্কু সিংয়ের জায়গা হয়নি। অবশ্য ফিনিশার রোলের জন্যে শিভাম দুবের থেকে এই মুহূর্তে ভাল বিকল্প নেই। হার্দিক পান্ডিয়াও রয়েছেন সেখানটায়।
বিরাট কোহলির স্কোয়াডে জায়গা পাওয়াটা নিশ্চয়ই কোন চমক হতে পারে না। যদিও তাকে স্কোয়াডে রাখা হবে না বলে ছিল জোরালো গুঞ্জন। কিন্তু এমন অভিজ্ঞ একজন ব্যাটারকে দল থেকে বাদ দেওয়া মোটেও সহজ কোন কাজ নয়। কঠিন পথটা পাড়ি দিতে চায়নি টিম ইন্ডিয়া। বিরাটকেও রাখা হয়েছে দলে।
পেস আক্রমণে নেই তেমন কোন চমক। জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ ও আর্শদ্বীপ সিং রয়েছেন। তাছাড়া চায়নাম্যান কুলদ্বীপের সাথে লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহাল রয়েছেন স্কোয়াডে। রিঙ্কু সিংয়ের সাথে স্ট্যান্ডবাই-তে রয়েছেন শুভমান গিল, খলিল আহমেদ ও আবেশ খান। ওপেনিং পজিশনের জন্যে স্কোয়াডে রোহিত শর্মার সঙ্গী যশস্বী জসওয়াল।
ভারতের বিশ্বকাপ স্কোয়াড: রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), যশস্বী জসওয়াল, বিরাট কোহলি, ঋষাভ পান্ত, সুরিয়াকুমার যাদব, সাঞ্জু স্যামসন, হার্দিক পান্ডিয়া (সহ-অধিনায়ক), শিভাম দুবে, রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল, কুলদ্বীপ যাদব, যুজবেন্দ্র চাহাল, আর্শদ্বীপ সিং, জাসপ্রিত বুমরাহ ও মোহাম্মদ সিরাজ।