বিশ্বমানের পেস বোলার উপহার দেয়ায় পাকিস্তানের সুখ্যাতি বেশ পুরনো। ওয়াসিম আকরাম, ওয়াকার ইউনুস, শোয়েব আখতারদের পথ ধরে ক্রিকেট বিশ্বে রাজত্ব করছেন শাহীন শাহ আফ্রিদি, হারিফ রউফ, নাসিম শাহরা। এবার পিএসএলের মাধ্যমে নতুন এক গতি তারকার সন্ধান পেয়েছে পাকিস্তান। তিনি মুলতান সুলতান্সের পেসার ইহসানউল্লাহ।
গত বছরটা বেশ উত্থান পতনের মাঝে দিয়ে কাটিয়েছিলেন তরুণ পেসার ইহসানউল্লাহ। পিএসএলে মুলতানের হয়ে মাত্র একটি ম্যাচেই মাঠে নামতে পারেন। এরপরেই ইনজুরিতে ছিটকে যান গোটা টুর্নামেন্ট থেকে। পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যায় হারিয়েছেন নিজের বাসস্থানও। সব মিলিয়ে ইহসানউল্লাহ নিজেও বুঝতে পারছিলেন চাপটা।
তবে থেমে থাকেননি, নিজের পরিশ্রম আর একাগ্রতা ক্রমেই জানান দিচ্ছিলেন নিজের আগমণের। পিএসএলে প্রথম সুযোগটাই তাই লুফে নিলেন দুহাত ভরে। কোয়েটা গ্ল্যাডিয়েটর্সের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই ১২ রানে পাঁচ উইকেট নিয়ে গুঁড়িয়ে দেন তাঁদের ব্যাটিং লাইনআপ। ইহসানউল্লাহর ১৫০ কিমি ছাড়ানো বলের কোনো জবাব ছিল না তাঁদের কাছে।
পেশোয়ারের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও জয়ের নায়ক তিনি, মাত্র ২৪ রান খরচায় তুলে নেন তিন উইকেট। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন পরের ম্যাচগুলোতেও, প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের রীতিমত নাভিশ্বাস তুলেছেন দারুণ সব বাউন্সারে। ছয় ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে পিএসএলের নতুন তারকা তাই ইহসানউল্লাহ।
অথচ এক বছর আগেও তাঁর পরিচিতি ছিল গড়পড়তা মানের এক পেসার হিসেবে। তাহলে কি করে এই আমূল পরিবর্তন? শুরুটা হয়েছিল ইসলামাবাদে রশিদ লতিফের ট্রায়ালে ডাক পাবার মাধ্যমে। তারও আগে অবশ্য বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে কিছুদিন খেলেছিলেন, কিন্তু নিজের ছাপ রাখতে পারেননি। কিন্তু খাইবার পাখতুনের কোচ আব্দুর রেহমানের অধীনেই ধীরে ধীরে ইহসানউল্লাহর ফিরে আসা।
এখনও পর্যন্ত মাত্র সাতটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে নেমেছেন এই তারকা। তাতেই ২২ উইকেট নিয়ে জানান দিয়েছেন তাঁর প্রতিভার। পিএসএল শুরুর আগে তাঁকে দলে ভেড়াতে রীতিমত কাড়াকাড়ি লেগে গিয়েছিল। মুলতান সুলতান্সের পাশাপাশি করাচি কিংস এবং লাহোর কালান্দার্সও ভেড়াতে চেয়েছিল তাঁকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মুলতান রিটেইন করতে সক্ষম হয় তাঁকে।
সেই সুফলও ভোগ করছে এখন দলটি, মোহাম্মদ রিজওয়ানের দলের বোলিংয়ের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তরুণ এই বোলার। দারুণ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নিয়মিত ১৫০ কিমি গতি তুলতে পারেন তিনি। পিএসএল ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুত স্পেল করার রেকর্ডও এখন তাঁর দখলে।
তাঁর আবির্ভাবেই সাথে সাথেই সাড়া পড়ে গেছে পাকিস্তানের ক্রিকেট পাড়ায়। ভক্তদের পাশাপাশি সাবেক ক্রিকেটাররাও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন এই পেসারকে নিয়ে। অনেকে তো তাঁকে তুলনা করছেন ভারতের গতি তারকা উমরান মালিকের কাছে। ইহসানউল্লাহও যেন সায় দিলেন তাতে, জানিয়েছেন সুযোগ পেলে উমরানকে গতির লড়াইয়ে পেছনে ফেলতে চান।
তিনি বলেন, ‘আমি উমরানের চাইতে জোরে বল করার চেষ্টা করব। সে সম্ভবত ১৫৭ কিমিতে বল করেছিল। আমি ১৬০ কিমি স্পর্শ করতে চাই।’
পিএসএলের মাঝপথেই পাকিস্তান দলে ডাক পেয়ে গেছেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে অভিষেক হবে তাঁর। আর পিএসএল শেষে পেলেন আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
বল হাতে ২২ উইকেট নিয়ে আসরের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী তিনি।বোলিং গড় ১৫.৭৭। ইকোনোমি রেট ৭.৫৯। সেই ইহসানউল্লাহ’র লক্ষ্য এখন বিশ্বকাপ।
বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে জেতানোই ইহসানউল্লাহর বর্তমান লক্ষ্য। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারালেও ওয়ানডে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সাথে এখনো অজেয় ভারত। এখন দেখার বিষয় ইহসানউল্লাহতে ভর করে এবারে এই ধারা ভাঙতে পারে কিনা পাকিস্তান।