প্রেম ধীরে মুছে যায়

কবি জীবনানন্দ দাস লিখে ছিলেন, ‘প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’ - কথাটা হয়তো সত্য, ১২ বছরের ভালোবাসা নইলে এভাবে হঠাৎ হারিয়ে যাবে কেন? যে সময়টায় দুজনের দুজনকে সবচেয়ে বেশি দরকার, সে সময়টায় এমন ভাঙ্গন কেন? জানা নেই, ভালোবাসার প্রশ্নে কখনও সব উত্তর পাওয়া যায় না, পাওয়া সম্ভবও না। ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত।

ইকার ক্যাসিয়াস আমার কাছে রাজকন্যা, রাজত্ব্য জয় করা এক রাজার গল্প। যে রাজা পথ হারিয়েছেন, কূলহারা নাবিকের মতন এদিক ওদিকে দিশাহীনের মতো ঘুরে বেড়িয়েছেন, কিন্তু লক্ষ্যে ছিলেন অটুট।

সারা কারবোনেরোকে মানুষ যখন প্রথম চিনে, তখন বিশ্বের সামনে ইকার ক্যাসিয়াস ‘রামায়নের রাম’। বীরত্বের সঙ্গে থামিয়ে দ্দিয়েছেন শত্রুর গোলা, জিতেছেন বিশ্বকাপ। কিন্তু আমি সারাকে চিনি তারও কিছুদিন আগে থেকে। যখন ইকার বীর নন, বরং ‘অসতী’ সীতার স্বামী। যার জন্য বিশাল বহর নিয়ে এসেও সুইজারল্যান্ডের কাছে পরাজিত স্পেন। দোষের ভাগীদার হয়েছিলেন কে জানেন? এই সারা। কথা উঠেছিল গোলপোস্টের পেছনে মাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারাকে দেখতে গিয়েই নাকি তাল হারিয়েছিলেন ইকার।

দুইদিনে স্প্যানিশ মিডিয়া তন্ন তন্ন করে ফেলেছে দলকে, কেন ভিক্টর ভালদেস সুযোগ পাবে না, কেন সারাকে এতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে স্পেনের পোস্টের পেছনে তাহকতে হবে? এমনকি বিশ্বকাপের বাকি সময়টা সারাকে দেখতে হয়েছে নিজের প্রিয় মানুষটাকে টিভি স্ক্রিনে। ফাইনালের আগ পর্যন্ত তাকে মিডিয়া কাভারেজে পাঠানো হয়েছে অন্য দলের রিপোর্ট করতে।

ইকার জবাব দিয়েছিলেন পুরো বিশ্বকাপ জুড়ে। সুইজারল্যান্ডের সেই গোলের পর আর মাত্র একবার তাকে পাশ কাটিয়ে বল জড়িয়েছে জালে। পুরো নক-আউট পর্ব স্পেনের দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন ইকার।

যুদ্ধটা শুধু নিজেকে প্রমাণের নয়, নিজের ভালোবাসাকে জেতানোর জন্যও। ইকার বুঝিয়েছিলেন ভালোবাসার শক্তি, প্যারাগুয়ের বিপক্ষে অস্কার কোর্দোজোর পেনাল্টি থামিয়ে। সেমিতে ক্রুসের স্টানার শট; আর ফাইনালে তো রোবেনের বিপক্ষে যা করেছেন, তা লেখা আছে পৃথিবী ইতিহাসে খোদাই করে।

রাজ্যজয়ী ইকারের চুমু শুধু ভালোবাসার ছিল না, ছিল ভালোবাসার মানুষকে আবার কাছে করে নেওয়ার। ছিল পৃথিবীর প্রতিটা মানুষকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া যে, ভালোবাসার শক্তির সামনে এগুলো কিছুই নয়, তুচ্ছ!

কবি জীবনানন্দ দাস লিখে ছিলেন, ‘প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়’ – কথাটা হয়তো সত্য, ১২ বছরের ভালোবাসা নইলে এভাবে হঠাৎ হারিয়ে যাবে কেন? যে সময়টায় দুজনের দুজনকে সবচেয়ে বেশি দরকার, সে সময়টায় এমন ভাঙ্গন কেন? জানা নেই, ভালোবাসার প্রশ্নে কখনও সব উত্তর পাওয়া যায় না, পাওয়া সম্ভবও না। ভালোবাসা বড্ড অদ্ভুত।

ভালো থাকবেন ইকার ক্যাসিয়াস আর সারা ক্যারবেনেরো দু’জনেই। ভালোবাসাহীন পৃথিবীতে আমাকে ভালোবাসার মর্ম বোঝানোর জন্য ধন্যবাদ!

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...