টি-টোয়েন্টি দলে কেন মোসাদ্দেক? – খুব বেশিদিন আগের কথা নয়, যখন এমন কথাটা বাংলাদেশের দর্শক মহলে শোনা যেত প্রায়ই। টি-টোয়েন্টি দলেও তিনি ঠিক জায়গাটা পেতেন না নিয়মিত। তবে, সময় পাল্টেছে। পাল্টে গেছেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও। এখন বরং উল্টো রব ওঠে। লোকে এখন বলে, কেন মোসাদ্দেক এত পরে ব্যাট করতে নামেন? কিংবা আরো দুই-তিনটা ওভার আগে নামলেই তো বাংলাদেশ দু’শো করে ফেলতে পারতো।
হ্যাঁ, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মোসাদ্দেকের ইমেজ বদলে গেছে এতটাই। ২০ ওভারের ক্রিকেটটার মেজাজ ঠিক এই মুহূর্তে বাংলাদেশে তাঁর চেয়ে ভাল নি:সন্দেহে আর কেউ বোঝে না। আফগানদের বিপক্ষে তিনি বাংলাদেশকে খাঁদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছিলেন। প্রায় ১৫৫ স্ট্রাইক রেটে করেছিলেন ৪৮ রান। বাংলাদেশ যা একটু লড়াই করতে পেরেছিল – তার পুরোটাই তাঁর ওই ইনিংসের কল্যানে।
তবে, এবার তিনি আরো বিধ্বংসী, আরো কার্যকর, আরো বেশি দৃষ্টিনন্দন। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল এবার তাঁর ভূমিকাটাও ভিন্ন। প্রথম ম্যাচে তিনি মোটামুটি বড় সময় ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন। এবার আর সে সুযোগ হয়নি তথাকথিত ‘সিনিয়র’রা আগে ব্যাটিংয়ে নেমে যাওয়ায়। তবে, যতক্ষণ যা ব্যাট করার সুযোগ পেয়েছেন, তাতেই যেন নিজের ঝালটা মিটিয়ে ফেলতে পেরেছেন মোসাদ্দেক হোসেন। নয়টি ডেলিভারি থেকে করেছেন ২২ টি রান। ইনিংসে ছিল চারটি চার। স্ট্রাইক রেট প্রায় ২৬৭!
টি-টোয়েন্টিতে শেষের দিকে হাত খুলে মারতে পারে – এমন কাউকেই তো এতদিন হন্যে হয়ে খুঁজছিল বাংলাদেশের ক্রিকেট। অবশেষে সেই চরিত্রটাকে পাওয়া গেল এশিয়া কাপের মত মহাগুরুত্বপূর্ণ আসরে গিয়ে। মোসাদ্দেকের কাছ থেকে টিম ম্যানেজমেন্টের যা চাওয়া ছিল – সেটা এই যাত্রায় যে অন্তত সফল তা মানতেই হচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে কথার লড়াই জমেছিল বেশ। লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা, কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনে কিংবা বাংলাদেশের নুরুল হাসান সোহানের সাথে সেই লড়াইয়ে ছিলেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজনও। বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ প্রসঙ্গে করা শানাকার মন্তব্যের জবাবে সাবেক অধিনায়ক সুজন বলেছিলেন, ‘ওদের তো সাকিব-মুস্তাফিজের মানেরও কোনো বোলার নেই।’
এই কথাটা মাঠে আবার ব্যাকফায়ার করে কি না – সে নিয়ে শঙ্কা ছিল। সেই শঙ্কাটা শুরুতে মেহেদী হাসান মিরাজ উড়িয়ে দিয়েছেন মেকশিফট ওপেনার হিসেবে নেমে। সেই মঞ্চে এরপর ঝড় তুলে গেছেন আফিফ হোসেন ধ্রুব কিংবা মোসাদ্দেকরা। কথার লড়াইয়ে পাওয়া এই জয়ের মত মাঠের জয়টাও টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আসুক নিয়মিত। মোসাদ্দেকদের ব্যাটের জাদুও চলুক সেই তালে। এটুকু প্রত্যাশা অন্তত থাকুক।