সাকিব আল হাসানের মত পরিপূর্ণ অলরাউন্ডার হতে চেয়েছিলেন তিনি। সেজন্যই জার্সি নাম্বারটা বেঁছে নিয়েছিলেন সাকিবের ঠিক আগের সংখ্যাটা, ৭৪। অথচ অলরাউন্ডার তিনি হতে পারলেন কই, কিংবা সেই সুযোগই বা তিনি পেলেন কোথায়। অলরাউন্ডার হতে আসা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন হয়ে গেলেন পুরোদস্তুর পেসার। বোলিংটা দিয়েই এতদিন চাহিদা মিটিয়েছেন দলের। তবে এখন বুঝি সেই চাহিদাও ফুরিয়েছে।
মাঝে একটা সময় বাংলাদেশের পেস বোলিং আক্রমণের অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন সাইফউদ্দিন। ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপেও ছিলেন দলের স্ট্রাইক বোলার। এছাড়া ডেথ ওভারে তাঁর বোলিং প্রশংসা কুড়িয়েছিল। বল হাতে এমন সাফল্য পেতে শুরু করায় ধীরে ধীরে নিজের ব্যাটিং সত্ত্বাটাই হারিয়ে ফেলেন সাইফউদ্দিন। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ব্যাটার সাইফউদ্দিন কখনও নিজেকে প্রমাণের সুযোগই পাননি।
তবে শুধু বোলিং দিয়ে এখন বাংলাদেশ দলে টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়ছে তাঁর জন্য। ইনজুরির কারণে নিজের পথটা যেন আরও এলোমেলো হয়ে গিয়েছে। মাঝের এই সময়টাতে বাংলাদেশের পেস আক্রমণেও একটা বিপ্লব ঘটেছে। তিন ফরম্যাটেই উঠে এসেছে এক ঝাঁক পেসার। ফলে পেসারদের এই স্রোতে গাঁ ভাসাতে পারছিলেন না তিনি।
এমনকি এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে প্রথমে সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। তবে ত্রিদেশীয় সিরিজে পারফর্ম করতে না পারায় কপাল পুড়ে তাঁর। বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ দেয়া হয় তাঁকে। তাঁর বদলে দলে যুক্ত হন বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
এছাড়া তাসকিন আহমেদ এখন বাংলাদেশের পেস আক্রমণের নেতা। বছর দুয়েক ধরেই বল হাতে দুরন্ত ফর্মে তাসকিন। তাঁর সাথে মুস্তাফিজুর রহমানও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ফর্মে ফেরা আভাষ দিয়েছেন। এরবাইরে শরিফুল ইসলাম তো আছেনই। আবার টেস্ট ক্রিকেটে ধারবাহিক ভাবে ভালো করতে থাকা এবাদত হোসেনও চলে এসেছেন ওয়ানডে ফরম্যাটের পরিকল্পনায়।
ফলে পেসার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের জায়গাটা এখন বেশ নড়বড়ে। কিছুদিন বাদেই ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে সাইফউদ্দিনের ডাক পড়বে কিনা সেটাও অনিশ্চিত। সেসব ভাবনা বাদ দিয়ে এই পেসার নিজের কাজটুকু অবশ্য করছেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে (বিসিএল) নিজের প্রথম ম্যাচেই তুলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট।
সাইফউদ্দিনের এই ফাইফার মাঠে বসেই দেখেছেন দুই নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমন। তাঁদের কাছে এই পেসারের পক্ষ থেকে একটা বার্তা নিশ্চয়ই পৌঁছেছে। তবুও কী ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে খেলা হবে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের। স্কোয়াডে জায়গা হলেও একাদশে জায়গা পাবার জন্য লড়াই করতে হবে এবাদত, শরিফুলদের সাথে।
তবে এখনও সুযোগ আছে তাঁর সামনে। ফাইনাল ম্যাচ বাদেও বিসিএলের আরও দুই ম্যাচ বাকি রয়েছে। নিজের বোলিং এর এমন ধার সেখানেও ধরে রাখতে পারলে নিশ্চয়ই তাঁকে নিয়ে ভাবতে বাধ্য হবেন নির্বাচকরা।
তবে মোদ্দাকথা হচ্ছে পেসার সাইফউদ্দিনের জন্য পথটা দিন দিন অনেক কঠিন হয়ে পড়ছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকার জন্য শুধু বোলিংটা হয়তো তাঁর জন্য যথেষ্ট নয়। তাসকিন, শরিফুলদের গতির সাথে তাল মেলাতে পারছেন না তিনি।
ফলে দীর্ঘ সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকলে তাঁর পুরনো স্বপ্নটাই আবার নতুন করে দেখতে হবে। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন তো অলরাউন্ডার হতে এসেছিলেন, পেস বোলিং অলরাউন্ডার। যে জায়গাটায় এখনও কাউকে খুঁজে পায়নি বাংলাদেশ। তিনি বরং সে চেষ্টাটাই চালিয়ে যেতে পারেন।