ভারত, ক্রিকেটের নব্য চোকার!

২০১৩ সালের সেই যে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়। এরপর আর কোনো বৈশ্বিক আসরের শিরোপা জেতা হয়নি ভারতীয়দের। অথচ,যে পরিমান বিনিয়োগ অথবা তথাকথিত ‘মিডিয়া হাইপ’ ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে,তা আর অন্য কোন দেশকে ঘিরে থাকে না। সম্প্রতি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটের লজ্জ্বাজনক হারে আবারও সামনে এসেছে ভারতীয়দের এই দুর্দশা।গত ১০ বছরে ভারতীয় ক্রিকেটে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজ ব্যতীত নিজেদের অর্জন যে একেবারেই শূন্য।

২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে তাদেরকেই ফাইনালে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জয় করে ভারত। এরপর একে একে ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল, ২০১৫ ওডিয়াই বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল, নিজেদের মাঠে ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ব্যর্থতা। ২০১৭ সালের ফাইনালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি হার, ২০১৯ সালে আবারও ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল থেকে বাদ।

২০২১ এবং ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও একই পরিণতি। নেটিজেনদের মুখে মুখে একই প্রশ্ন। কি হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটের। সমস্যা কোথায়? এবারের বিশ্বকাপে হারের পর কেউ কেউ ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগকেই (আইপিএল) দায়ী করছেন। কেউ বা দায়ী করছেন ক্রিকেটারদের মানসিকতাকে। কেউ বা দায়ী করছেন বাইরের দেশে ভারতীয় ক্রিকেটারদের খেলতে না দেয়াকে।

সব মিলিয়ে পরিস্থিতিটা এমন যে ভারত আধুনিক ক্রিকেটের নব্য চোকারে পরিণত হচ্ছে। নিজেদের দেশে দারুণ একটা ক্রিকেট কাঠামো থাকার পরও তাঁরা ব্যর্থ হচ্ছে ক্রিকেটের বড় মঞ্চে। আইসিসি ইভেন্ট গুলোতে বারবার নক আউট পর্বে গিয়ে ফিরতে হয়েছে রোহিত-বিরাটদের।

ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক এবং তারকা ব্যাটসম্যান তো সরাসরিই বলে দিলেন, ‘ভারতীয় ক্রিকেটারদের টি-টোয়েন্টি খেলার ধরনেরই ঠিক নেই!’

সিডনি মর্নিং হেরাল্ডের এক সাক্ষাৎকারে ভন বলেন, ‘ভারত সাদা বলের ক্রিকেট খেলছে বহু বছর ধরে। কিন্তু ২০১১ বিশ্বকাপ জেতার পর সাদা বলে ভারতের অর্জন কী? তাদের দলে টি-টোয়েন্টির যে প্রতিভা রয়েছে, আর তাদের নিয়ে ভারত যা খেলছে, দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গিয়েছি। তাদের যথেষ্ট ভাল ক্রিকেটার আছে, কিন্তু সেই ক্রিকেটারদের পারফর্ম করার প্রক্রিয়াটা ঠিক নেই। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে মাঠে নেমেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মারা শুরু করা উচিত। তারা কেন যেন প্রথম ৫ ওভার প্রতিপক্ষের বোলারদের সুযোগ করে দেয়।’

এমন দল নিয়ে ভারতের অর্জন আরও বেশি হওয়া উচিত বলে মনে করেন ভন, ‘আমার তো মনে হয় তাদের যে সুযোগ-সুবিধা, তা নিয়ে তাদের অর্জন কিংবা সাফল্য আরও বেশি হওয়া উচিত। প্রতিভা অনুযায়ী ভারতের প্রাপ্তি নেই বললেই চলে।’

এছাড়াও ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ে অনেকেই সমালোচনা করতে ভয় পায় বলে জানান ভন। তিনি বলেন, ‘যেটা যেকোন দেশের ক্রিকেটের জন্যই খারাপ।যখন কেউ সমালোচনা করবে,তখনই আপনি জানতে পারবেন আপনার কোথায় কোথায় ঘাটতি আছে এবং পরবর্তীতে আপনি সেখান থেকে উন্নতি করতে পারবেন।’

ভনের মত আরেক সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইনও একই কথা বলেন, ‘আমি আমার বিভিন্ন লেখায় আগেও বলেছি। আমার কাছে মনে হয়, ভারতীয় দলের টপ অর্ডার যে ব্যাটিংটা করছে, সেটি পুরোনো আমলের ব্যাটিং। এটি কেবল আমার কথা নয়, ভারতের সাবেক কোচ রবি শাস্ত্রীও এর থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন দলকে।’

নাসের হুসেইন আরও বলেন, ‘ভারতের ব্যাটিংয়েও ভয়ভীতির ছোঁয়া ছিল। তাদের মাথায় রাখা উচিত ছিল, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের সংগ্রহটা হতে হবে নির্দিষ্ট মানদণ্ডের অনেক ওপরে। সেটি হয়নি। হার্দিক পান্ডিয়া যদি ওই সাহসী ইনিংসটা না খেলত, তাহলে তাদের সংগ্রহ হত আরও অনেক কম।’

দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পর সমস্ত ভারত জুড়েই ক্রিকেট নিয়ে তোলপাড় চলছে। জোর গুঞ্জন রয়েছে অধিনায়কত্ব হারাতে পারেন রোহিত শর্মা। তার জায়গা নিতে পারেন অলরাউন্ডার হার্দিক পান্ডিয়া। সাথে দল থেকে বাদও পরতে পারেন আরও বেশ কিছু ক্রিকেটার।

তবে, সেটা যাই হোক না কেন ভারতের সবচেয়ে বেশি দরকার এখন একটা আন্তর্জাতিক ট্রফির। না হয়, চোকারের এই তকমাটা কঠিন ভাবে জেঁকে বসতে পারে তাঁদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link