জনপ্রিয়তা উদ্ধারের চেষ্টায় ভারত-পাকিস্তান!

পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে ড্রয়িং রুমে রাখা বোকা বাক্সতে বন্দি

হ্যাঁ, আমাদের পৃথিবীটা ক্রমশই ছোট হয়ে আসছে। সব কিছুই হাতের নাগালে। বিনোদনের নানানরকম সব আয়োজন ড্রয়িং রুমের গণ্ডি পেরিয়ে এসে পড়েছে হাতের মুঠোয়। এত এত আয়োজনের মাঝে ক্রিকেট খেলাটা কি খুব বেশি ফিঁকে হয়ে যাচ্ছে? বিশেষ করে আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজগুলো? হচ্ছে বোধহয়।

ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মহাযজ্ঞ পুরো বিশ্বব্যাপী। শ্বাসরুদ্ধকর ব্যাটিং-বোলিং, চার-ছক্কার বৃষ্টি, জমকালো সব অনুষ্ঠান এসব কিছু ভিড়ে মানুষ সম্ভবত আন্তর্জাতিক দ্বিপাক্ষিক সিরিজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

এর পেছনের কারণ অনেক কিছুই হতে পারে। তবে এর তো একটা সমাধান খুঁজে বের করা প্রয়োজন। বেশ জনপ্রিয় একটা খেলার জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে ক্ষিণ হতে দেখছেন হয়ত অনেকেই। সেই তালিকায় রয়েছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান রমিজ রাজা ও বোর্ড অব কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়ার (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহ। জনপ্রিয়তার ধীরস্থির হ্রাস নিয়ে সন্দিহান তাঁরা। সেখান থেকে পরিত্রাণের উপায়ও বের করেছেন দু’জন। অবশ্য তাঁদের দু’জনের চিন্তায় রয়েছে ভিন্নতা; স্বাভাবিক মনুষ্য গুণাবলি।

আগামী মাসে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে বিশ্ব ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির বোর্ড মিটিং। সেই মিটিং এর কথা মাথায় রেখেই হয়ত সবাই নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুত হয়েছেন। আইসিসির বোর্ড মিটিং এ নিজের প্রস্তাবনা তুলে ধরবার আগেই রমিজ রাজা নিজের প্রাথমিক পরিকল্পনার কথা সমর্থকদের জানিয়েছেন নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে। তিনি মূলত একটি চারদেশিয় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন আগামী বোর্ড মিটিংয়ে।

এ বিষয়ে রমিজ রাজা তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘আমি আইসিসির সামনে একটি চারদলীয় আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট আয়োজনের একটা প্রস্তাব দেবো। পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে টুর্নামেন্টটি আয়োজিত হবে প্রতি বছর, ভেন্যু পরিবর্তন হবে চক্রাকারে। সেই টুর্নামেন্টের একটা আলাদা রেভিনিউ মডেল থাকবে। সেই টুর্নামেন্টের লভ্যাংশ আইসিসির সদস্য দেশগুলোর মাঝে শতকরা হিসেবে বণ্টন হবে।’

মূলত আইসিসির অর্থকাঠামো নিয়েই সন্দিহান পিসিবি প্রধান। তাঁর মতে অধিকাংশ ক্রিকেট বোর্ড অবহেলিত হন লভ্যাংশের বিচারে। তাই হয়ত নতুন কোন বোর্ড যুক্ত হতে চাননা আইসিসির সাথে। তাতেই ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার খরা দেখা দিচ্ছে দিনে দিনে।

রমিজ রাজা আরো এক সংবাদ মাধ্যমে এ নিয়ে বলেন, ‘আমার পরিকল্পনা হচ্ছে একটা কোম্পানি তৈরি করা যে কোম্পানি আইসিসির অধীনেই কাজ করবে। সেই কোম্পানির একজন আলাদা প্রধান  কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা থাকবেন যিনি পুরো অর্থনৈতিক কাঠামোর দেখভাল করার পাশাপাশি লভ্যাংশ সবগুলো সদস্যদের মাঝে সুসম বন্টন করে দেবে।’

এ কথা ঠিক আইসিসির তাঁর সদস্য দেশ গুলোর সাথে অর্থৈতিক লেনদেনে বেশ একটা ঘোলাটে বিষয় রয়েছে। যেখানে সহযোগী দেশগুলোকে অর্থ সহয়তা দিয়ে তাঁদেরকে উৎসাহিত করা উচিৎ, সেখানটায় আইসিসির বড্ড বেশি অনীহা নিশ্চয়ই কারো চোখ এড়ায় না। তবে আর্থিক সুসম বন্টনই কি শেষ কথা? তা হলেই কি ক্রিকেট পৌঁছে যাবে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে? বোধহয় না। তাহলে কি করা যেতে পারে?

সেই চিন্তাভাবনা নিয়েই সামনে এসেছেন বিসিসিআই সচিব। তিনি বরং আরো বেশি করে ক্রিকেটকে ছড়িয়ে দেওয়ার পক্ষে কথা বলছেন। তাঁর নেওয়া পরিকল্পনার মুখ্য বিষয় সেটাই। এ  বিষয়ে জয় শাহ বলেছেন, ‘আমি ক্রিকেটকে অলিম্পিকসের মতো বিশাল মঞ্চে দেখতে চাই, সেটা খেলাটাকে আরো বিস্তার ঘটাতে সহয়তা করবে। খেলাটার বিস্তারই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমাদেরকে সে দিকটায় নজর দিতে হবে কোন বাণিজ্যিক উদ্যোগ হাতে নেওয়ার আগে।’

দুই শক্তিশালী দুই বোর্ডের পরিকল্পনায় রয়েছে ভিন্নতা। তবে সবার পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্রিকেটের উন্নয়ন এবং এর জনপ্রিয়তা যথাসম্ভব বাড়ানোর চেষ্টা চালানো। নতুবা হয়ত ক্রমশ ক্রিকেট এর জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলতে পারে। গতিটা হয়ত হুট করে চোখে পড়বে না। ক্রিকেটের এই উপমহাদেশে যে পরিমাণ জনপ্রিয়তা এখন অবধি বজায় রয়েছে তাঁর মূল বিষয় এখানকার দেশগুলোর অংশগ্রহণ। এখন আইসিসি ঠিক কোন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link