ওয়ানডেতে ভারতের সেরা ম্যাচ উইনার কে!

যেহেতু ফিনিশার মানেই শুধু নট আউট থেকে জেতানো নয়, আগে ব্যাট করে ইনিংসকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেওয়াও একটা হিসেবে ফিনিশ করা। যেমন ধরা যাক, রান তাড়া করে মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতকে যে ৭৫ টি ম্যাচ জিতিয়েছেন তার মধ্যে তিনি ৪৭ টায় নট আউট ছিলেন।

ভারতের ফিনিশার ব্যাপারটায় সরাসরি ফোকাস না করে, ভারতের ওয়ান ডে ক্রিকেটে আগে এবং পরে ব্যাট করে জয়ের ক্ষেত্রে রান পার ইনিংস এবং স্ট্রাইক রেটের দিকে কে কোন জায়গায় আছেন সেটা একটু দেখে নেওয়া যাক।

এখানে প্রথমেই বলি, ব্যাটিং গড় না নিয়ে রান পার ইনিংস নেওয়ার কারণ হলো, এখানে বেশ কিছু ব্যাটসম্যান আছেন যারা এত বেশি বার নট আউট থেকেছেন, যে তাঁদের ভারতের জয়ের ম্যাচে গড় আকাশ ছোঁয়া, কিন্তু যেহেতু ফিনিশার মানেই শুধু নট আউট থেকে জেতানো নয়, আগে ব্যাট করে ইনিংসকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেওয়াও একটা হিসেবে ফিনিশ করা। যেমন ধরা যাক, রান তাড়া করে মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতকে যে ৭৫ টি ম্যাচ জিতিয়েছেন তার মধ্যে তিনি ৪৭ টায় নট আউট ছিলেন।

অর্থাৎ, প্রকৃত রান পার ইনিংসের থেকে তাঁর গড় অস্বাভাবিক বেশি হবে এতে সন্দেহ নেই। এবং এই প্রতিটি নট আউট ইনিংসে যে তিনিই জয়ের মুখ্য কারিগর ছিলেন, তাঁর পার্টনার হিসেবে কোহলি, যুবরাজ বা রায়না বা অন্য কেউ নন, তাঁর কোনো সরাসরি প্রমাণ এই ডেটা থেকে পাওয়া যায় না।

যেহেতু আমরা স্ট্রাইক রেট কেও হিসেবে রাখছি, তাই রান পার ইনিংস একটা নিরপেক্ষ ছবি তুলে ধরবে বলে আশা করা যায়। যারা ভারতের জয়ের ম্যাচে অন্তত ২০০০ রান করেছেন ( আগে বা পরে ব্যাট করা প্রতিটি বিভাগে আলাদা করে) শুধু তাঁদেরই হিসেবে ধরা হয়েছে।

পরে ব্যাট করে অর্থাৎ চেস করে জেতানোর ক্ষেত্রে বিরাট কোহলি সবার আগে, এবং বেশ অনেকটাই আগে। রান পার ইনিংস ধরে তাঁর গড় এসেছে ৬১.৫ ( যা অন্যথায় ৯৩ এর উপরে)। কোহলির থেকে বেশ পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে একটি ঝাঁকে রয়েছেন রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, সচিন টেন্ডুলকার ও গৌতম গম্ভীর। গড় ও স্ট্রাইক রেটের হিসেবে এরা খুবই কাছাকাছি।

এর পরে আসবেন ধোনি ও সৌরভ গাঙ্গুলি। অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি, নট আউট এর হিসেবে বেড়ে যাওয়া গড় যদি ধরা না হয়, তাহলে ধোনির রান পার ইনিংস নেমে আসে ৩৮ এ, যেখানে তাঁর রান তাড়া করে জেতানো ম্যাচে ব্যাটিং গড় হল ১০৩-এর কাছে!

ধোনি অবশ্য স্ট্রাইক রেটে গাঙ্গুলির থেকে এগিয়ে অন্যদিকে, গাঙ্গুলির রান পার ইনিংস প্রায় ৪৫, কিন্তু স্ট্রাইক রেট কম। দুইয়ের কম্বিনেশন এ আমি ধোনি আর সৌরভকে এক জায়গায় রাখতে বাধ্য হচ্ছি, বরং সৌরভ কে একটু এগিয়েও রাখা যায়, কেননা সৌরভ ওপেন করতেন, তাই তাঁর শেষদিকে নেমে ধুম ধাড়াক্কা মেরে স্ট্রাইক রেট বাড়ানো বা নট আউট থেকে গড় বাড়ানো, দুটোরই সুযোগ ধোনির তুলনায় অনেক কম ছিল।

তবুও, তিনি গড়ে প্রতি ম্যাচে বেশি রানের অবদান রেখেছেন রান তাড়া করে জয়ের ক্ষেত্রে, অর্থাৎ, ওপেন করে একটা শক্ত ভিত তিনি তৈরী করে দিতেন, যার পরে কখনো যুবরাজ, কখনো কাইফ, কখনো বা ধোনি ম্যাচ ফিনিশ করেছেন।

এককভাবে শুধুমাত্র খুব হাই স্ট্রাইক রেট ও কম গড় নিয়ে আছেন বীরেন্দ্র শেবাগ। তাঁর রান পার ইনিংস ৩৭.৫ ও স্ট্রাইক রেট ১০৭!

এরপরে আছেন যুবরাজ সিংহ ও মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন। আমি একটু অবাক, যে যুবরাজের স্থান এত পিছনে হওয়ায়, যদিও তিনিও ২৭ টি নট আউট থাকার কারণে গড় বাড়িয়ে রাখার সুবিধে ভোগ করেছেন। স্ট্রাইক রেট তাঁর ধোনি বা বীরেন্দ্র শেবাগের মতো বেশি না হওয়ায় দুটোর কম্বিনেশন এ তিনি পিছিয়ে পড়েছেন। যদিও এটি শুধুমাত্র জয়ে অবদান বিচার করা হচ্ছে, এর পরে যখন শুধুই ফিনিশার রোল নিয়ে বিশদে আলোচনা করবো, সেখানে নট আউট থেকে জেতানোর ব্যাপারটা বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে।

শেষে আছেন রাহুল দ্রাবিড়।

এবারে আসি আগে ব্যাট করে জয়ের ক্ষেত্রে। যেহেতু টস জেতা ভাগ্যের ব্যাপার এবং আগে বা পরে ব্যাট করাও সেই হিসেবে একটা ৫০-৫০ ঘটনা, প্রতিটি দলকে আগে ব্যাট করে জেতার জন্যও তৈরী থাকতে হয় এবং সেখানে যে বা যারা ভালো করেছেন, তাঁদের অবদান সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মোট কে কত রান করেছেন সেটি এখানে আমি কোনো হিসেবে ধরিনি, কেননা সেটা অনেকাংশেই কে কত বেশি ম্যাচ খেলেছেন তার উপরে নির্ভর করে।

অর্থাৎ, দুই হিসেবেই মোট রানে শচীন সবার আগে থাকলেও, সেটা প্রমান করে না যে বাকিরা তাঁর সমান ম্যাচ খেলার সুযোগ পেলে তাঁর সমান বা বেশি অবদান রাখতে পারতেন না। সেই কারণে শুধুই রান পার ইনিংস ও স্ট্রাইক রেট।

আগে ব্যাট করে এই হিসেবে সবার আগে শেবাগ, তাঁর রান পার ইনিংস ৫২.৫ এবং স্ট্রাইক রেট ১১৩! অসাধারণ বললেও কম বলা হয়। এর পরেই ধাওয়ান ও টেন্ডুলকার, এবং খুবই কাছেই রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি। অর্থাৎ, বিরাট কোহলি চেস করে যতটা সফল, আগে ব্যাট করে ততটা নন। তাঁর রান তাড়া করে জয়ে ২২ টি সেঞ্চুরি, সেখানে আগে ব্যাট করে জয়ে ১৩ টি। শচীনের ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটি ১৪ ও ১৯। অর্থাৎ, আগে ব্যাট করে জয়ের ক্ষেত্রে শচীন এগিয়ে, রান তাড়া করে বিরাট।

সৌরভের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৬ ও ১২, যথাক্রমে চেস করে ও আগে ব্যাট করে জয়ের ক্ষেত্রে।

এরপরে আসবেন যথাক্রমে সৌরভ ও দ্রাবিড়, যাঁদের গড় রান পার ইনিংস ৪৯ ও ৪৬ এবং স্ট্রাইক রেট ৮০ এর কাছে। অন্যদিকে, ধোনি আর যুবরাজ একসাথে আছেন, যাঁদের রান পার ইনিংস ৪১ এর আশেপাশে ও স্ট্রাইক রেট প্রায় ১০২ এর কাছে। এরপরে অনেকটা পিছিয়ে আজহারউদ্দীন।

তাহলে নীরস পরিসংখ্যান দিয়ে দেখলে, আগে ব্যাট করে বিপক্ষকে দুমড়ে দেওয়ার মাস্টার হলেন শেবাগ আর পরে ব্যাট করে জয়ের ক্ষেত্রে সেরা অবদান বিরাট কোহলির। ধোনি দুই ক্ষেত্রেই বেশ মাঝের দিকে আছেন। এবারে অনেকে বলতে পারেন যে ধোনি পরে নেমে ৩০-৪০ নট আউট করেন বলে তাঁর রানের গড় কম আসবে, নট আউট না ধরায়। কিন্তু এটাও ভেবে দেখা দরকার, ৩০-৪০ নট আউট এর গুরুত্ব সবসময় একটা ওপেন করে বা ৩ নম্বরে নেমে ৭০-৮০ বা সেঞ্চুরির থেকে বেশি হয় কি?

৩০ বা ৪০ নট আউট করে ম্যাচ তখনই জেতানো যায় যদি আগে টপ অর্ডার একটা ভালো প্লাটফর্ম দিয়ে যান তবেই। যেদিন সেটা হয় না, সেখানে ধোনিকে ৯১* নট আউট এর মতো ইনিংস খেলেই দলকে জেতাতে হয়। ধোনি বা যুবরাজ যদি কন্সিস্টেন্টলি ৬০/৭০ করে ম্যাচ জেতাতেন আর নট আউট থাকতেন, সেটা তাঁদের রান পার ইনিংসে ধরা পড়তো। তাই সামগ্রিক অবদান দেখলে, গ্রাফ যা দেখাচ্ছে সেটাই।

এর পরে ফিনিশিং রোলের অবদানের জন্য আরেকটু গভীরে যেতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link