তাঁকে বলা হয় ‘মুলতানের সুলতান’। বলা হবেই বা না কেন? হেলেদুলে, আয়েশি ভঙ্গিতে ব্যাটিংয়ে আসতেন। শরীরী ভাবে থাকতো সুলতানের মতোই ছাপ। পাকিস্তান ক্রিকেটে ইনজামাম উল হককে ভুলে যাওয়ার বিন্দুমাত্র কারণ নেই।
বাইশ গজের ব্যাটিং প্রান্তে যার আগমন মানেই, তাঁর ব্যাটিং আগুনে বাঘা বাঘা বোলারদের বল বাউন্ডারির ওপারে অনায়াসে আছড়ে ফেলার দৃশ্য। উইকেটের চতুর্দিকে শট খেলার যার সহজাত দক্ষতা ছিল ক্যারিয়ারের আদিলগ্ন থেকেই। এরপর পাকিস্তান ক্রিকেটে ইনজামাম উল হজ ক্রমেই নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন একেবারে চূড়ায়।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর ঝুলিতে আছে ২০ হাজার ৫৮০ রান, যা পাকিস্তানের হয়ে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। ওয়ানডে ক্রিকেটেও পাকিস্তানের হয়ে সর্বোচ্চ রানের মালিক তিনি। একদিনের ক্রিকেটে ১১ হাজার ৭৩৯ রান করা ইনজামামকে পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বকালের সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটারের স্বীকৃতি দেওয়া হয় বেশ কিছুকাল আগে থেকেই।
তবে এবার ইনজামাম উল হককে এশিয়ার সর্বকালের সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটারের স্বীকৃতি দিলেন ভারতের সাবেক ক্রিকেটার বিরেন্দ্র শেবাগ। সম্প্রতি এক ইউটিউব চ্যানেলের অনুষ্ঠানে ইনজামামের কথা উঠতে ভারতের সাবেক এ ওপেনার বলেন, ‘ইনজি ভাই, দুর্দান্ত। সবাই শচীনের কথা বলে। শচীন অবশ্যই সবার উপরে। তবে ইনজামাম ভাইয়ের মতো আমি এশিয়ার একজন মিডল অর্ডার ব্যাটারও দেখিনি। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের মধ্যে তাঁর সময়ে সে-ই সেরা ছিল।’
শেবাগ আরও বলেন, ‘২০০৩-০৪ এর দিকে, যখন প্রতি ওভারে ৮ রান করা কঠিন ছিল, তখন তাঁর কাছে এটা কখনোই কঠিন মনে হতো না। ঐ সময়টা এমন ছিল, প্রতিপক্ষ দল ১০ ওভারে ৮০ রান করলে ফিল্ডিংয়ে থাকা দল আতঙ্কিত হয়ে পড়তো। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হলো ইনজামাম শান্ত থাকতেন। কারণ তাঁর কাছে এমন রান কঠিন কিছু মনে হতো না।’
বিরেন্দ্র শেবাগ অবশ্য ভুল কিছু বলেননি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২০,৫৮০ রানের মধ্যে মিডল অর্ডারে (৪-৭) ব্যাটিং করে পাকিস্তানের সাবেক এ ব্যাটার রান করেছেন ১৭৪১৯। মিডল অর্ডারে রান তোলার দিক দিয়ে তাঁর উপরে রয়েছেন শুধু ৩ জন।
১৭৯৯৯ রান নিয়ে এ তালিকায় তিনে আছেন অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ। আর মিডল অর্ডারে ১৮,৯৩০ রান করে শচীন দ্বিতীয় এবং ২১১৬৫ রান করে সবার শীর্ষে রয়েছেন শ্রীলঙ্কার মাহেলা জয়াবর্ধনে।
এখানে ইনজামামের উপরে দুইজন এশিয়ান ব্যাটার থাকলেও রান করার শতাংশের দিক দিয়ে ইনজিই আবার এগিয়ে। যেমন ক্যারিয়ারের ৮৪.৬৪ শতাংশ রানই ইনজামাম উল হক করেছেন মিডল অর্ডারে ব্যাটিং করে। যেখানে শচীন করেছেন ৫৫ শতাংশ আর জয়াবর্ধনে মিডল অর্ডার ব্যাটিং করে পেয়েছেন ৮১.৫২ শতাংশ রান।
বিরেন্দ্র শেবাগ মূলত এটিই বুঝিয়েছেন। পুরোদস্তুর মিডল অর্ডার ব্যাটার হিসেবে ইনজির আশেপাশেও তাঁর সময়ে এশিয়ার কোনো ব্যাটার ছিল না। শচীনকে কখনোই পুরোদস্তুর মিডল অর্ডার ব্যাটার বলা যায় না। উল্টো একদিনের ক্রিকেটে সিংহভাগ সময়ে তাঁর উপরই দলের ইনিংস শুরুর দায়িত্ব পড়তো।
আর মাহেলা জয়াবর্ধনে মিডল অর্ডার ব্যাটার হলেও ইনজামামের সাথে তাঁর ক্যারিয়ার শুরুর দূরত্ব ছিল প্রায় অর্ধ যুগের। তাই এ দুই ব্যাটারের মধ্যে তুলনাটা আর যাইহোক সমীচীন নয়।