মানব মন বড় অদ্ভুত। আর সেই মনের অলিগলিকে রাখতে হয় পরিস্কার। মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি যেকোন মানুষের জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তা একজন সাধারণ মানুষ হোন, কিংবা বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার। বরং বলা যায় ক্রিকেটীয় ক্যারিয়ার, পরিবার, স্টারদম, দারুণ ব্যস্ত সূচি, ফর্ম ধরে রাখা, আলোচণা- সমালোচনা সব মিলিয়ে ক্রিকেটারদের ওপর চাপটা একটু বেশিই থাকে।
আর এই চাপ থেকে আসে মানসিক অবসাদ। মানসিক অবসাদের কারণে অনেক ক্রিকেটারই ক্যারিয়ারের ইতি টানতে বাধ্য হন। এই তালিকায় মার্কাস ট্রেসকোথিক, জোনাথন ট্রট, অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফ কিংবা নারী ক্রিকেটার সারা টেলর – এক গাদা তারকা রয়েছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে সেই তালিকার সবচেয়ে আলোচিত নাম হলেন ইংলিশ তারকা বেন স্টোকস।
স্টোকস গত বছর খেলা থেকে বিশ্রাম নিয়েছিলেন তার মানসিক স্বাস্থ্যের দিকটিতে মনোনিবেশ করার জন্য। তারপর ফিরেছিলেন তিনি। ফিরেই অধিনায়ক হিসেবে পাকিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় সারির একটা দল নিয়ে সিরিজ জিতলেন ৩-০ ব্যবধানে। টি-টোয়েন্টি সিরিজে ছিলেন বিশ্রামে। ইংল্যান্ডকে বিশ্বকাপ ও অ্যাশেজ জেতানো নায়ক বেন স্টোকস অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছেন। তারপর তো ওয়ানডে ফরম্যাট থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়ে দিলেন।
প্রায় দুই বছর আগে স্টোকসের বাবা মস্তিষ্কের ক্যান্সারে মারা যান। তখন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল) খেলতে ব্যস্ত সময় পার করছিলেন স্টোকস। বাবার মৃত্যুর ধাক্কা এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেননি তিনি। ক্রিকেটের ব্যস্ততার জন্য সেই সময়ে অসুস্থ বাবার পাশে তেমন থাকতে পারেননি স্টোকস। কারণ তাঁর বাবা-মা বাস করতেন নিউজিল্যান্ডে।
স্টোকস জানিয়েছেন, অসুস্থতার সময় বাবার কাছে যতটা থাকা দরকার ছিল, ততটা থাকতে পারেননি তিনি। যার কারণে ক্রিকেটের প্রতি তীব্র বিরক্তি তৈরি হয়েছিল। কারণ যে সময়টায় স্টোকসের বাবাকে প্রাধান্য দেয়ার কথা ছিলো, তিনি সেই সময়ে ক্রিকেটকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন। এই গ্লানি তাঁকে এখন দারুণ ভোগাচ্ছিল। হয়তো ক্রিকেটে বুঁদ হয়ে না থাকলে তিনি অন্তিম সময়ে আরও বেশি প্রিয় বাবার পাশে থাকতে পারতেন।
ইংল্যান্ডের এই টেস্ট অধিনায়ক বলেছেন, ‘আমি ক্রিকেট থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। খেলাটার উপর খুব রাগ হত তখন। কারণ ক্রিকেটই মৃত্যুপথযাত্রী বাবার কাছ থেকে আমাকে দূরে থাকতে বাধ্য করেছিল। শেষ ক’টা দিন বাবার কাছে থাকার জন্যই ক্রিকেট থেকে বিরতি নিয়েছিলাম।’
স্টোকসের মানসিক অশান্তিটা বাবার মৃত্যুর পর থেকে প্রকট হয়ে ওঠে। প্যানিক অ্যাটাক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। নিয়মিত ঔষধ খেতে হচ্ছিল তাঁকে। এখনো তাঁকে আগের মতো নিয়মিত না হলেও ঔষধ ও ডাক্তারের পরামর্শে চলতে হয়। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন এই ইংলিশ ক্রিকেটার।
স্টোকস অ্যামাজন ডকুমেন্টারিতে বলেছেন, ‘আমি কখনই ভাবিনি যে মানসিক সাহায্যের জন্য আমি ঔষধে নির্ভরশীল থাকব। আমি এটা বলতে বিব্রত বা লজ্জিত নই কারণ আমার সেই সময়ে সাহায্যের প্রয়োজন ছিল।” তিনি মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছিলেন, যোগ করেছেন যে ভাল থাকার ভান করা উচিত নয়। লোকেরা যেন মানসিক অসুস্থতার ব্যাপারে লজ্জা পেয়ে চিকিৎসা নিতে পিছপা না হয়, তাই তিনি আগ বাড়িয়ে নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি সবার সামনে তুলে ধরেছেন।’