এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কা: পুনর্জাগরণের মঞ্চ!

এশিয়া কাপে সফলতম দল কোনটি - এমন প্রশ্ন তো প্রায় শোনা যায়। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় সবচেয়ে বেশিবার এশিয়া কাপ খেলেছে - তাহলে বোধহয় একটু ভাবতে হয়। সাতটি শিরোপা জেতা ভারত নাকি তাদের প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তান। না, এই দুই দল নয় বরং সবচেয়ে বেশিবার মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

এশিয়া কাপে সফলতম দল কোনটি – এমন প্রশ্ন তো প্রায় শোনা যায়। কিন্তু যদি জিজ্ঞেস করা হয় সবচেয়ে বেশিবার এশিয়া কাপ খেলেছে – তাহলে বোধহয় একটু ভাবতে হয়। সাতটি শিরোপা জেতা ভারত নাকি তাদের প্রতিদ্বন্দী পাকিস্তান। না, এই দুই দল নয় বরং সবচেয়ে বেশিবার মহাদেশীয় টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা।

শুধু তাই নয়, এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান সনাথ জয়সুরিয়া এবং সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার লাসিথ মালিঙ্গা দুইজন-ই লঙ্কান ক্রিকেটার। কিন্তু আন্তঃমহাদেশীয় এই ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কার আধিপত্যের গল্প এখন ধূসর হয়ে গিয়েছে। তিলকারত্নে দিলশান, সনাথ জয়াসুরিয়া, কুমার সাঙ্গাকারা-দের অবসরের পরেই মূলত পিছিয়ে পড়ে শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট।

তবে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কান’রা। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, দাসুন শানাকার মত একঝাঁক ক্রিকেটারদের ঘিরে স্বপ্ন বুনছে তারা। তরুনদের নিয়ে নতুন করে লঙ্কানদের ঢেলে সাজানোর কাজ শুরু করেছে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট। এরই অংশ হিসেবে আসন্ন এশিয়া কাপে ভাল করতে উন্মুখ হয়ে আছে দ্বীপরাষ্ট্রটি।

এবারের আসরে গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তানের সঙ্গী হয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাই সুপার ফোরে যাওয়ার কাজটা সহজ হবে না দলটির জন্য। তাছাড়া সাম্প্রতিক ফর্ম বিবেচনায় সুবিধাজনক স্থানে নেই লঙ্কানরা। সর্বশেষ দশ টি-টোয়েন্টিতে মাত্র দুইবার জিতেছে তারা। হেরে যাওয়া ম্যাচগুলোতেও খুব একটা প্রতিদ্বন্দ্বীতার আভাস দেখাতে পারেনি জয়াবর্ধনের উত্তরসূরীরা।

অবশ্য হিসেব-নিকেশ থেকে শ্রীলঙ্কাকে একেবারে বাইরে রাখা যাবে না। প্রথমত খেলাটা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট; নির্দিষ্ট কিছু মুহূর্তের পারফরম্যান্স ঠিক করে দেয় বিজয়ী কে হবে। আবার শ্রীলঙ্কার তারুণ্য নির্ভর দলে সম্ভাবনাময়ী বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় রয়েছেন যারা দলকে উদযাপনের উপলক্ষ এনে দিতে পারেন।

ব্যাটিংয়ের কথা বললে পাথুম নিশাকার নাম সবার আগে বলতে হয়। একটু রয়ে-সয়ে ব্যাটিং করলেও ক্রিজের এক পাশ ধরে রেখে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রয়েছে তাঁর। তবে শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনআপের সবচেয়ে ভরসাযোগ্য নাম দাসুন শানাকা, চারিথা আসালঙ্কা, ভানুকা রাজাপাকসে।

এই তিনজনই যেকোনো পরিস্থিতি থেকে দলকে টেনে তুলতে পারেন, সেই সাথে রয়েছে দুর্দান্ত পাওয়ার হিটিং সক্ষমতা। অভিজ্ঞ দিনেশ চান্দিমাল, দানুশকা গুনাথিলাকা, কুশল মেন্ডিস,ও নিজদের দিনে ধারণ করতে পারেন বিধ্বংসী রূপ।

তবে ব্যাটারদের অধারাবাহিকতা শ্রীলঙ্কা দলের অন্যতম বড় দুর্বলতা। অধিকাংশ সময়ই লঙ্কান ব্যাটাররা তাদের ছন্দ খুঁজে পান না। স্বাভাবিকভাবেই এশিয়ান মঞ্চে তাদের এমন অবস্থা লঙ্কান নির্বাচকদের দুশ্চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে পারে।

যদিও স্পিন আক্রমণে আগের চেয়ে অনেক বেশি সমৃদ্ধ শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দল। দলটির লেগি ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা তো এখন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। তার সাথে আছে তরুণ প্রবীণ জয়াবিক্রমা, মাহেশ থিকসানা। দুইজনই মিস্ট্রি স্পিনার হওয়ায় বৈচিত্র্য দেখা যাবে দলটির স্পিন বিভাগে।

স্পিনের তুলনায় আবার ফাস্ট বোলিংয়ে পিছিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও আরব আমিরাতে সুবিধা করতে পারেনি দলটির পেসাররা। আর এবার তো ইনজুরির কারনে নিয়মিত একাদশের দুষ্মন্ত চামিরা, কাসুন রাজিথাকে ছাড়াই যেতে হচ্ছে এশিয়া কাপে। বোঝাই যাচ্ছে, অভিজ্ঞ পেসারদের ঘাটতি ভোগাতে পারে শ্রীলঙ্কাকে। অবশ্য বেবি মালিঙ্গা খ্যাত মাথিসা পাথিরানা হতে পারেন ট্রাম্পকার্ড।

তাছাড়া শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলে বেশ কয়েকজন পার্ট টাইম বোলার থাকলেও ভাল মানের অলরাউন্ডার নেই বললেই চলে। অথচ ব্যাটে, বলে সমান তালে পারফর্ম করতে পারবে এমন কাউকে বড় টুর্নামেন্টগুলোতে বড্ড প্রয়োজন।

একসময়ের পরাক্রমশালী শ্রীলঙ্কা এখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পিছনের সারির সদস্য। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের র‍্যাংকিং-ও একই কথা বলে। দলটিতে এখন শক্তির চেয়ে দুর্বলতার জায়গা বেশি। তবু স্বপ্ন দেখা থামায়নি লঙ্কানবাসী।

২০১৮ সালের এশিয়া কাপে এই আরব আমিরাতে বাংলাদেশ আর আফগানিস্তানের কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিয়েছিল শ্রীলঙ্কা। এবার অন্তত তেমন কিছু চাইবে না দাসুন শানাকার দল। চার বছর আগের ব্যর্থতা ঘুচানোর লক্ষ্যেই মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নামবে তারা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...