এক ক্যারিবিয়ানে জবাবটা যেন আরেক ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং দিয়েই দিলেন। খুলনার শাই হোপ ৯১ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলেছেন প্রথম ইনিংসে। কিন্তু ২১০ রান তাড়া করতে নেমে যেন তাঁকেও ছাড়িয়ে গেলেন জনসন চার্লস। তাঁর ৫৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংসে ভর করে পাহাড়সম লক্ষ্যটা কুমিল্লা পেরিয়ে গেছে দশ বল বাকি থাকতেই।
বিশ্বজুড়ে টি-টোয়েন্টি ফেরিওয়ালা হিসেবে খ্যাতি ছিল জনসন চার্লসের। ফ্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টগুলোতে মারকুটে ব্যাটিংয়ের জন্য সুখ্যাতি ছিল তাঁর। কিন্তু বয়স বাড়ার সাথে সাথেই যেন খানিকটা নিষ্প্রভ হয়ে পড়েন। জাতীয় দলেও নেই অনেকদিন হল। এবারের বিপিএলকে যেন বেছে নিয়েছেন নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে। বুড়ো হাড়ের ভেলকি দেখিয়ে বিধ্বংসী এক সেঞ্চুরি করে যেন বুঝিয়ে দিলেন এখনো ফুরিয়ে যাননি।
বিপিএলের ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লার এবারের আসরের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। প্রথম তিন ম্যাচে হেরে খাদের কিনারায় পৌঁছে যায় ইমরুল কায়েসের দল। তবে সময় যত গড়িয়েছে ততই উন্নতি করেছে দলটি, ফিরেছে জয়ের ধারায়।
আজকের ম্যাচে অবশ্য প্রথম ইনিংসের পর বোঝা যায়নি কুমিল্লা ম্যাচ জিততে পারে। শাই হোপ আর তামিম ইকবালের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রীতিমতো রান পাহাড়ে চড়ে বসে খুলনা। তাছাড়া লিটন দাস শুরুতেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে সাজঘরে ফিরে৪ গেলে, এ ম্যাচে আর ফেরা সম্ভব না কুমিল্লার পক্ষে এমনটাই ধরে নিয়েছিল সবাই। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে মোহাম্মদ রিজওয়ানের গড়ে দেয়া ভিতের উপর দাঁড়িয়ে রীতিমতো ধ্বংসলীলা চালিয়েছেন জনসন চার্লস।
২২ রানের মাথায় ইমরুল কায়েস আউট হলে ক্রিজে আসেন চার্লস। শুরুতে রয়েসয়ে খেলেছেন, অহেতুক ঝুঁকি নেননি। ছন্দে থাকা রিজওয়ানকে মেরে খেলার সুযোগ দিয়েছেন, নিজে সময় নিয়েছেন সেট হতে। অষ্টম ওভারে মার্ক দেয়ালকে দুটো ছয় মেরে শুরুটা করেছেন।
তবে ঝড়টা সবচেয়ে বেশি গিয়েছে পাকিস্তানি আমাদ বাটের উপর দিয়ে, এই বোলারের এক ওভারেই তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন। এক ওভার বাদে নাহিদুলের ওভারে আরো ধবংসাত্নক চার্লস, সেই ওভারে চারবার বল পাঠিয়েছেন গ্যালারিতে।
৩৯ বলে ৭৩ রান করার পর নাসুমের শিকার হয়ে রিজওয়ান সাজঘরে ফিরলেও থামেননি চার্লস। খুলনার বোলাররা বল করেছেন, আর একের পর এক বলের ঠিকানা হয়েছে সিলেটের গ্যালারি। ১৭ ওভারে আমাদ বাটকে ছয় হাঁকিয়েই রাজসিক স্টাইলে ৫৩ বলে পৌঁছে যান সেঞ্চুরিতে।
দলের জয়টাও এসেছে ছয় দিয়েই, দশ বল বাকি থাকতেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় কুমিল্লা। অন্যদিকে, চার্লস অপরাজিত ছিলেন ৫৬ বলে ১০৭ রানের ইনিংস খেলে।
টুর্নামেন্ট শেষদিকে গড়াতেই যেন পুরনো ছন্দে ফিরছে কুমিল্লা। আগামী দিনগুলোতে বিপিএল ছেড়ে দেশে ফিরে যাবেন পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা। জয় পেতে জনসন চার্লসদের মতো অভিজ্ঞদের দিকেই তাকিয়ে থাকবে ফ্যাঞ্চাইজিগুলো। নক আউট পর্বের আগে চার্লসের এমন ফর্ম তাই অন্য দলগুলোর জন্য অশনি সংকেত বটে!