প্রতিটা ক্ষেত্রের জন্যেই প্রয়োজন আলাদা প্রস্তুতি। সেই বিষয়টি বেশ ভালভাবেই বুঝতে পেরেছেন আফগান অলরাউন্ডার করিম জানাত। লাল বলের ক্রিকেটকেও যে আলাদা সময় দেওয়া প্রয়োজন। সেই বিষয়টি মাথায় গেঁথে গেছে করিম জানাতের। তাইতো ঘরোয়া প্রথম শ্রেণি টুর্নামেন্ট মাতিয়ে তিনি অপেক্ষমান টেস্ট ক্রিকেটের অভিষেকের।
প্রায় সাত বছর হতে চলেছে করিম জানাতের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার। তবে কেবল একটা ফরম্যাটের জন্যই তিনি বিবেচিত হয়েছেন আফগান দলে। সাদা বলের ক্ষুদ্রতম ফরম্যাটে তার খেলা ম্যাচের সংখ্যা ৪৭টি। ওয়ানডে ফরম্যাটে খেলেছেন কেবল একটি ম্যাচ। খুব সম্ভবত নির্বাচকদের ধারণা লংগার ভার্শন ক্রিকেটটা করিম জানাতের জন্য নয়।
কিন্তু নির্বাচকদের রীতিমত ভুল প্রমাণ করেছেন করিম জানাত। আফগানিস্তানের ঘরোয়া লাল বলের টুর্নামেন্টের বাজিমাত করেছেন। দেখিয়েছেন নিজের ব্যাট আর বলের দক্ষতা। ব্যাট হাতে ১৪০.২৫ গড়ে রান করেছেন ৫১৬। দুইটি শতক ছাড়াও চারটি অর্ধ-শতক করেছেন করিম জানাত।
এই দুর্দান্ত পারফরমেন্সের প্রস্তুতি নিয়েছেন তিনি ভিন্নভাবে। নিজের ব্যাটিং সক্ষমতা বাড়াতে জোর দিয়েছেন স্পিন বোলিংয়ে দক্ষ হওয়ার বিষয়টিকে। তিনি বলেন, ‘যখন কোন টুর্নামেন্ট আসে প্রতিটা খেলোয়াড় সেটাকে সামনে রেখে নিজেকে প্রস্তুত করে। আমি প্রথম শ্রেণি ক্রিকেটের জন্য নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করেছি।’
সেই প্রস্তুতিতে তিনি কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নেওয়ার কাজটি করেছেন। বোঝার চেষ্টা করেছেন তার প্রয়োজনটা কি। এ নিয়ে করিম বলেন, ‘আফগানিস্তানে যেসব উইকেটে প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলার হয় সেগুলোতে আসলে স্পিনারদের আধিপত্য থাকে সবচাইতে বেশি। আমি এই বিষয়টি নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করেছি। স্পিনের বিষয়টি মাথায় রেখে নেট অনুশীলনে সুইপ শট খেলার বেশি চেষ্টা করেছি।’
স্পিন সহায়ক উইকেটে বল যেকোন দিকে টার্ন নিতে পারে যখন তখন। সেই অসম টার্ন আর বাউন্সের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ঘাসের উপর অনুশীলন চালিয়েছেন জানাত। তিনি বলেন, ‘আমি ঘাসের উপর স্পিন বোলিং খেলেছি। যা আমার কাছে বেশ কার্যকর হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। আমি যখন ম্যাচ খেলেছি আমি ভাল করেছি কেননা আমার মনে হয়েছে আমার যথাযথ প্রস্তুতি আছে।’
শুধু ব্যাট হাতেই উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছেন করিম জানাত, তেমনটি কিন্তু নয়। ঘরোয়া সেই টুর্নামেন্টের যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হয়েছেন তিনি। মোট ১৮ উইকেট শিকার করেছেন করিম জানাত। তবে এই ১৮টি উইকেট শিকার করা যে বেশ কষ্টসাধ্য বিষয়, সেই উপলব্ধি থেকেই নিজেকে মানসিকভাবে দৃঢ় করেছেন তিনি।
করিম বলেন, ‘লাল বল ক্রিকেট ভিন্ন এক বল গেম এবং প্রতিটা সেশন ধরে ধরে খেলতে হয় সেই সাথে বল করার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা থাকতে হয়। ব্যাটারদের জোর করতে হয় আউট হয়ে যাওয়ার জন্য, সে জন্যে প্রয়োজন ধৈর্য। আমি আমার ধৈর্য ধরে রাখার উপর মনোযোগ দিয়েছি। কেননা সাদা বলের ক্রিকেটের মত আমি দ্রুত ফলাফলের আশা করতে পারি না। তাই আমি আমার মানসিকতার সমন্বয় সেভাবেই ঘটিয়েছি।’
যদিও ২০১৯ সালে আফগানদের টেস্ট দলে ডাক পেয়েছিলেন করিম জানাত। সেবার একাদশে সুযোগ মেলেনি তার। তবে এবার বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেক হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা জাগিয়েছেন তিনি। প্রথমত আহমেদ শাহ আবদাইল টুর্নামেন্টে তার দারুণ পারফরমেন্স প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া বাংলাদেশের মাটিতে খেলার বেশ অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি খেলেছেন। এছাড়াও ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে খেলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা খুব একটা পুরনো নয়।
করিম জানাত মানেন এই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে দেয় ভীষন। তবে তিনি মনে করেন নির্দিষ্ট দিনের পরিস্থিতিই একজন খেলোয়াড়কে সর্বোচ্চ পরীক্ষায় ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ক্রিকেট এমন একটা খেলা, যেখানে নির্দিষ্ট দিনে আপনার ভাগ্য সহায় হলে আপনি অনেক কিছুই করতে পারবেন। যেমন ব্যাটে রান করতে পারবেন অথবা জায়গামত বল করতে পারবেন নির্দিষ্ট সেই দিনে এবং আপনার ভাগ্যে যা থাকবে তাই হবে।’
বাস্তবতা মেনে নিতেও যেন মানসিকভাবে প্রস্তুত রয়েছেন করিম জানাত। তবে তিনি বেশ মুখিয়ে আছেন টেস্ট অভিষেকের জন্য। তিনি বলেন, ‘আমার বেশ ভাল লাগছে। সত্যি বলতে আমি মনে করি টেস্ট ক্রিকেটই আসল ফরম্যাট। কেননা এই ফরম্যাটেই একজন খেলোয়াড়ের দক্ষতার পূর্ণ পরীক্ষা হয়।’
বেশ আনকোড়া একটা দল নিয়েই বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৪ জুন একমাত্র টেস্ট খেলতে নামবে আফগানরা। সেই দলে তুরুপের তাস প্রমাণিত হতে পারেন করিম জানাত। সাম্প্রতিক ফর্মের সাথে আত্মবিশ্বাসী করিম জানাতে অভিজ্ঞতাও ফেলনা নয়।