কিং কোহলি ২.০

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগেও অবস্থাটা এমন ছিল না। তবে বিশ্বকাপে ব্যর্থতার কারণে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব থেকে সড়ে দাঁড়ান বিরাট কোহলি। যদিও ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতে নেতৃত্ব দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তবে ভারতের ক্রিকেট বোর্ড সাদা বলের ক্রিকেটে একজন অধিনায়কই চায়। ফলে ওয়ানডে ফরম্যাটেও নেতৃত্ব হারিয়েছেন। সবমিলিয়ে অগোছালো একটা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে ভারতের ক্রিকেটে।

বক্সিং ডে টেস্টে মাঠে নামার আগে তাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটা বিরাট কোহলির সামনেই। সাদা বলের ক্রিকেটে নেতৃত্ব হারিয়ে এখন তাঁর দায়িত্বে আছে শুধু টেস্ট ক্রিকেট। সেই টেস্ট ক্রিকেটে আবার নিশ্চয়ই নিজের চেনারূপে ফিরতে চাইবেন কোহলি। যদিও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধ কন্ডিশনে কাজটা সহজ হবেনা। তবে কোহলির সামনেও অন্য কোন পথ খোলা নেই। অগোছালো ভারতকে আবার ট্র্যাকে ফিরিয়ে আনার দায়িত্বটা যে তারই।

এছাড়া গত দুই বছর ধরেই টেস্ট ক্রিকেটে সেভাবে রানের মধ্যে নেই এই ব্যাটসম্যান। কোনভাবেই বড় ইনিংস খেলতে পারছেন না। সেই প্রভাবও পড়ছেন ভারতের ব্যাটিং লাইন আপে। এছাড়া অধিনায়কত্ব নিয়ে নানারকম জটলা। এরপর জনসম্মুখে ক্রিকেট বোর্ডের সাথে বিরাটে দ্বন্দ্বের আভাষ পাওয়া। সবমিলিয়ে এই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ ভারত ও বিরাট কোহলির জন্য ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ।

অবশ্য পুরো ভারতের ক্রিকেটই একটা রদবদলের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। মাত্রই দেশটি তাঁদের প্রধান কোচ বদলেছে। এছাড়া বিরাট কোহলির বয়সও এখন ৩৩ বছর। ফলে ক্যারিয়ারের শেষ সময়ে এসে আবার সেই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটে ফিরে আসতে পারবেন কিনা সেই প্রশ্নও থাকে। এছাড়া গত কয়েক সপ্তাহে মাঠের বাইরের নানারকম ঘটনাও তো তাঁর মাথায় থাকবেই।

ভারতের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বোর্ড অব কনট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (বিসিসিআই) আর বিরাট কোহলির মধ্যে কে ঠিক কে ভুল সেটা বিচার করার সময় এখন আসলে আর নেই। জল গড়িয়েছে অনেক দূর। বিরাট কোহলিকে অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক নাকি ভুল সেটাও এখন জানার উপায় নেই। তবে পক্রিয়াটায় গলদ ছিল নিশ্চয়ই। বিদেশের মাটিতে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই ভারতের সফলতম অধিনায়ক নিশ্চয়ই আরেকটু সম্মান আশা করতে পারতেন।

এই বিরাট কোহলির সময়ে ভারত বিদেশের মাটিতে সর্বোচ্চ ৪৬.৪ শতাংশ ম্যাচে জয় এনে দিয়েছেন। এছাড়া ভারতের ক্রিকেটের খারাপ সময়ে দায়টা সবসময় নিজের কাঁধে নিয়েছেন। কোহলি পাশে ছিলেন তাঁর দলের ক্রিকেটারদেরো। কথা বলেছিলেন ঋষাভ পান্তদের হয়ে। বিশ্বকাপে মোহম্মদ শামির পাশে দাড়িয়েছেন। ভারতের সমর্থকরা যখন স্মিথকে মাঠে ক্ষেপাচ্ছিলেন তখন কোহলিই প্রতিবাদটা জানিয়েছিলেন।

ফলে কোহলির উপর দ্রুত বরসা হারানোটাও ঠিক না। কোহলি নিজের ক্যারিয়ারের শুরুতেও এতটা ধারাবাহিক ছিলেন না। তিনি সেরা হবার জন্য কাজ করেছেন। নিজেকে ফিট করেছেন, জীবন যাপন পাল্টে ফেলেছেন, কঠোর পরিশ্রম করেছেন। নিজের শরীরকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সেরা হবার মত করে তৈরি করেছেন। ফলে লড়াই করার অভ্যাসটা তাঁর মধ্যে আছে।

এবার বিরাট কোহলির জীবনের দ্বিতীয় লড়াইটা এসেছে। এবার আর নতুন করে ফিট হতে হবেনা। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কীভাবে রাজত্ব করতে হয় সেই অভিজ্ঞতাও আছে। কোহলির ঝুলিতে এখন সবই আছে। শুধু আরেকবার ভিতর থেকে সেই তাড়নাটা আসা। আবার নিজেকে ছাড়িয়ে যাবার চ্যালেঞ্জ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শেষ কয়েকটা বছরও কোহলির কিং কোহলি হয়ে থাকার আকাঙ্খা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link