শেষ চার ওভারে কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১৩ রান, হাতে ছিল ৮ উইকেট। যে কোন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে, যে কোন উইকেটে এটা সহজ সমীকরণ। কিন্তু হঠাৎ করেই ছন্দ পতন হলো কলকাতার। চোখের পলকে সেই সমীকরণ গিয়ে দাড়ালো ২ বলে ৬ রানে।
তবে হারতে হয়নি কলকাতাকে। রাহুল ত্রিপাঠির ছক্কায় শেষ পর্যন্ত ফাইনালে উঠেছে তাঁরা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দিল্লী ক্যাপিটালসকে তিন উইকেটে হারিয়ে সাত বছর পর ফাইনালে উঠলো কলকাতা। এবারের আসরের দ্বিতীয় দল হিসেবে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইয়ন মরগ্যানের দল।
এখন তাদের সামনে তৃতীয় বারের মত শিরোপা জয়ের হাতছানি। আগামী শুক্রবার তৃতীয় শিরোপা জয়ের লক্ষে চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে মাঠে নামবে কলকাতা। এর আগে ২০১১ ও ২০১৪ সালে ফাইনাল খেলেছিল কলকাতা। দু’বার ফাইনাল খেলে কোন বারই খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাঁদের। এবার কলকাতার সামনে আরো একটি ফাইনাল জয়ের হাতছানি।
আর গ্রুপ পর্বে শীর্ষে থেকেও শূন্য হাতে বিদায় নিতে হলো দিল্লীকে। প্রথম কোয়ালিফায়ারে বোলারদের ব্যর্থতায় হারার পর আজ দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে দুই বিভাগেই চরম ব্যর্থ হয়ে হেরেছে ঋষাভ পান্তের দল। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় কলকাতাকে মাত্র ১৩৬ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল দিল্লী। রান তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতেই জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলে কলকাতা।
কলকাতার দুই ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও শুভমান গিল ১২.২ ওভারের উদ্বোধনী জুটিতে যোগ করেন ৯৬ রান। কাগিসো রাবাদার প্রথম শিকার হয়ে আইয়ার ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। আউট হওয়ার আগে ৪১ বলে ৫৫ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন এই ওপেনার। এরপর দ্রুত চার উইকেট হারিয়ে ফেলে কলকাতা। একে একে ফিরে যান নিতিশ রানা, গিল, দীনেশ কার্তিক, ইয়ন মরগ্যান ও সাকিব আল হাসান।
১২ বলে ১৩ রান করেন রানা, ৪৬ বলে ৪৬ রান করে আউট হয়ে যান গিল, রানের খাতায় খুলতে পারেননি কার্তিক, মরগ্যান ও সাকিব। তবে দ্রুত পাঁচ উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত জয় পেয়েছে কলকাতা। রাহুল ত্রিপাঠির ছয়ে এক বল হাতে রেখেই জয় পায় কলকাতা। ১১ বলে ১২ রান করে অপরাজিত থাকেন রাহুল।
দিল্লির বোলারদের ভিতর দুটি করে উইকেট শিকার করেন ক্যাগিসো রাবাদা,এনরিচ নরকিয়া ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। এছাড়া একটি উইকেট পেয়েছেন আবেশ খান।
এর আগে টসে হেরে প্রথমে ব্যাট করতে নামা দিল্লীর শুরুটা মোটামুটি ভালই হয়েছিল। ৪.১ ওভারে দুই ওপেনার পৃথ্বী শ ও শেখর ধাওয়ান তুলে ফেলেছিলেন ৩২ রান। বরুণ চক্রবর্তীর দারুণ এক ডেলিভারিতে ১২ বলে ১৮ রান করে পৃথ্বী আউট হয়ে গেলেই থেমে যায় দিল্লির রানের গতি। মন্থর গতিতে ব্যাট করতে থাকেন ধাওয়ান ও মার্কাস স্টোয়িনিস।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ৪৪ বলে দু’জন যোগ করেন মাত্র ৩৯ রান। মূলত এই জুটিতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় দিল্লি। শিভাম মাভির বলে লাইন মিস করে ২৩ বলে ১৮ রান করে স্টোয়িনিস ফিরে গেলে ভাঙে এই জুটি। এরপর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি ধাওয়ানও। সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে এই ওপেনার ফিরে যান ৩৯ বলে মাত্র ৩৬ রান করে।
এরপর ৬ বলে ৬ রান করে লকি ফার্গুসনের প্রথম শিকার হয়ে ঋষাভ পান্ত ফিরে গেলে ৯০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে দিল্লী। শিমরন হেটমায়ারের ব্যাটে দিল্লি চাপ কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করলেও উইকেটে বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি এই ক্যারিবিয়ান। ১০ বলে ১৭ রান করা হিটমায়ার ফিরে যান রান আউটের ফাঁদে পড়ে।
১১৭ রানে হেটমায়ার ফিরে যাওয়ার পর শেষের দিকে শ্রেয়াস আইয়ারের ২৭ বলে ৩০ রানে ভর করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৩৫ রান সংগ্রহ করে দিল্লী। কলকাতার বোলারদের ভিতর দুটি উইকেট শিকার করেন বরুণ চক্রবর্তী। এছাড়া একটি করে উইকেট পেয়েছেন শিভাম মাভি ও লকি ফার্গুসন।
- সংক্ষিপ্ত স্কোর
দিল্লী ক্যাপিটালস: ১৩৫/৫ (ওভার: ২০; ধাওয়ান- ৩৬, পৃথ্বী- ১৮, স্টোয়িনিস- ১৮, আইয়ার- ৩০*, পান্ত- ৬, হেটমায়ার- ১৭) (চক্রবর্তী- ৪-০-২৬-২, ফার্গুসন- ৪-০-২৬-২, মাভি- ৪-০-২৭-১)
কলকাতা নাইট রাইডার্স: ১৩৬/৭ (ওভার: ১৯.৫; আইয়ার- ৫৫, গিল- ৪৬, রানা- ১৩, মরগ্যান- (রাবাদা- ৪-০-২৩-২, নরকিয়া- ৪-০-৩১-২, আবেশ- ৪-০-২২-১, অশ্বিন- ৩.৫-০-২৭-২)
ফলাফল: কলকাতা নাইট রাইডার্স ৩ উইকেটে জয়ী।