মিশেল স্টার্ক, ২৫ কোটি রুপির ভুল

পায়ের গোড়ায় সজোরে পিচ করবে বল। মুখ থুবড়ে পড়বে ব্যাটারের ব্যাট। উড়ে যাবে স্ট্যাম্প। মিচেল স্টার্কের নামের প্রতিচ্ছবি সম্ভবত এমন সব ডেলিভারি। কেননা সেটাই যে তার প্রধান অস্ত্র। সেটাই যে স্টার্কের সিগনেচার। তবে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে সিগনেচার তো দূরে থাক, স্টার্কের ভিন্ন এক চিত্রই ফুটে উঠছে। কিন্তু কেন এমন হচ্ছে?

চ্যাম্পিয়ন মানসিকতার একজন বোলারকে দলে ভেড়ানোর সে কি যুদ্ধ! রেকর্ড পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেও যেন নেই কারও কার্পণ্য। সেই লড়াইয়ে শেষ অবধি জিতেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। প্রায় ২৪ কোটি ৭৫ লাখ রুপিতে স্টার্ককে দলে নিয়েছিল দুই বারের চ্যাম্পিয়ন দল। নির্ভার হয়ে স্বস্তিতে অপেক্ষা করছিল স্টার্কের বিধ্বংসী রূপের। এখন তো রীতিমত রাতের ঘুম হারাম কলকতা নাইট রাইডার্সের।

দেদারছে রান বিলিয়ে যাচ্ছেন মিশেল স্টার্ক। দেখা পাচ্ছেন না উইকেটের। সাত ম্যাচ খেলে মোটে ৬ উইকেট যুক্ত হয়েছে স্টার্কের নামের পাশে। তবে মূল সমস্যার জায়গা তার ইকোনমি রেট। প্রায় ১১.৪৮ ইকোনমি রেটে রান বিলিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সেই রানের লাগাম টেনে ধরবার উপায়ন্তর খুঁজে পাচ্ছেন না বাঁ-হাতি এই পেসার।

তাইতো বিদ্রূপ ঘিরে ধরছে কলকাতাকে। ‘কাড়িকাড়ি অর্থ খরচ করে রান মেশিন কিনেছে কলকাতা’- এমন ঠাট্টায় মেতে উঠেছে সমর্থক থেকে শুরু করে সমালোচকরা। সেটাই যেন হওয়ার ছিল। তবে এতে স্টার্কের যতটা না দায়, তার থেকেও বেশি দায় কলকাতার দূরদর্শিতার।

মিচেল স্টার্ক বরাবরই আক্রমণাত্মক বোলার। তিনি সাধারণত ফুলার লেন্থে স্ট্যাম্পের লাইনে বল করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। স্ট্যাম্পের আশেপাশের অঞ্চল থেকে বলের মুভমেন্ট করিয়ে উইকেট শিকার করেন স্টার্ক। এটাই তার ধরণ, এভাবেই তিনি আয়ত্ত্ব করেছেন নিজ ঘরনার পেস বোলিং। আর তার রক্ষনাত্মক অস্ত্র বলতে রয়েছে পিন পয়েন্ট ইয়োর্কার।

তিনি যখন রান বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন, তখন চাইলেও গতির তারতম্য ঘটাতে পারেন না। তার বোলিং মেকানিক্স অনুযায়ী স্লোয়ার বলগুলো ঠিকঠাক ডেলিভার করতে পারেন না। প্রতিটি বোলারের মেকানিক্স ভিন্ন। আর সেই ভিন্নতাই সৃষ্টি করে বৈচিত্র্য।

নিজের রক্ষণাত্মক অস্ত্র ব্যবহার করেও খুব একটা ফলপ্রসূ হতে পারছেন না স্টার্ক। কেননা এখনকার ব্যাটাররা বেশ আগেভাগে বুঝে ফেলেন, নিজেকে বাঁচাতে প্রতিপক্ষ বোলার ঠিক কোন পন্থা অবলম্বন করবেন। সে কারণে স্টার্কের ইয়োর্কারের জন্য এখন প্রতিপক্ষ প্রস্তুত থাকেন। আধুনিক ব্যাটাররা ইয়োর্কার বল খেলার পদ্ধতিও যে রপ্ত করে ফেলেছে সেটা নিশ্চয়ই নতুন কোন তথ্য নয়।

আর স্টার্কের এত রান হজমের পেছনে রয়েছে আইপিএলের ফ্ল্যাট পিচ ও ছোট বাউন্ডারি। বর্তমান সময়ে ক্রিকেটকে আরও বেশি উপভোগ্য করে তুলতে ব্যাটারদের পক্ষেই থাকে ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের পরিবেশ। ব্যতিক্রম নয় আইপিএলও। আর এমন ফ্ল্যাট উইকেটে বরাবরই দিশেহারা হয়ে যান স্টার্ক।

অবশ্য বৈশ্বিক আসরে ভিন্ন এক স্টার্কেরই দেখা মেলে। সেটার পেছনেও রয়েছে কারণ। আইসিসি আয়োজিত বৈশ্বিক টুর্নামেন্টগুলোতে স্পোর্টিং উইকেট সরবরাহ করা হয়। সেসব উইকেটে ব্যাটারদের জন্য সহয়তা বেশি থাকলেও বোলারদের একেবারে নিরাশ করা হয় না। ঠিক সে কারণেই স্টার্করা হয়ে ওঠেন দুর্ধর্ষ।

তাইতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট ও ফ্রাঞ্চাইজি ক্রিকেটের মিচেল স্টার্ককে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়। সে ভুলটিই করেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স ফ্রাঞ্চাইজি। আর সে ভুলে মাশুল গুণতে হচ্ছে একেবারে কড়ায়-গন্ডায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link