কোহলির মুখ তাঁর ব্যাটের চেয়ে কম কথা বলে না।
সবসময়ই প্রতিপক্ষকে চুপ করিয়ে দিতে পছন্দ করেন। সেটা ব্যাট দিয়েই বেশিরভাগ সময় করেন। কখনো কখনও আকার ইঙ্গিতও ব্যবহার করেন। কিন্তু এবার নিজেই নির্বাক হয়ে গেছেন। অ্যাডিলেডে ভয়ানক ঝড়ের পর আসলেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। নিজেই বলছিলেন, এই ঘটনার অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা পাচ্ছেন না তিনি।
ম্যাচশেষে কথা বলতে গিয়ে বলছিলেন, তিনি বরং সকালে অন্য পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে এসেছিলেন। কিন্তু যা ঘটলো, তা আর ব্যাখ্যা করতে পারছেন না, ‘এখনকার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা খুব কঠিন। আমরা ৬০ রানের মতো লিড নিতে পেরেছিলাম। কিন্তু মাঠে এলাম আর ধ্বসে পড়লাম।’
কোহলি বলছিলেন, এই টেস্টটায় তারা বেশ কষ্ট করেই শক্ত অবস্থায় এসেছিলেন। সেখান থেকে এভাবে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়াটা মেনে নিতে পারছে না, ‘দু দিন ধরে কঠোর পরিশ্রম করে নিজেদের শক্ত একটা অবস্থানে নেওয়ার পর আমরা আবার এমন কাজ করলামে, যেখান থেকে ফিরে এসে জয় পাওয়াটা অসম্ভব ব্যাপার। আমি মনে করে আমাদের একটু হলেও দৃঢ়তা দেখানো উচিত ছিল।’
অস্ট্রেলিয়ার বোলিংয়ের প্রশংসা করছেন কোহলি। কিন্তু ছাচাছোলা ভাবে বলে দিলেন, এমন কোনো বিধ্বংসী বোলিং কামিন্সরা করেননি, যাতে ধ্বসে পড়তে হবে। কোহলি বলছিলেন, ‘ওরা প্রথম ইনিংসে যেমন জায়গায় বল করেছিলো, এই ইনিংসেও তাই করেছে। কিন্তু আমাদের মাইন্ডসেটেই সম্ভবত ছিলো যে, বেশী রান করতে হবে। সত্যি কথা বলি, কিছু বল ভালো ছিলো; তাই বলে খুব ধ্বংসাত্মক কোনো বোলিং হয়নি। আমি বরং মনে করি, আমাদের মাইন্ডসেটেই সমস্যা ছিলো। এটা পরিষ্কার বোঝা গেছে।’
নিজেদের মনোভাবের দোষটা বারবারই দিলেন। একবার বললেন, তারা দ্রুত রান করার চেষ্টায় ছিলেন। আরেকবার বললেন, তাদের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, রান করা খুব কঠিন। তবে বারবারই উল্লেখ করলেন, তাঁরা ইতিবাচক ছিলেন না, ‘আমাদের ব্যাটিংয়ে মনে হচ্ছিলো, রান করাটা খুব কঠিন। আর এটা হওয়াতে বোলাররা আরও আত্মবিশ্বাসী আমার মনে হয় পুরো ব্যাপারটা ঘটেছে আমাদের তরফে ইতিবাচকতার অভাব এবং ওদের তরফে দারুন জায়গায় বল ফেলতে পারার সমন্বয়ে।’
শেষ পর্যন্ত আশাবাদী হতে চান ভারতীয় অধিনায়ক। এই ম্যাচ থেকে পাওয়া শিক্ষা নিয়ে বক্সিং ডে টেস্টে ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। বলছিলেন, ‘একটা ভালো ফল পেলে অবশ্যই খুব ভালো হতো। সেটা হয়নি। তবে আমি খুবই নিশ্চিত যে, ছেলেরা এখান থেকে সামনে তাকানোর চেষ্টা করবে। আর তারা সেই কাজই করার চেষ্টা করবে, যাতে বক্সিং ডে টেস্টে আমরা শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসতে পারি।’
ভারত হয়তো এখন ঘুরে দাড়ানোর স্বপ্ন দেখবে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক টিম পেইন বলছিলেন, তারও বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আসলেই ভারত এভাবে ধ্বসে পড়তে পারে। বোলারদের ওপর আস্থা তার সবসময়ই ছিলো। কিন্তু এতো দ্রুত প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেওয়ার স্বপ্ন তিনি দেখেননি, ‘আমি আসলেই কল্পনা করিনি। আমি আজ সকালেই মিডিয়াতে বলছিলাম যে, আমাদের দু দলেরই যে বোলিং আক্রমণভাগ আছে, তারা যে কোনো দলের দ্রুত উইকেট তুলে নিতে পারে। তবে আমি এটা প্রত্যাশা করিনি যে, এমন দ্রুত তারা কাজটা করে ফেলবে। আসলে উইকেটে কিছু থাকলে আমাদের বোলাররা নিজেদের সেরাটা করে দেখাতে পারে। আর এটা ক্রিকেটে হয়েই থাকে।’
তবে এতো কিছুর মধ্যেও পেইনের একটু অসন্তোষ আছে। ব্যাটিং নিয়ে বলছিলেন, ‘আমাদের বোলিং দল যা করেছে, তাতে আমি খুবই খুশী। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের কাছে আরেকটু প্রত্যাশা ছিলো।’