বিরাট কোহলি মানেই আগ্রাসন।
এটা বিশ্বাস করা কঠিন যে, বিরাট কোহলি কাউকে কুর্নিশ করতে পারেন। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, ঘটনা সত্যি। বিরাট কোহলি একবার কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সের ভরা গ্যালারিকে স্বাক্ষী রেখে কুর্নিশ করেছিলেন।
কাকে?
বিরাট কোহলির আইডল, স্বয়ং শচীন টেন্ডুলকারকে।
বিরাট কোহলি এই মুহুর্তে বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। যেকোন ক্রিকেটীয় সংস্করণে তাঁর থেকে ভালো ব্যাটসম্যান কাউকে খুঁজে পাওয়াটা দুষ্কর। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি তিন সংস্করণেই সমানভাবে দূর্দান্ত পারফর্ম করা ক্রিকেটার পাওয়াটা আসলেই বেশ দুষ্কর। আর এই কাজটিই সমানভাবে করে যাচ্ছেন বিরাট কোহলি।
যখন ব্যাটসম্যান কোহলি ব্যাটিংয়ে নামেন তখন বিপক্ষ দলে কে আছেন কিংবা কে বোলিং করছেন সেটা না ভেবেই ভয়ডরহীনভাবে নিজের মত করে ব্যাট করে যান। সবাই ভাবেন শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ড ভাঙ্গার মত একজনই আছেন তিনি হলেন বিরাট কোহলি। সময়ই বলে দেবে তিনি শচীনের রেকর্ড ভেঙ্গে নিজেকে অন্যন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারবেন কিনা। তবে শচীন টেন্ডুলকারের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ কিংবা সন্মানের বিষয়টা সবাই বেশ ভালো ভাবেই জানেন।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে করা অর্ধ শতকের পর শচীনের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধার বিষয়টি বেশ আলোচনায় এসেছে। সম্ভবত একমাত্র শচীন টেন্ডুলকার ছাড়া কারো প্রতিই প্রকাশ্যে এভাবে মাথা নত করেননি বিরাট কোহলি।
বিরাট কোহলির অর্ধ শতকে ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পায় পাকিস্তান। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ৪৯ রানের একটি ইনিংস খেলেন কোহলি।
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে অনুজ্জ্বল ছিলেন বিরাট কোহলি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে অর্ধ শতক করে ম্যাচ জেতান তিনি। বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের অন্যতম কারিগর ছিলেন যুবরাজ সিং।
পাকিস্তানের বিপক্ষে হাফ সেঞ্চুরি করার পর এক ব্যতিক্রমধর্মী উদযাপণ করেন কোহলি। মাথা নত করে কুর্নিশ জানান ক্রিকেট ঈশ্বর শচীন টেন্ডুলকারকে। লং অফ একটি কাভার ড্রাইভ করে নিজের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন বিরাট কোহলি। এই হাফ সেঞ্চুরির পরই বিখ্যাত এই কুর্নিশ করেন তিনি।
বিরাট তাঁর আর্দশকে সন্মান জানান। শচীন স্টেডিয়ামে বসে বিরাটের খেলা দেখছিলেন। শুধু খেলা দেখছিলেনই না বেশ মনযোগ দিয়ে তাঁর উত্তরসূরির খেলা দেখছিলেন। আর খেলা দেখার পাশাপাশি তাঁর গুনগান করছিলেন।
এই ম্যাচ শেষে এক সাক্ষাৎকারে বিরাট কোহলি বলেছিলেন, শচীনকে তার কুর্নিশ করার কারণটা, ‘আমি আমার অনুভূতি বলে বোঝাতে পারবো না। স্ট্যান্ডে আমার ভাই বসেছিলেন। সবচেয়ে বড় কথা, শচীন টেন্ডুলকার নিজে ওখানে বসে খেলা দেখছিলেন। শচীন পাঁজিকে আমি বছরের পর বছর ভারতের জন্য এরকম খেলতে দেখেছি। দেখেছি যে, ওনার জন্য লোকেরা চিৎকার করছে। আজ উনি আমার জন্য চিৎকার করেছেন ওখানে বসে। আমি ওনাকে আনন্দ করার একটা উপলক্ষ এনে দিতে পেরেছি।’
সবসময়ই শচীনের দারুন ভক্ত কোহলি বলছিলেন, শচীনকে খুশী করার চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হয় না, ‘আমি ক্রিকেট খেলাটা একজন তরুন হিসেবে ভালোবেসেছি ওনার জন্য। ওনার সামনে দাড়িয়ে আমি কিছু একটা করেছি যাতে উনি খুশী হয়েছেন। ওনাকে খুশী করতে পারাটা আমার জীবনের বড় একটা প্রাপ্তি। আমি ওনার কাছে কৃতজ্ঞ আর এটা আমার জন্য খুব আবেগের একটা ব্যাপার।’
কোহলির শচীনের প্রতি এই ভালোবাসা এই প্রথম প্রকাশ পায়নি অবশ্য। ২০১১ বিশ্বকাপ জয়ের পর কোহলি এই টেন্ডুলকারকে কাঁধে নিয়ে মাঠ প্রদক্ষিন করেছিলেন। তকণ বলেছিলেন, ‘এই মানুষটা ২১ বছর ধরে ভারতের এক শ কোটি মানুষের ভার নিজের কাঁধে বহন করেছেন। আজ তাকে কাঁধে নেওয়াটা আমাদের দায়িত্ব।’