বিরাট কোহলি নামটা শুনলেই এক ভয়ংকর বিধ্বংসী ব্যাটারের প্রতিচ্ছবিই ভেসে ওঠে। এই বোধহয় তেড়ে আসবেন, আগ্রাসী ভাবে কিছু বলবেন প্রতিপক্ষ বা আম্পায়ারকে। কোন ভুল হলে যিনি চড়া এক হাত নিতে দ্বিধা বোধ করেন না।
মাঠের বাঘ কোহলিকে দেখে অনেকেই হয়ত ভাবেন, ব্যক্তিজীবনেও তিনি আগ্রাসী। অহংকার কিংবা দেমাগ দিয়েই হয়ত আপাদমস্তক ঘেরা এই খেলোয়াড়ের। তিনি হয়ত কাছে গেলে ঝাড়ি দিয়ে বলবেন কিছু একটা।
কিন্তু ওই যে ইংরেজি প্রবাদ আছে না! ‘ডোন্ট জাজ এ বুক বাই ইটস কাভার’, এটা যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যায় বিরাটের সাথে। বিরাট কোহলির মনটা যেন তার নাম ও কীর্তির মতই ‘বিরাট’।
ছোটবেলায় বাবাকে হারানো বিরাট বেশ সংগ্রাম করেই বেড়ে উঠে আজ সাফল্যর এই চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছেন। সেই জন্যই হয়ত সুবিধাবঞ্চিতদের জন্য বড্ড কাঁদে তার মন। তাই তো বহু সামাজিক উন্নয়নে অসমান্য অবদান রাখতে দেখা যায় তাকে।
২০১৩ সালে ‘আন্ডার প্রিভিলিজেড’ বাচ্চাদের সাথে দেখা করতে গিয়ে কোহলি দেখেন, তাদের অনেকেই সাধারণ পুষ্টিকর খাবারগুলো থেকেও বঞ্চিত। সেখান থেকেই তাদের সাহায্য করতে গড়ে তোলেন ‘বিরাট কোহলি ফাউন্ডেশন’। যার সাহায্যে ৬মাস থেকে ৬ বছর বয়সী ৫০০০ হাজার অপুষ্টিকর বাচ্চাকে সঠিক নিউট্রশন সম্পন্ন খাবার দিয়েছেন।
এছাড়াও একজন ‘ফিটেস্ট’ খেলোয়াড় হিসেবে কোহলি অনেক তরুণ ক্রীড়াবিদের ও পর্যাপ্ত পুষ্টি সম্পন্ন খাবার, যথেষ্ট নিউট্রশনাল প্লান, ট্রেনিংয়ে যাতায়াতের খরচ ও বহন করেন তার ফাউন্ডেশন থেকে।
কোহলি শুধু ভারত না, পুরো বিশ্বের ‘ইয়ুথ আইকন’। সেই জন্যই তো ইউনাইটেড নেশনস অরগানাইজেশান (ইউএনও) এর ‘এভ্রি চাইল্ড এলাইভ’ ক্যাপাইনেও কাজ করেছেন কোহলি। যার মাধ্যমে কমেছে শিশুমৃত্যুর হার, বেড়েছে মায়েদের স্বাস্থ্যসুরক্ষা। ইউনাইটেড নেশনস চিলড্রেন্স ইমারজেন্সি ফান্ড (ইউনিসেফ) এর হয়েও কাজ করেছেন তিনি।
পরিবেশ সংরক্ষণে, কোহলি বিদ্যুৎ সংকটে থাকা গ্রামীণ শিশুদের জন্য সোলার ল্যাম্প সরবরাহ করেছেন, যা তাদের দূষণমুক্ত পরিবেশে পড়াশোনার সুযোগ তৈরি করে।
প্রাণী কল্যাণেও তার উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়। রাস্তার প্রাণীদের জন্য তিনি আশ্রয়স্থল এবং পর্যাপ্ত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে তিনি কেবল মানবকল্যাণেই সীমাবদ্ধ নন, বরং প্রাণীদের প্রতিও তার গভীর সহানুভূতি রয়েছে। সমাজে অবহেলিত প্রাণীদের প্রতি তার এই সহানুভূতি বিরল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
সবমিলিয়ে, কোহলির এই দাতব্য উদ্যোগগুলো মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। সমাজের প্রতি তার এই সহানুভূতি ও অবদান তাকে কেবল একজন ক্রীড়াবিদ হিসেবেই নয়, বরং এক মহান মানবিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।
মাঠে আগ্রাসী, কিন্তু জীবনে নম্র ও সহানুভূতিশীল– বিরাট কোহলি আমাদের শেখান কিভাবে জিততে হয়, শুধু খেলার মাঠেই নয়, জীবনেও!