আব্দুল সামাদ, শেষ বলের নায়ক

জম্মু-কাশ্মীর থেকে উঠে আসা সেরা প্রতিভা ভাবা হয় তাঁকে। আইপিএলের মঞ্চে তিন মৌসুম কেটে গেলেও এখনো নিজের সেরাটা দেখাতে পারেননি আব্দুল সামাদ। তবে রাজস্থান রয়্যালসের বিপক্ষে শেষ বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে নাটকীয় এক জয় এনে দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন বিশ্বসেরা ফিনিশার হওয়ার সকল গুণাবলীই আছে তাঁর মাঝে। 

বাবা মোহাম্মদ ফারুকের স্বপ্ন ছিল জম্মু-কাশ্মীর এবং ভারতের জার্সি গায়ে জড়ানোর। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে নাম লেখানো হয়নি তাঁর। নিজের স্বপ্নটা তাই পূরণ করতে চেয়েছেন ছেলে সামাদকে দিয়ে। ছোটবেলা থেকে ছেলেকে উৎসাহ দিয়ে গেছেন সমানতালে। সামাদও বাবার স্বপ্নকে মিলিয়ে নিয়েছেন নিজের স্বপ্নের সাথে। 

ভারতের সাবেক তারকা ইরফান পাঠানের অধীনেই পেশাদার ক্রিকেটের প্রথম পাঠ নেয়া সামাদের। মারকুটে ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কার্যকরী লেগস্পিনের সুবাদে নজর কাড়তে দেরি হয়নি এই তরুণের। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচেই খেলেছিলেন ৫১ বলে ৭৬ রানের ম্যাচজয়ী এক ইনিংস। 

আকারে ছোটখাটো গড়নের হলেও ঘরোয়া ক্রিকেটে সামাদের সুখ্যাতি আছে ছক্কা হাঁকানোর। সামাদের সবচেয়ে বড় গুণ ব্যাটিং অর্ডারের যেকোনো পজিশনে খেলতে জানেন। ওপেনার কিংবা ফিনিশার, যখন যে রোলেই সুযোগ মিলেছে সামাদ নিজের সেরাটা ঢেলে দিয়েছেন। এছাড়া মাঝের ওভারগুলোতে তাঁর লেগস্পিনেও ভরসা খুঁজেছে জম্মু-কাশ্মীর। 

২০২০ আইপিএলে ২০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ। কিন্তু আইপিএলের মঞ্চে এসেই যেন অথৈ সাগরে পড়েন এই তরুণ। খাপছাড়াভাবে কিছু পারফরম্যান্স উপহার দিলেও কোনো ধারাবাহিকতা ছিল না তাঁর ব্যাটিংয়ে। বড় বড় সব ছক্কা হাঁকালেও ম্যাচ জেতানো কোনো ইনিংস উপহার দিতে পারছিলেন না সামাদ। সবাই তাই ধরেই নিয়েছিলেন সামাদ বোধহয় সর্বোচ্চ পর্যায়ের জন্য যোগ্য নন। 

তবে আস্থা রেখেছিল হায়দ্রাবাদ টিম ম্যানেজমেন্ট। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ২০২২ নিলামের আগে চার কোটি রুপির বড় অংকের বিনিময়ে সামাদকে ধরে রাখে দলটি। কিন্তু গত মৌসুমেও এই তরুণ ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। এবারের মৌসুমে ব্যাটিংয়ে খানিকটা উন্নতি হলেও কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে যেন ভজকট পাকিয়ে ফেলেন এই তরুণ। বরুণ চক্রবর্তীর শেষ ওভারে নয় রান তুলতে না পেরে সমর্থকদের রোষানলে পড়েন। 

তবে এক ম্যাচ পেরোতেই ফিনিক্স পাখির ন্যায় ঘুরে দাঁড়ানোর রূপকথার কে গল্প লিখলেন সামাদ। রাজস্থানের বিপক্ষে ম্যাচ জিততে শেষ বলে পাঁচ রান প্রয়োজন ছিল হায়দ্রাবাদের। কিন্তু সন্দ্বীপ শর্মার বলে লং অফে ক্যাচ তুলে দেন সামাদ। সবাই ভেবেছিল এবারো তীরে এসে তরী ডোবালেন এই তরুণ!

কিন্তু ভাগ্যবিধাতা সহায় ছিলেন সামাদের। আম্পায়ার নো বল ডাকেন, এবারে আর সুযোগটা হেলায় হারাননি তিনি। ফ্রি হিটে বলকে পাঠিয়ে দেন সীমানার ওপারে। মুহূর্তের মধ্যেই বনে যান জিরো থেকে হিরো! তাঁর ৭ বলে ১৭ রানের ছোট্ট ক্যামিওতে টিকে রইলো হায়দ্রাবাদের শেষ চারে উঠার স্বপ্ন। 

বাবার স্বপ্নের প্রথম ধাপটা এর মাঝেই পূরণ করেছেন সামাদ। এবারে ফর্মটা ধরে রেখে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়ানোর অপেক্ষা এই তরুণের। তবেই না পূর্ণতা পাবে মোহাম্মদ ফারুকের আজন্ম লালিত স্বপ্ন। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link