এভাবেও জীবন পাল্টে যায়!

মুম্বাইয়ের মেরিন ড্রাইভ দিয়ে যখনি যেতেন পাশের বিলাসবহুল পাঁচ তারকা হোটেলগুলোর দিকে তাকিয়ে ৫৭ বছর বয়সী মাঠকর্মী বসন্ত মোহিত ভাবতেন, ‘এখানে থাকতে পারলে কেমন লাগতো।’

মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের এই মাঠকর্মী স্বপ্ন অবশেষে সত্যি হল। কনফেকশনারী প্রতিষ্ঠান ‘ক্যাডবারি’ সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) মাঠকর্মীদেরকে রাখা হবে পাঁচতারকা হোটেলে।

বিখ্যাত ডিজাইনার মাসাবার ডিজাইনকৃত বিশেষ কাপড়ও দেওয়া হচ্ছে তাদের। খাবার থেকে শুরু করে মাঠে যাওয়া আসার জন্য দেওয়া হয়েছে বাসও।

বসন্তের কাছে এ যেন কোনো জাদুর চেয়ে কম নয়! আসরের আগেই গুঞ্জন ছিল মাঠকর্মীদের রাখা হবে পাঁচতারকা হোটেলে। অবশ্য এ কথায় বিশ্বাস করতে পারেননি বসন্ত। তিনি বলেন, ‘একদিন মুম্বাই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে বলা হল ক্যাডবারিতে আমাদের থাকার ব্যবস্থা করবে। তারা আমাদের পোশাক থেকে শুরু করে পরবর্তীতে দুইমাস খাবারের দায়িত্ব নিচ্ছে।’

আগের আসর গুলোতে রাতের ম্যাচ শেষে বাড়ি ফেরার মত সময় কিংবা সুযোগ থাকতো না মাঠকর্মীদের। যার কারণে স্টেডিয়ামেই কোনো এক স্ট্যান্ডের ছোটরুমে একসাথে অনেকেই গাদাগাদি করে কষ্ট করে থাকতে হত। বসন্ত সেই কথা মনে করে বলেন মশার কারণে ঠিকভাবে ঘুমানো সম্ভব হত না।

তিনি বলেন, ‘মশা আমাদের পাগল করে দিত। ম্যাচের পর আমরা কোথাও যেতে পারতাম না কারণ ট্রেন সার্ভিস বন্ধ হয়ে যেত। তাই আমাদেরকে মাঠের অফিসেই কোনোরকমে সবাইকে থাকতে হত। কোনো ম্যাচ না থাকলে আমরা সকাল ৯ টায় মাঠে যেয়ে ৬ টায় বের হয়ে যাই। কিন্তু ম্যাচের দিন আমরা আরও সকালে আসি এবং আমরা রাত পর্যন্ত কাজ করলে দ্বিগুন অর্থ পেতাম।’

নতুন রুমে বেশ ভালোই আছেন বসন্ত। যদিও লাইটের স্যুইচ অন-অফে কিছুটা ঝামেলা পোহাতে হয়। যার কারণে লাইট বন্ধই রাখেন তিনি। নরম ফোমের বিছানায় বেশ আরামেই ঘুম হয় একটা সময় মশার কামড়ে স্টেডিয়ামে রাত কাটানো বসন্ত ও তাঁর দলের।

বসন্ত বলেন, ‘এখন রুমটা খুব আলাদা। আমাদের নিজস্ব বাস আছে, আমাদেরকে নামিয়ে দেয়। আমাদের কিছু বলার মত শব্দ নেই… শুধু এটাই বলবো অনেক ধন্যবাদ।’

দু’বছর আগে সাবেক ভারতীয় তারকা মোহাম্মদ কাইফ আলিঙ্গন করেছিলেন বসন্তকে। সেই ঘটনা মনে করে তিনি বলেন, ‘অনূর্ধ্ব ১৯ দলে থাকা অবস্থা থেকেই উনি আমাদেরকে সাহায্য করেন।’

যদিও বসন্ত মনে করেন তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে সেই মানসিকতা নেই। তবে তিনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন শচীনের ক্যারিয়ারে বেড়ে উঠা, সুনীল গাভাস্কার থেকে পৃথ্বী শ সবার খেলাই চোখের সামনে দেখেছেন বসন্ত। দেখেছেন অমল মুজুমদারকেও।

তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি অমল মুজুমদারের খেলার প্রতি কতটা ভালবাসা ছিল। সে আউট হয়ে গেলে বিষন্ন মনে বসে থাকতো।’

তবে যখনি কাউকে হতাশ হতে দেখতেন তখনি অন্য রুমে চলে যেতেন বসন্ত। তিনি বলেন, ‘খেলোয়াড়দের নিজস্ব সময় লাগে। আমি খেলোয়াড়দের রাগ, খুশি উভয়ই দেখেছি। আমি দেখেছি কিভাবে টেন্ডুলকার কেঁদেছিল যখন সে অবসর নেয়। আমিও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। দুই দিন আমি খুব দু:খভারাক্রান্ত মনে ছিলাম।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link