টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পুরো দলই ব্যর্থ ছিল। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানরা টি-টোয়েন্টি সুলভ ব্যাটিংটা করতে পারেননি। তবে পুরো দায়টা যেন এসে পড়লো তাঁর কাঁধেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের পরিকল্পনা থেকে তাঁকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়ার ঘোষণাও আসলো। তবে সেই পরিকল্পনার জালে লিটন দাসকে আঁটকে রাখা গেল না। লিটন সব ভেঙে চুড়ে নতুন করে পরিকল্পনা সাজালেন।
মাস তিনেক আগেও তাঁকে নিয়ে সমালোচনার শেষ ছিল না। বিশেষ করে রঙিন পোশাকের ক্রিকেটে। তবে লিটন নিজের আত্মবিশ্বাসটা খুঁজে পেয়েছেন মূলত টেস্ট ক্রিকেট থেকেই। ঘরের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে কিংবা নিউজিল্যান্ডে মাটিতে গিয়ে দারুণ সব ইনিংস খেলেছেন। তাতে টেস্ট ক্রিকেটে লিটনের ক্লাস আরেকবার দেখেছে বিশ্ব। তবে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তাঁর উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তো আর উঠে যায় না।
লিটন এবার সেটাও ভাঙতে শুরু করলেন। বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে ফিরেই দেখালেন রঙিন পোশাকেও লিটন একইরকম রঙিন। বিপিএলে দারুণ সময় কাটানোর পরেও একটা শঙ্কা হয়তো ছিল। আসলেই টি-টোয়েন্টি তে ফিরে আসতে পারবেন তিনি? তবে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে তাঁর দিকে ছুটে আসা সব প্রশ্নকে সপাটে মেরেছেন।
কিছুদিন আগেও যেই ব্যাটসম্যানকে পরিকল্পনায় রাখা যাচ্ছিল না, সেই লিটনকে ছাড়া পরিকল্পনা সাজানোর সাহস এবার আর বাংলাদেশ দেখাতে পারলো না। তিন নম্বর পজিশনে লিটনকে রেখেই ব্যাটিং আক্রমণ সাজালো বাংলাদেশ। স্থায়ীভাবে বাদ পড়ে যাওয়া লিটনের জন্য এটা এক নতুন শুরুই বলা যায়। হয়তো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে লিটনের নতুন করে অভিষেকও বলা যায়।
নতুন লিটন হোক কিংবা পুরনো, তাঁর ব্যাটিংয়ে দেখা গেল সেই আগের রোমাঞ্চ, স্নিগ্ধতা। লিটন সেই চিরচেনা শিল্পী, লিটন সেই বসন্তের ফোঁটা ফুল। লিটনের ব্যাটিং সৌন্দর্য নিয়ে কথা বলেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া দায়। তাঁর এই ব্যাটিং নিয়ে কাব্যও হয়েছে অনেক। তবে আজ লিটনের দায়িত্ব ছিল আরো অনেক বড়।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আফগানিস্তান বাংলাদেশের জন্য কঠিন প্রতিপক্ষই। রশিদ খান, মুজিবুর রহমানদের বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে জয় তুলে নেয়াটাও বিশাল এক চ্যালেঞ্জ। মিরপুরে খেলা ফিরতেই তাই বাংলাদেশকে চেপে ধরেছিল আফগান জুজু। তবে লিটন এসবের ধাঁর ধারলেন না। আফগান বোলিং লাইন আপকে সপাটে মারলেন সীমানার এপার-ওপারে।
দুই ওপেনারই যখন পাওয়ার প্লেতে বিদায় নেয় তখন দলের হাল ধরলেন তিনি। এরপর ধীরে ধীরে লিটনের ব্যাট হয়ে উঠলো তরবারি। দূর থেকে হয়তো পরিকল্পনা একবার উঁকি দিচ্ছিল। তবে লিটনের সামনে আসার সাহস পায়নি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের পরিকল্পনাটা নতুন করে লিখছিলেন লিটন। ৪৪ বলে ৬০ রানের ইনিংস, ১৩৬.৩৬ স্ট্রাইকরেটে। দুই ছয় ও চার চারে সাজনো।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে খুব বড় কোন ঘটনা না। এমন ইনিংস হরহামেশাই দেখা যায়। তবে আমাদের জন্য এই ইনিংস বিশেষ কিছুই। মিরপুরের উইকেটে এই ইনিংসই মহাকাব্য। আফগানিস্তানের স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে এই ইনিংসই বাংলাদেশকে ১৫০ রানের সংগ্রহ এনে দেয়। এই ইনিংসই জানান দেয় এই ফরম্যাটটায় তরুণদের উঠে আসা জরুরি।
এছাড় টেস্ট, ওয়ানডেতে যতই রানে থাকুক লিটন। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটায় তিনি বরাবরই একটু ভুগেন। ফলে ভয় একটা ছিল। আবার রানের জোয়ারে থাকা লিটনকে ছাড়াও কিছু ভাবা যাচ্ছিল না। লিটন প্রমাণ করলেন তিনি সত্যিই ফিরে এসেছেন। তিন ফরম্যাটেই তিনি বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান হতে এসেছেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটকে আরেক ধাপ উপরে তো এই লিটনরাই নিয়ে যাবেন।