আয় তবে সহচরী

সকাল সকাল টপ অর্ডারের ব্যাটসম্যানরা এই উইকেটটাকেই রীতিমত নরক বানিয়ে ফেলেছিলেন। মাত্র ২৪ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ তখন দিশেহারা। যেন আরেকটি লজ্জা পাওয়ার অপেক্ষা। তবে ম্যাচের এমন কঠিন পরিস্থিতি, এত চাপ যেন তিনি গাঁয়েই মাখলেন না। কয়েকমাস আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে লিটনের বলা একটা কথা মনে পড়ে গেল, ‘গুড টাচে থাকাটাই ম্যাটার করে।’

হ্যাঁ, লিটন গুড টাচে আছেন। আর সেটা এতটাই ভালো যে তুলনাটা এখন বিশ্বসেরাদের সাথে হচ্ছে। শুধু বলার জন্য বলা নয়। গত এক বছরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যানদের একজন লিটন দাস। সেটা আবার শুধু যেকোন একটা ফরম্যাটে না। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই এখন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপের বড় ভরসা তিনি।

ব্যাট হাতে লিটনের সৌন্দর্য গাঁথা হয়েছে বহুবার। যখন তিনি এমন দুর্দান্ত ফর্মে ছিলেন না তখনো ক্রিকেট বোদ্ধারা তাঁকে শিল্পির আখ্যা দিয়েছেন। ব্যাট হাতে লিটনের প্রতিটা ইনিংসই তো আসলে একেকটা শিল্পকর্ম। আর এখন তো সেই শিল্পগুলো লিটন প্রায় রোজই দেখাচ্ছেন। ব্যাট হাতে তাঁর নামা মানেই যেন বাইশ গজে আরেকটা ফুল ফোঁটা।

কোথায়, কাদের বিপক্ষে রান করছেন না তিনি। এই সময়ে যেমন খেলেছেন নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশনে। আবার খেলেছেন চট্টগ্রাম কিংবা মিরপুরেও। সবজায়গাতেই ওই একটাই নাম, একটাই ফুল, লিটন দাস। তাঁকে থামানোই যেন এখন ক্রিকেটের সবচেয়ে দুর্ভেদ্য রহস্য।

আজ যেমন ২৪ রানে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর চাপেই পড়েছিল বাংলাদেশ। লিটন ব্যাট হাতে নামলেন, নিজের কাজটা করে দিলেন। যেই লংকান পেসাররা আগ্রাসী হয়ে উঠেছিল তারাই যেন লিটনের সামনে লেন্থ খুজে পাচ্ছেন না। বাংলাদেশকে সেই অবস্থা থেকে তুলে আনলেন, লড়াই করলেন।

লিটনের এই লড়াইয়ে পাশে ছিলেন মুশফিকুর রহিম। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক তিনি। এই সিরিজের আগে ব্যাট হাতে খুব একটা ভালো সময় পার করছিলেন না। তবে চট্টগ্রাম টেস্টের পর আজ মিরপুরেও আরেকবার নিজেকে প্রমাণ করলেন। সংবাদ সম্মেলনে আবেগটা ধরে রাখতে পারলেও, বাইশ গজে পেরেছেন। লিটনের সাথে শক্ত হাতে হাল ধরেছেন।

নিজে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। লিটনকে নিজের মত খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন। ক্যারিয়ারের এই সময়ে এসে মুশফিকের মত ব্যাটসম্যানের কাছে ঠিক এটাই তো আশা করে বাংলাদেশ। দুজনে মিলে গড়লেন বিশাল এক জুটি। এই দুইজন অবশ্য এই নিয়ে চতুর্থবারের মত করলেন শতরানের জুটি। এছাড়া ২৫ রানের নিচে পাঁচ উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জুটিও এটিই।

মুশফিক তাঁর দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তামিম, সাকিবদের সাথে বিশাল বিশাল সব জুটি করেছেন। তবে ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় এসে লিটনের সাথে তাঁর রসায়নটাও বেশ জমে উঠেছে। এই জুটি গত দশ ইনিংসের চারটাকেই শতরানে রূপ দিয়েছেন। এরমধ্যে একটি আবার দুইশো রানের জুটিও আছে। সবমিলিয়ে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে এই দুজন এখন বাংলাদেশের সেরা জুটি।

লিটন অবশ্য চট্টগ্রাম টেস্টেও অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন। তবে সেদিন ইনিংসটাকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারেননি। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে এমন অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা লিটনকে আজ সাতে ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ। তাতে অবশ্য লিটনের তরবারি থামেনি। আজ আর কোন আক্ষেপ রাখেননি। তুলে নিলেন আরেকটি টেস্ট সেঞ্চুরি। ওদিকে লিটন-মুশির জুটিও ছুটছে। যেন তারুন্যের মশাল আর অভিজ্ঞতার ঝুলি মিলেমিশে একাকার। এই জুটি ছুটতে থাকুক।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link