লিটন দৃষ্টিনন্দন, লিটন দৃষ্টিকটু

ব্যাটের সাথে বলের দূর্দান্ত সংযোগ। দূর্বার গতিতে বল ছুটে গেল কাভার অঞ্চল দিয়ে। একেবারে টপনচ শট বলতে যা বোঝায় আরকি। সেই শুরুটাই পেয়েছিলেন লিটন দাস। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের আত্মবিশ্বাসটা নিয়েই যেন তিনি শুরু করলেন। তবে সেই আত্মবিশ্বাসটা যেন মুহূর্তের মধ্যেই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।

কলকাতা নাইট রাইডার্স দলে এবার খেলার কথা ছিল দুইজন বাংলাদেশি ক্রিকেটারের। সাকিব আল হাসান নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তাতে রাজ্যের শত আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু লিটন কুমার দাস। ডান-হাতি এই ব্যাটার রয়েছেন নিজের ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে ঠিক কেমন করেন লিটন, সেটাই যেন দেখার অপেক্ষা। প্রথমত এনওসি জটিলতায় খানিকটা দেরিতে পৌঁছালেন। এরপর দলের কম্বিনেশন ভাঙ্গতে নারাজ কলকাতা ম্যানেজমেন্ট। তাইতো বেশ কয়েকটি ম্যাচ ডাগআউটে বসেই দেখতে হল লিটনকে। বাংলাদেশি দর্শক-সমর্থকদের অপেক্ষার প্রহর যেন আরও দীর্ঘায়িত হল। সাথে লিটনেরও।

অবশেষে নিজেদের ষষ্ঠ ম্যাচে নাইট রাইডার্স একাদশে লিটন দাস। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচ যেন উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে রাখার পূর্ণ পরীক্ষাই নিয়ে নিলো। টসের আগে অবধি জানা যায় না একাদশটা কেমন হবে। তবে আন্দাজ করে নেওয়া গেছে লিটনের অন্তর্ভুক্তি। শেষমেশ হয়েছেও তাই। টসে হেরে ব্যাটে কলকাতা নাইট রাইডার্স।

দিল্লি ক্যাপিটালসও খুব ভাল অবস্থানে নেই। তাইতো তারাও এদিন বেশকিছু পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। মুস্তাফিজুর রহমান হারান নিজের জায়গা। এদিন অভিজ্ঞ ঈশান্ত শর্মাকে দিয়ে বোলিং ইনিংস শুরু করে দিল্লী ক্যাপিটালস। কাভারের ঢাকা পিচে শুরুর দিকে বলের মুভমেন্ট কাজে লাগিয়েছেন ঈশান্ত। তবে লিটন তখনও নন স্ট্রাইক প্রান্তে।

ম্যাচের চতুর্থ বলে লিটন কুমার দাস স্ট্রাইকে। আইপিএলের প্রথম বল খেলছেন লিটন। স্বাভাবিকভাবেই স্নায়ুচাপ থাকার কথা আকাশ সমান। অন্যদিকে ঈশান্তের মত অভিজ্ঞ বোলার বলে মুভমেন্ট পাচ্ছেন। এমন একজনের বিপক্ষে নতুন এক ক্যারিয়ার শুরু করা নিঃসন্দেহে চাপের। কিন্তু সব চাপ এক লহমায় যেন উড়িয়ে দিলেন লিটন। নান্দনিক এক শটে শুরু লিটনের।

খানিকটা ফুলার লেন্থের বল। লিটনের সামনের পা চলে গেল বলের উপর। চোখ যেন ঈগলের। ব্যাটের একেবের সুইট স্পটে গিয়ে বলের আঘাত। বিদ্যুৎ গতিতে বল ছুয়ে ফেলল সীমানা দড়ি। ‘লিটন স্টার্টেড ইন স্টাইল’। দৃষ্টিনন্দন এক শটে শুরু লিটনের। সবাই ভাবতেই পারে দিনটি হবে তার। কিন্তু হয়েছে উল্টোটা। এমন দিন নির্দ্বিধায় ভুলে যেতে চাইবেন লিটন।

পরের ওভারে সঙ্গী জেসন রয় প্রতিপক্ষ বোলার মুকেশ কুমারকে দু’খানা বাউন্ডারি হাকালেন। ওভারের প্রয়োজনীয় রান তখন এসে গেছে। তবুও শট বল ধেয়ে আসতে দেখে নিজেকে আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না লিটন। অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বলকে পুল করে পাঠাতে চাইলেন ডিপ মিড-উইকেট অঞ্চল দিয়ে সীমানার বাইরে।

কিন্তু প্রথম শটটা যতটা আনন্দ দেয়, তার আউট হওয়া শটটা ঠিক ততটা বিষাদের সঞ্চার ঘটায়। নিয়ন্ত্রণহীন এক শটে ব্যাটের কানায় লেগে ক্যাচ ওঠে স্কোয়ার লেগ অঞ্চলে। একেবারে অতি সাধারণ এক ক্যাচ লুফে নিতে বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয়নি ললিত যাদবের। চার বলে চার রান করে লিটনের বিদায়। বেশ দৃষ্টিকটু!

হয়ত এখনই লিটনের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলবে না কলকাতা নাইট রাইডার্স। দিনটি তো ব্যাটারদের বড্ড বাজে কেটেছে। তবুও লিটনের আউটটি বেশ চোখে লাগার মত। অন্তত লিটন নিজের উইকেট এমন বিলিয়ে দেবেন না। বহু অপেক্ষার পর পাওয়া এই সুযোগটুকু হেলায় নিশ্চয়ই হারাতে চাইবেন না তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link