শুরুতেই সেই ট্রেডমার্ক চোখ ধাঁধানো কাভার ড্রাইভ। একটু ভরসা জোগানো যে তিনি খেলবেন বড় ইনিংস। এমন সব দৃষ্টিনন্দন শটের পসরা সাজিয়ে বসবেন তিনি। তবে কিছুদূর এগোতেই ছন্দছাড়া। উইকেট বিলিয়ে দেওয়া। বোলারদের নিতান্ত এক সাদামাটা বলে নিজের উইকেট হারানো। এসবই লিটন দাসের এই বছর জুড়ে চলা চিত্র।
অথচ বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে তিনি গুরুত্বপূর্ণ এক জায়গাই দখল করে আছেন। তার উপর বাড়তি আস্থা থাকে দলের অধিনায়কদের। কিন্তু সেই আস্থার প্রতিদান যেন দিতেই পারছেন না লিটন দাস। কিন্তু ঠিক আগের বছরটাই কি দুর্দান্ত কাটিয়েছিলেন তিনি!
ওয়ানডেতে ৫৭৭ রান করেছিলেন ৫২.৪২ গড়ে ২০২২ সালে। তবে বছর ঘুরতেই নিজের ছায়ায় রুপান্তরিত হয়েছেন তিনি। এই বছর তার গড় নেমে দাঁড়িয়েছে ২৫ এর ঘরে। তিনি অবশ্য এর আগে আফগানিস্তান সিরিজে বলেছেন তিনি এসব নিয়ে চিন্তিত নন। ২৫-৩০ গড় খারাপ না।
তবে নিজের এই খারাপ সময়টা দীর্ঘায়িত হচ্ছে বলেই খানিক দুশ্চিন্তা ভর করেছে তার মস্তিষ্কে। তাইতো নিজের ভুল খোঁজার চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে এসে তেমনটিই জানিয়েছেন লিটন।
তিনি বলেন, ‘দেখেন আমি চেষ্টা করতেছি, প্রতিনিয়ত প্র্যাকটিস করার। হোপফুল তাড়াতাড়ি ক্যামব্যাক করব।’ দ্রুতই স্বরুপে ফেরা চেষ্টা করবেন বলেই প্রত্যাশা তার। তার ফেরাটাও বেশ জরুরি। কেননা সামনেই তো ওয়ানডে বিশ্বকাপ।
দলের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়দের তাই দেওয়া হয়েছে বিশ্রাম। তবে অফ ফর্মের গ্যাড়াকলে আটক লিটনকে দেওয়া হয়েছে ম্যাচ খেলার সুযোগ। সেটা নিশ্চিতভাবেই তার নিজেকে ফিরে পাওয়ার সুযোগ। তবে তার উপর বাড়তি দায়িত্বও অর্পণ করা হয়েছে।
যেহেতু দলের নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান থাকছেন বিশ্রামে, তাই লিটনকেই সামলাতে হচ্ছে অধিনায়কের দায়িত্বভার। অধিনায়ক হিসেবে অবশ্য খুব একটা খারাপ করেননি লিটন। এখন পর্যন্ত পাঁচ ওয়ানডে ম্যাচে তিনি বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সফলতার হার সেখানে বেশি। তাইতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সফলতাই প্রত্যাশিত।
এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখেন অ্যাচিভমেন্টের তো অনেক কিছু আছে। আমরা যখন মাঠে নামব, তখন ফার্স্ট জিনিস হলো জেতার জন্য মাঠে নামব। এটা হচ্ছে বড় একটা অ্যাচিভমেন্ট। আপনি দেশের হয়ে ম্যাচ জিতবেন এটাই সবচেয়ে বড় জিনিস। আর অবভিয়াসলি যেসব প্লেয়াররা আছে এখানে ওয়ার্ল্ড কাপের জন্য প্রিপারেশন চলতেছে। তো দেখা যাক কি হয়।’
বিশ্বকাপ দলে নিশ্চিত হয়ে যাওয়া খেলোয়াড়রা থাকছেন না এই সিরিজে। স্বাভাবিকভাবেই ব্যাকআপ খেলোয়াড়দের যাচাইয়ের একটা বড় সুযোগ এটি।
তেমনটিই মনে করেন লিটন, ‘এখানে স্বাভাবিক বিষয় আমরা টিমে যে কয় আছে, তাদের মধ্যে কন্টিনিউ ম্যাচ খেলেছে হৃদয় একমাত্র। আমিও খুব একটা কন্টিনিউ খেলি নি। মাঝখানে দুইটা ম্যাচ অসুস্থ ছিলাম। যেসব প্লেয়াররা খেলবে, তারা অনেক দিন ধরেই ইন্টারন্যাশন্যাল ক্রিকেটের বাইরে। নাসুম ও শেখ মেহেদিও খেলেছে কিছুদিন আগে। স্টিল এটা একটা সুযোগ। যেহেতু সামনে ওয়ার্ল্ড কাপ। সবারই দেখার একটা সুযোগ। সবার জন্য অপরচুনিটি আছে।’
লিটনের কাঁধে এখন দায়িত্ব, বিশ্বকাপ দলের জন্য বিবেচনায় থাকা খেলোয়াড়দের ভেতর থেকে তাদের সেরাটা বের করে নিয়ে আসা। পাশাপাশি, নিজেকেও ফিরে পেতে বড্ড মরিয়া ডান হাতি এই ব্যাটার। নিজের সেই বিধ্বংসী রুপে ফেরার এর থেকে ভাল সুযোগ সম্ভবত আর হয় না।
বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে ঘরের মাঠে সিরিজ। চেনা মাঠে আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার উত্তম পরিবেশ। লিটন নিশ্চিতভাবেই এই সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। তাছাড়া ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সফলতার ধারাতেও ব্যঘাত ঘটাতে চাইবেন না লিটন কুমার দাস।