লিটন-শান্তর নান্দনিক যুগলবন্দী

মধ্যাহ্ন পেরিয়েছে ততক্ষণে। অলস দুপুরের আলসেমিতা কেটে প্রকৃতি তখন বিকেলের মিষ্টি রোদ মেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশের ইনিংস তখনও এগিয়ে যাচ্ছে অলস দুপুরের মতোই, মন্থর গতিতে।

পাওয়ার প্লে তে কোনো মতে ৪ রানরেট রেখে ৪২। এর মধ্যে আবার রান আউটে কাটা পড়ে সাজঘরে ফিরেছেন তামিম ইকবাল। বিপদ ঘটেনি, তবে আগের ম্যাচে ৩৩৮ রান পাহাড়ে ওঠা বাংলাদেশ তখন যেন একটা স্থবিরতায় আটকা পড়েছে। তবে দলের এমন মন্থরতম চিত্রের পরিবর্তন ঘটানোর লক্ষ্যে হাঁটলেন ওপেনার লিটন দাস আর তিনে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত।

দুজনের শত রানের জুটিতে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড এক লাফে পাল্টে যায়। ৪ রান করে এগুতে থাকা বাংলাদেশের রান তোলার গতি তখন প্রায় ৬ ছুঁইছুঁই। আর তাতে লিটন, শান্ত’র যুগলবন্দীতে আরো একটা বড় সংগ্রহের পথ খুঁজে পায় বাংলাদেশ।

কিন্তু দলকে এগিয়ে দিলেও দুজনেই কিছুটা আক্ষেপেরও জন্ম দিয়েছেন। আক্ষেপটা সেঞ্চুরির পথে হেঁটেও তা থেকে বঞ্চিত থাকা। দুজনই ধরা দিয়েছেন ৭০ এর ঘরে বন্দী থেকে। লিটন ফিরেছেন ৭০ রান করে আর শান্তর ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে ৭৩ রানে।

ইনিংসের শুরুতে উইকেট কিছুটা কঠিন থাকে। এমন কথা আগের ম্যাচেই বলেছিলেন অধিনায়ক তামিম। নতুন বলের দরুনে সেই অস্বস্তিটা বোধহয় এদিনে সবচেয়ে বেশি জাপটে ধরেছিল লিটনকে। আইরিশ পেসারদের সামলাতে গিয়ে শুরুতে বেশ ভালই বেগ পেতে হয়েছিল এ ব্যাটারকে। তবে শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে ঠিকই কিছুক্ষণ বাদে ব্যাট হাতে ছন্দ পাওয়া শুরু করেন লিটন।

গ্রাহাম হিউমের বলে ছক্কা দিয়ে শুরু। এরপরেই মোমেন্টাম পেয়ে যান লিটন। হিউমের করা পরের বলেই আরো একটি বাউন্ডারি খুঁজে নেন তিনি। লিটনের আক্রমণাত্বক মেজাজ ফিরে আসার সাথে সাথে বাংলাদেশের ইনিংস একটা গতি পেতে শুরু করে।

ওদিকে উইকেটের আরেক প্রান্ত থেকে শুরু থেকেই লিটনকে যোগ্য সঙ্গ দিচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। শুরু থেকেই ব্যাট হাতে দারুণ সাবলীল ছিলেন এ বাঁ-হাতি ব্যাটার। পরিস্থিতির আবদার মিটিয়ে স্ট্রাইক রোটেশন থেকে শুরু করে গ্যাপ খুঁজে বাউন্ডারিও বের করেছেন তিনি।

দুজনের জুটিতে বাংলাদেশ যখন একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন রানের গতি আরেকটু বাড়িয়ে নেন লিটন দাস। ইনিংসের ২১ তম ওভারে ম্যাথিউ হামফ্রেইজের প্রথম দুই বলেই মারেন দুই ছক্কা। আর এর মধ্য দিয়ে এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অষ্টম অর্ধশতকের দেখা পান লিটন।

লিটন যেভাবে ব্যাট করছিলেন তাতে তিন অঙ্কের ফিগারে পৌঁছাতেই পারতেন। কিন্তু কার্টিস ক্যাম্ফারের বলে ব্যক্তিগত ৭০ রানেই থেমে যায় তাঁর ইনিংস। সেঞ্চুরি না পেলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে ক্যারিয়ারে এ দিনে ২০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।

লিটন আউট হওয়ার সাথে সাথে সমাপ্তি ঘটে শান্ত-লিটনের শত রানের জুটিও। তবে ততক্ষণে টপ অর্ডারের এ দুই ব্যাটারের দৃঢ়তায় বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে গিয়েছে বাংলাদেশ।

লিটন দাসের মতো সেঞ্চুরির পথে হেঁটেছিলেন শান্তও। কিন্তু শেষ ৫ ম্যাচে ৩ ফিফটির ধারাবাহিকতাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাঁকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম ফিফটির স্বাদ পেয়েছিলেন। সেই ইংল্যান্ড সিরিজের পর এক সিরিজ না ঘুরতেই এরই মধ্যে তুলে নিলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক। তবে অর্ধশতককে শতকে রূপ না দিতে পারার আক্ষেপটা তাঁর থাকতেই পারে।

গ্রাহাম হিউমের বলে আউট হয়ে ফেরার আগে নিজের ইনিংস সাজিয়েছিলেন ৭৩ রানে। এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যেটি তাঁর এখন পর্যন্ত করা সর্বোচ্চ ইনিংস।

লিটন শান্তর গড়ে দেওয়া সেই রানের গতি পরবর্তীতে ছুঁয়েছে রেকর্ড সংগ্রহও। আইরিশদের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৩৩৮ রান করে নিজেদের ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ সংগ্রহের দেখা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এ ম্যাচে সেটাকেও ছাপিয়ে যায় টাইগাররা। মুশফিকের ৬০ বলের ঝড়ো সেঞ্চুরিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩৪৯ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link