নান্দনিকতার ধারক ও বাহক তিনি। ক্রিকেটের ময়দানে যার প্রতিটি স্ট্রোক এক একটি তুলির আঁচড়। ব্যাট হাতে যিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের কাণ্ডারি হয়ে উঠেছেন ক্রমশ। সেই লিটন দাস এবার প্রথমবারের মত খেলতে যাচ্ছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে। সবকিছু ছাপিয়ে তাঁর পরিকল্পনা দেশের ক্রিকেটকে ঘিরে। তিনি আইপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে চান বছরের শেষভাগে হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে।
কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের জার্সি গায়ে চাপানোর অপেক্ষায় বাংলাদেশের এই ওপেনার। ২০২২ সালটা দারুণ কেটেছে লিটন দাসের। ব্যাট হাতে তিনি দারুণ একটা সময় পার করেছেন, পুরো বছরজুড়ে। সেই ধারাটা খানিকটা ছুটে গিয়েছিল। তিনি হঠাৎ করেই খানিকটা রান খরায় ভুগতে শুরু করেন। তবে সেটা আর বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। নিজেকে আবার যেন ফিরে পেয়েছেন লিটন দাস। তাঁর ব্যাট আবার হাসতে শুরু করেছে।
তবে গেল বছরের পারফরমেন্সই হয়ত তাঁকে আইপিএলে খেলার সুযোগ করে দিয়েছে। সেই সুযোগ পেয়ে বেশ প্রফুল্ল লিটন। ভারতীয় গণমাধ্যমে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে লিটন নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন লিটন। তিনি বলেন, ‘এটা আমার জন্যে বড় সুযোগ। আইপিএলে ডাক পাওয়ার অনুভূতি চট করে বলে বোঝানো কঠিন। তবে এক কথায় দূর্দান্ত অনুভূতি। তাছাড়া কেকেআরে সুযোগ পাওয়া আমার ক্যারিয়ারের বড় প্রাপ্তি।’
আগামী ৩১ মার্চ আইপিএল মাঠে গড়াবে। যদিও দলের সাথে শুরু থেকে যুক্ত হতে পারছেন না। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শেষ হওয়ার আগে ছাড়পত্র মেলেনি লিটনের। তাইতো শুরুর বেশ কয়েকটা ম্যাচ তিনি খেলতে পারছেন না। তাছাড়া আইপিএলের মাঝপথে আয়ারল্যান্ডে খেলতে যাবে বাংলাদেশ। আর স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের অন্যতম সেরা অস্ত্র ছাড়া যেতে নারাজ বাংলাদেশ।
তবে পুরো আইপিএল খেলতে না পারার শঙ্কায় খানিকটা আক্ষেপ রয়েছে লিটনের। তবে সেখানেও রয়েছে তাঁর জাতীয় দলের প্রতি নিবেদন। এই বছরের অক্টোবর-নভেম্বর মাসে ভারতের মাটিতে বসবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ আসর। আর তাইতো লিটনের ইচ্ছে আইপিএলের সবগুলো ম্যাচ খেলার। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যদি পুরো আইপিএলটা এবার খেলতে পারি তাহলে ভারতের প্রায় প্রতিটা শহরের মাঠ সম্পর্কে একটা ধারণা তৈরি হবে আমার। ওখানকার পরিবেশ, পরিস্থিতি সম্পর্কেও অভিজ্ঞতা হবে। আমি নিশ্চিত, আইপিএল অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপে কাজে লাগবেই।’
বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে লিটন দাস অন্যতম ভরসার নাম। ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সাথে টাইগারদের ইনিংসের সূচনাটা তাঁর হাত ধরেই আসে। লিটনের দিনে যেকোন বোলিং লাইনআপ যেন স্রেফ এক বোলিং মেশিন। তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের যেকোন বাঘা-বাঘা বোলারদের একহাত দেখে নিতে জানেন। আর সেই লিটন যদি কন্ডিশন সম্পর্কে অবগত থাকেন, তবে ঠিকটা কতটা আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারেন, তা আর না বলেও দিলেও হয়।
তবে এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে লিটন খেললে তাঁকে কন্ডিশনের অভিজ্ঞতা রপ্ত করা ছাড়াও বেশকিছু চ্যালেঞ্জ লুফে নিতে হবে। কলকাতা নাইট রাইডার্স দলটায় অধিনায়ককে ঘিরে একটা ধুম্রজালে সৃষ্টি হয়েছে। তাইতো একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার হিসেবে নিজের পারফরমেন্সের পাশাপাশি দলকে উজ্জীবিত করবার দায়িত্ব থাকবে লিটনের কাঁধে। এছাড়া কেকেআরের উইকেটরক্ষক সমস্যার সমাধান হিসেবে টিম ম্যানেজমেন্ট হয়ত তাকেই বেছে নেবে।
অন্যদিকে প্রায় নয় বছর ধরে শিরোপা খরায় ভুগছে ফ্রাঞ্চাইজিটি। সেক্ষেত্রেও নিজেকে উজাড় করে দেওয়া প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন লিটন। তিনি বলেন, ‘আমার প্রথম আইপিএল। সবসময় দলকে সাফল্যের পথে নিয়ে যাওয়ার কথা সবাই ভাবে। তবে আমার প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য প্লে,অফ, তারপরে ফাইনাল বাকিটা দেখা যাক। আমি প্রথম একাদশে সুযোগ পেলে নিজের একশো শতাংশ দেওয়ার চেষ্টা করব।’
লিটন নাইট রাইডার্সের হয়ে ঠিক কতটা উজ্জ্বল হবেন, সে তথ্য সময়ের জানা। তবে আশাবাদী লিটনের ব্যাট থেকে ঝড়ুক আলোকরশ্মি। তাঁর তুলির আঁচড়ে মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাক গোটা কলকাতায়। প্রেমের নগরীতে লেখা হোক লিটনের নতুন গান।