দিন শেষে অবস্থা যাই দাঁড়াক না কেন মিরপুরে প্রথম দুই সেশন বাংলাদেশের নামেই লেখা হয়ে থাকল। আয়ারল্যান্ড বড় কোনো আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি। তিনটা উইকেট হারিয়েছে প্রথম সেশনে। পেসারদের হাতে দুই ওপেনার বধ হওয়ার পর তৃতীয় ব্যাটারকে সাজঘরে পাঠান তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় সেশনে খুব কাছাকাছি সময়ে আউট হন আরও তিন আইরিশ।
আয়ারল্যান্ডের মত দলের বিপক্ষে টেস্টে যেমন প্রভাব বিস্তার করে খেলা দরকার তা করতে পেরেছে সাকিবের দল। যদিও, সাকিব আল হাসান নিজে অবশ্য ছিলেন খানিকটা এলোমেলো। প্রথম দুই সেশনে তিনি একেবারেই বোলিংয়ে আসেননি।
এখানেই শেষ নয়, সকালের সেশনে দু’টো অদ্ভুত রিভিউ নিয়েছে বাংলাদেশ। মিস করেছে দু’টোই। আর দু’টোই এমন রিভিউ যেটা সাদা চোখেই পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিল যে – আউট হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
প্রথমটা তাইজুল ইসলামের বোলিংয়ে। আইরিশ ইনিংসের একাদশ ওভারে সামনে ছিলেন তখন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবির্নি। কট বিহাইন্ডের আবেদন। কেবল উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে লিটন দাস ছাড়া তেমন কেউ আবেদনও করেননি।
সাকিব কি বুঝে যেন রিভিউ নিয়ে নিলেন। আম্পায়ার সেখানে আল্ট্রা এজ ব্যবহার না করলেও পারতেন। কারণ, ব্যাট আর বলের মধ্যে ছিল ইঞ্চি খানেকের ফারাক।
তিন ওভার বাদে আবারও দৃশ্য। এবার অবশ্য মেহেদী হাসান মিরাজের করা ডেলিভারিটায় আবেদন আরেকটু জোড়ালোই ছিল। তারপরও কেবল রিপ্লে দেখেই পরিস্কার যে এটাও আউট হবে না। আম্পায়ার কল, ইমপ্যাক্ট, উইকেট মিসিংয়ের হিসাব তো পরের ব্যাপার। আরেকটা রিভিউ মিস বাংলাদেশের।
ইনিংসের প্রথম ১৪ ওভারের মধ্যে দু’টো রিভিউ হারিয়ে ফেলল স্বাগতিকরা। অধিনায়ক সাকিবকে বরাবরই খুব ভাল ম্যাচ রিডার বলা হয়। তবে, এবার অবশ্য নিজের এই সুনামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি তিনি।অধিনায়ক হিসেবে সাকিবের ভূমিকাও ছিল সামান্যই। বরং, সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম ইকবালই এগিয়ে গিয়ে ফিল্ডিং সেট করছিলেন। ব্যাপারটা এমন যে – সাকিব যেন আগ্রহই হারিয়ে ফেলেছিলেন!
অবশ্য সেটার একটা কারণ অবশ্য হতে পারে একদিন আগে ঘটে যাওয়া অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) দল কলকাতা নাইট রাইডার্স তাঁর সাথে চুক্তি বাতিল করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দেওয়া অনাপত্তিপত্র অনুযায়ী যেটুকু সময় সাকিব পাচ্ছিলেন আইপিএলের জন্য, তাতে পোষাচ্ছিল না কেকেআরের। তাই সাকিবের সাথে আলাপ করেই নতুন খেলোয়াড় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাঁরা। সাকিবও মেনে নিয়েছে কেকেআরের সিদ্ধান্ত।
সাকিব বোর্ডের সিদ্ধান্তও মেনে নিয়েছেন, তবে মনে নিয়েছেন নাকি – সে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। গেল পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ৩১টা টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। সেখানে শীর্ষ ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিবের অনুপস্থিতিই ছিল সবচেয়ে বেশি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট ও ব্যক্তিগত কারণ মিলিয়ে এর মধ্যে ১৬ টা টেস্টই খেলেননি তিনি। সাকিবের পরেই আছেন তামিম ইকবাল। ইনজুরিজনিত সমস্যায় ১৫ টি টেস্ট খেলেননি তিনি। সবচেয়ে কম একটা টেস্ট মিস করেছেন লিটন দাস।
এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে, সাকিবকে বরাবরই ছাড় দিয়ে এসেছে বিসিবি। এবারই বরং একটু কড়া আচরণ দেখা গেল। কারণ, সাকিবই তো টেস্ট দলের অধিনায়ক। কিন্তু, প্রশ্ন হল – জোর করে কি ভালবাসা হয়? সাকিব কী সত্যিই মন থেকে চেয়েছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এই টেস্টটা খেলতে?