ফ্রম অস্ট্রেলিয়া টু নিউজিল্যান্ড

একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে খেলেন রনকি। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপলার ওয়েসেলসের পর পরবর্তী ২০ বছরে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার কীর্তি গড়েন লুক রনকি।

জন্মগত ভাবেই পেশি শক্তিটা অন্যদের চেয়ে বেশি। হাঁকাতে পারতেন বড় বড় ছক্কা। অল্প বয়সেই পেয়েছিলেন পিঞ্চ হিটার তকমা। ক্যারিয়ার গড়তে চেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ায়। কিন্তু ব্র‍্যাড হাডিন দলে থাকায় অজিদের জার্সি গায়ে ভবিষ্যতটা অন্ধকার দেখছিলেন তিনি।

অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে আসেন নিজ জন্মভূমি তাসমান পাড়ের আরেক দেশ নিউজিল্যান্ডে। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট অবশ্য সাদরে গ্রহণ করে তাকে। সুযোগ পেয়ে গেলেন জাতীয় দলে। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম গ্লাভস নামক দস্তানা ছাড়ার পর সেই জায়গায় একটা শূন্যস্থান তৈরি হয়েছিল। সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন অস্ট্রেলিয়া ফেরত এই ব্যাটার।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে বিশ্বক্রিকেটে নিজেকে জানান দিলেন বিধ্বংসী ব্যাটার হিসেবে। হ্যাঁ, নিউজিল্যান্ডের সাবেক উইকেটরক্ষক ব্যাটার লুক রনকির কথাই বলছি। অস্ট্রেলিয়ার জার্সিটা ফেলে দিয়ে গায়ে জড়িয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডের জার্সি। আর সেই জার্সি গায়ে তকমা পেয়েছিলেন ‘টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্ট’ হিসেবে।

২০১৫ বিশ্বকাপের ফাইনালের আগে রনকির মা ম্যাগাই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি চাই আমার ছেলে সেঞ্চুরি করুক, কিন্তু অস্ট্রেলিয়া ১ রানে ম্যাচটা জিতে যাক।’

রঞ্চির মা ম্যাগাই ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক আর বাবা নিউজিল্যান্ডের। যদিও নিউজিল্যান্ডেই জন্মগ্রহণ করেন রঞ্চি। ৬ বছর বয়সে পরিবারের সাথে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান তিনি। সেখানে ২০০৮ সালে ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক।

এরপর পার্থের হয়েও প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অংশ নেন রনকি। সেখান থেকেই পাওয়ার হিটিং সামর্থ্য আর উইকেটরক্ষক হিসেবে পারদর্শীতা দেখিয়ে সুযোগ পেয়ে যান অস্ট্রেলিয়া দলে। ব্র‍্যাড হাডিনের ইনজুরিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে দলে ডাক পান। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেছেন ৪ ওয়ানডে। ওই চার ম্যাচের শেষ ম্যাচে অজিদের হয়ে গড়েছিলেন রেকর্ড। মাত্র ২২ বলে ফিফটি করে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওয়ানডেতে চতুর্থ দ্রুততম ফিফটি করেন রঞ্চি!

ওই সিরিজে টি-টোয়েন্টিতেও অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে অভিষেক হয় রনকির। তবে এক ম্যাচের বেশি খেলার সুযোগ হয়নি তাঁর। হাডিন ফেরায় ওই সিরিজের পরই দল থেকে বাদ পড়েন।

ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়েও ফর্মটা ঠিকঠাক যাচ্ছিল না। টানা ব্যর্থতায় ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া দল থেকেও বাদ পড়লেন। বেশ কয়েক বছর অপেক্ষার প্রহর গুনেছিলেন। অপেক্ষায় ছিলেন সুযোগের। কিন্তু অনুমান করে ফেলেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার জার্সি গায়ে ফেরার সুযোগটা আর নেই।

অনিশ্চয়তায় থাকা ক্যারিয়ার ছেড়ে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডে। সেখানে ঘরোয়া দল ওয়েলিংটনের পক্ষ থেকে তাঁর সাথে যোগাযোগ করা হয়। মূলত রনকির পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যের কারণেই তাঁকে প্রস্তাব দিয়ে বসে ওয়েলিংটন। সেই সুযোগটাও লুফে নেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটার।

নতুনভাবে ক্রিকেটে ক্যারিয়ার গড়তে ২০১২ সালে বাবার সাথে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান রনকি। বছর খানেকের মাঝেই নিউজিল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে যান তিনি। ২০১৩ সালের মে মাসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক।

ক্যারিয়ারে মাত্র একটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তবে ওই ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছিলেন বিধ্বংসী এক ইনিংস। নিজের পাওয়ার হিটিং সামর্থ্যের সবটাই দিয়েছিলেন লঙ্কানদের বিপক্ষে ওই ম্যাচে। ৯৯ বলে ১৭০ রানের সেই বিধ্বংসী ইনিংসটি রঞ্চির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেরা।

২০১৫ সালে সাদা পোশাকে অভিষেক রনকির। তবে টেস্টে ক্যারিয়ারটা লম্বা হতে পারেনি। মাত্র চার টেস্টেই সীমাবদ্ধ ছিল রঞ্চির ক্যারিয়ার। অভিষেক টেস্টে ফিফটির পরেও সাদা পোশাকে নিজের জায়গা মেলাতে পারেননি রঞ্চি। দলে তখন নিয়মিত মুখ বিজে ওয়াটলিং।

তবে রঙিন পোশাকে অনেকটাই উজ্জ্বল বলা চলে। ম্যাককালামের গ্লাভস ছাড়ার পর রঙিন পোশাকে ওয়াটলিং ছাড়া তেমন দুর্দান্ত কোনো উইকেটরক্ষকের দেখাও পায়নি নিউজিল্যান্ড। ৮৫ ওয়ানডেতে ২৪ গড়ে ১৩৯৭ রান। খুব বেশি দুর্দান্ত ক্যারিয়ার এমন না। আছে মাত্র চার ফিফটি। তবে লোয়ার-মিডল অর্ডারে ফিনিশিংটা করতে পারতেন বেশ ভাল। ৩৩ টি-টোয়েন্টিতে ১৮ গড়ে করেছেন ৩৫৯ রান। কিন্তু স্ট্রাইক রেটটা নজরকাঁড়া। ১৪০ স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন এই ফরম্যাটে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) উদ্বোধনী আসরেই মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে পেয়েছিলেন খেলার সুযোগ। বড় বড় শটস খেলার সক্ষমতাই তাঁকে টেনে নিয়েছিল আইপিএলে। এমন কি আইপিএল ইতিহাসের প্রথম বল মোকাবেলা করার কীর্তিটাও রঞ্চির দখলে! সাদামাটা পারফরম্যান্সে ২০০৯ সালের পর অবশ্য আইপিএলে আর খেলার সুযোগ হয়নি এই ব্যাটারের।

একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের হয়ে জাতীয় দলে খেলেন রনকি। দক্ষিণ আফ্রিকার কেপলার ওয়েসেলসের পর পরবর্তী ২০ বছরে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে দুই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলার কীর্তি গড়েন লুক রনকি।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...