ধরার বুকে দানবের দিন

দৌড়ে রান নিতে মোটেই পছন্দ করেন না তিনি! সবসময়ই চার-ছক্কার মারে ইনিংস সাজাতে পছন্দ করেন তিনি৷ আর গেইলের চিরাচরিত এই অভ্যাসের সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে।

ক্রিস গেইল মানেই চার ছক্কার ফুলঝুরি, ক্রিস গেইল মানেই ছক্কা বৃষ্টি, ক্রিস গেইল মানেই ইউনিভার্স বস৷ ক্রিস গেইলের এই সকল ‘মানে’ দেখতেই টিভি পর্দার সামনে বসে গোটা দুনিয়ার অসংখ্য চোখ। ইউনিভার্স বসই যে ক্রিকেটের অন্যতম সেরা এন্টারটেইনার।

দৌড়ে রান নিতে মোটেই পছন্দ করেন না তিনি! সবসময়ই চার-ছক্কার মারে ইনিংস সাজাতে পছন্দ করেন তিনি৷ আর গেইলের চিরাচরিত এই অভ্যাসের সবচেয়ে বড় প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) মঞ্চে।

এক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন এই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফেরিওয়ালা। রেকর্ড গড়া মহাকাব্যিক সেই ইনিংসটির স্মৃতি আজো ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে তাজা! ৬৬ বলে ১৭৫ রানের হার না মানা ইনিংসটাই টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে সর্বকালের সেরা।

ব্যাঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে সেদিন টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পুনে। ব্যাঙ্গালুরুর হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন ক্রিস গেইল ও তিলকারত্নে দিলশান। প্রথম ওভার থেকেই বোলারদের উপর চড়াও হয়ে ব্যাট করতে থাকেন ক্রিস গেইল। যা কিনা তার চিরাচরিত স্বভাব!

গেইলের চার ছক্কার ফুলঝুরি দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন পুনের বোলাররা। আরেকপ্রান্তে দিলশান শুধু গেইল শো দেখছিলেন আর স্ট্রাইকে গেলেই সিঙ্গেল নিয়ে গেইলকে খেলতে দিচ্ছিলেন। অশোক ডিন্ডা, ঈশ্বর পান্ডে কিংবা মিচেল মার্শ কাউকেই ছাড় দেন তিনি। বলকে সহজেই বাউন্ডারির বাইরে নিয়ে ফেলছিলেন ক্রিস গেইল।

প্রথম পাঁচ ওভারেই আসে ৬১ রান। পঞ্চম ওভারে মিশেল মার্শের করা ওভার থেকে গেইল নেন ২৮ রান! যা কিনা ওই টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ রানের ওভার ছিলো। সেই সাথে ৬১ রানের মধ্যেই গেইল তুলে নেন ঝড়ো ফিফটি। দলীয় ৮ ওভার হওয়ার আগেই গেইল ঝড়ে দলের রান শ’য়ের উপর!

১১২ মিটার ছক্কা হাঁকিয়ে আইপিএল ইতিহাসের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন ক্রিস গেইল। ৩০ বলে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন গেইল! আইপিএল নয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন গেইল। দলীয় ১৬৭ রানে প্রথম উইকেটের পতন হয়! ১৬৭ রানের মধ্যে মাত্র ৩৩ রান করে আউট হন দিলশান।

তবে আরেকপ্রান্তে গেইল ঝড় তখনো চলছেই। দলীয় ১৯৬ রানের মাথায় নিজের দেড়শো রান পূর্ণ করেন ইউনিভার্স বস। নিয়মিত বোলারদের বেধরক পিটুনি দেখে নিজেই বোলিংয়ে আসেন পুনের অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ! কিন্তু তার ওভার থেকে গেইল নেন ২৯টি রান, যা কিনা ওই টুর্নামেন্টের সবচেয়ে খরুচে ওভার হিসেবে রেকর্ড হয়।

মজার ব্যাপার হল, এই ফিঞ্চই পরবর্তীতে গেইলের রেকর্ডের ধারের কাছে পৌঁছাতে পারেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৭২ রানের ইনিংস তিনি খেলেন, ২০১৮ সালে। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে না হলেও, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এটাই আছে চূড়ায়।

আবার গেইলে ফেরা যাক। ৫৩ বলে দেড়শো পূর্ণ করে ক্রিস গেইল। শেষ দিকে এবি ডি ভিলিয়ার্সের আট বলে ৩১ আর গেইলের অপরাজিত ১৭৫ রানের ইনিংসে নির্ধারিত ২০ ওভারে পাঁচ উইকেটে ২৬৩ রানের পাহাড়সম সংগ্রহ করে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালুরু।

৬৬ বলের ইনিংস গেইল হাঁকান ১৭ ছক্কা ও ১৩ চার। সেই সাথে সে সময়ে তিনি এক ইনিংসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর মালিক হন। পরবর্তীতে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) এক ইনিংসে ১৮ ছক্কা মেরে নিজের রেকর্ড নিজেই ভাঙেন গেইল। এছাড়া ব্যাঙ্গালুরুর করা ২৬৩ রান টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ সর্বোচ্চ দলীয় রানের ইনিংস।

ব্যাঙ্গালুরুর করা ২৬৩ রানের জবাবে নয় উইকেটে ১৩৩ রান সংগ্রহ করে পুনে। ১৩০ রানের বিশাল জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্যাঙ্গালুরু। সেই ম্যাচের শুরুতে অল্প কিছু সময় বিদ্যুৎ চমকানো ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি নামায় খেলা বন্ধ ছিলো তবে পরবর্তীতে সম্পূর্ণ খেলাই অনুষ্ঠিত হয়।

সেদিনের ম্যাচ শেষে পুনের অধিনায়ক হয়তো মনে মনে আক্ষেপ করেছিলেন কেন বৃষ্টিতে ভেস্তে গেলো না সেই ম্যাচটি। সেদিন ব্যাঙ্গালুরুতে আকাশ পানে মেঘের দেখা না মিললেও ক্রিস গেইলের ছক্কা বৃষ্টিতে এক মহাকাব্যিক ইনিংস দেখেছিলো ক্রিকেট বিশ্ব।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...