খ্যাপাটে তারুণ্যের ব্যাকুলতা

রাহুল দ্রাবিড়ের কপিবুক ডিফেন্সে যেমন আপনি একটি মুগ্ধতা ছড়ানো শিল্প উপভোগ করতে পারবেন, তেমনি নার্ভাস নাইন্টিজকে বুড়ো আঙুল দেখানো রিশভ পান্টের রিভার্স স্কুপ/সুইপে খ্যাপাটে তারুন্য দেখতে পাবেন!

ক্রিকেট আপনাকে শিল্পীর সন্ধান দেবে যুগে যুগে। শিল্পীর শিল্পকে শুধু খুঁজে নেবার দায়িত্বটা আপনার!

কাউন্টার অ্যাটাককে শিল্পের পর্যায়ে নিতে দেখেছিলাম অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসকে। খুব ডিফিকাল্ট পিচে অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতাকে আড়াল করতে সাইমন্ডস দাঁড়িয়ে যেতেন ঢাল হয়ে। ব্যাটিংকে হঠাৎ করেই সহজ মনে হত! প্রায় এক যুগ পর ঋষভ পান্ত নামের এক তরুণকে সেইম অথোরিটি নিয়ে খেলতে দেখছি। ফিয়ারলেস ক্রিকেটের ডেফিনিশন একেকজনের কাছে একেক রকম। পান্তের বর্তমান অ্যাপ্রোচকে আমি তাই শুধু ফিয়ারলেস টার্মে আটকে রাখব না। খ্যাপাটে অথচ ক্যালকুলেটিভ!

ডিফেন্সের ফাঁকফোঁকরগুলো ঢাকতে আক্রমণকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে পারার এই সক্ষমতা পান্টকে অপরিহার্য বানাবে। পান্ট আক্রমন করবে বিপক্ষ দল জানে, কিন্তু কখন করবে সেটা শুধু পান্টই জানে। এই আনসার্টেইনিটি বিপক্ষ দলের ক্যাপ্টেনকে ভাবতে বাধ্য করে, প্ল্যানে আমুল পরিবর্তন আনতে বাধ্য করে। আজ যেমন নতুন বল আসার আগে সবকিছু থমথমে।

রুট নতুন বলের অপেক্ষায়, অ্যান্ডারসনকে ফ্রেশ রেখে মনে মনে হয়ত প্ল্যান করেছিলেন ডাবল স্ট্রাইকের! অথচ পান্ট ভেবে রেখেছিলেন ভিন্ন কিছু! প্রথম বলেই অ্যান্ডারসনকে স্টেপ আউট করে লফটেড বোলার্স ব্যাক ড্রাইভ! নতুন স্পেলের প্রথম বলেই এন্ডারসনের বিশ্বাসে চিড়! পুরো খেলার মোমেন্টামই বদলে গেল ওই এক ওভারে!

ধারাভাষ্য কক্ষে তখন সুনীল গাভাস্কার বলে যাচ্ছেন, শান্ত হও ইয়াং ম্যান, সেঞ্চুরি করতে পারার সুযোগ প্রতিদিন আসে না। আর বাইশ গজে হয়ত পান্ত ভাবছেন, ‘আশির দশক থেকে ক্রিকেট অনেক পথ পাড়ি দিয়েছে স্যার!’

নব্বইয়ের ঘরে ব্যাট করা কোন ব্যাটসম্যান স্বয়ং জেমস অ্যান্ডারসনকে রিভার্স স্কুপ/সুইপ করবে, সেটাও আবার নতুন বলে, এমনটা হয়ত নিজের সবথেকে খারাপ স্বপ্নেও দেখেননি অ্যান্ডারসন! শটটা হয়ে যাবার পর, রুট এবং এন্ডারসনের চেহারাই বলে দিচ্ছিল পুরো সিনারিও।

আউট হতে পারতেন। নব্বইয়ের ঘরে আরও একবার কাটা পড়ে প্যাভিলিয়নে যাবার সময় কি ভাবতেন পান্ট? অনুশোচনা কি হত? সেঞ্চুরি হাতছাড়া হবার অনুশোচনা হয়ত হত না, তবে শটটা সঠিকভাবে খেলতে না পারার অনুশোচনা হত!

বুনো সৌন্দর্য বলে একটা টার্ম লেখকেরা ব্যবহার করেন। ঋষভ পান্তকে কি সেটা বলা যায়? অথবা তার ব্যাটিংকে শিল্প? নাই বা বলা গেল সেগুলো, এন্টারটেইনার তো বলা যায়? তবে ভারতীয় ড্রেসিংরুমে শব্দটা হয়ত ‘সেভিয়র’!

আমি রাহুলের ব্যাটিংয়ে শিল্প দেখতাম, ভিভিএস লক্ষ্মণের ব্যাটিংয়ে ছন্দ, শচীন রমেশ টেন্ডুলকারের ব্যাটিংয়ে অথোরিটি, লারাতে আগ্রাসন, ওয়াহতে অলসতা, মাতারায় ধ্বংস! আমি এবি ডি ভিলিয়ার্সে পুলকিত হয়েছি, কোহলিতে অবাক, আবার আমি জো রুটে দৃঢ়তা দেখেছি, কেইন উইলিয়ামসে নির্বাক!

শিল্পী আমি অনেক দেখেছি, তার শিল্পকে ধারন করেছি মনের মনি কোঠায়! তবে, আমি এন্টারটেইনার কম দেখেছি, ঋষভ পান্ত সেই বিরল প্রজাতির একজন। কিছু ক্ষেত্রে বিরাট কোহলি বা স্টিভেন স্মিথ নয়, ঋষভ পান্তের টেস্ট ব্যাটিংই হয়ত আমি টিকেট কেটে দেখতে চাইব।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link