নয়া রাজের রাজত্ব

রাজের বয়স তখন প্রায় ১২ বছর। তখন পর্যন্ত ক্রিকেটের প্রতি কোন আগ্রহই নেই এই ছেলের। অথচ বাবা পাঞ্জাবের নামকরা কোচ, সুখবিন্দর সিং বাওয়া। তবে এরপর থেকে ক্রিকেটই রাজের ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠেছিল। আর আজ সেই রাজই ভারতের আরেকটা বিশ্বজয়ের নায়ক। পঞ্চমবারের মত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়টা ভারত পেল ভাঙরা নাচে মেতে থাকা ছেলেটার হাত ধরেই।

পাঞ্জাবের আর দশটা ছেলের মতই পাঞ্জাবি গানে নাচতে ভালোবাসতেন। শৈশব একেবারে সেভাবেই কাটছিল। স্কুলে যাওয়া, পড়াশোনা করা আর টিভিতে পাঞ্জাবি গান ছেড়ে পুরা বাড়ি মাথায় তোলা। আর পড়াশোনায়ও ছিলেন দারুণ । ফলে বাবা-মার বকুনি খেতে হয়নি খুব একটা।

তবে রাজ আঙ্গাদ বাওয়ার পুরো জীবনটা হঠাৎ একদিনে বদলে যায়। বাবার সাথে এক আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যাওয়ার পর থেকেই বদলটা হলো। ছোট্ট রাজের ফুটস্টেপ গুলো আস্তে আস্তে ফুটওয়ার্ক হয়ে উঠলো।

রাজের বয়স তখন প্রায় ১২ বছর। তখন পর্যন্ত ক্রিকেটের প্রতি কোন আগ্রহই নেই এই ছেলের। অথচ বাবা পাঞ্জাবের নামকরা কোচ, সুখবিন্দর সিং বাওয়া। তবে এরপর থেকে ক্রিকেটই রাজের ধ্যান জ্ঞান হয়ে উঠেছিল। আর আজ সেই রাজই ভারতের আরেকটা বিশ্বজয়ের নায়ক। পঞ্চমবারের মত অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ জয়টা ভারত পেল ভাঙরা নাচে মেতে থাকা ছেলেটার হাত ধরেই।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ফাইনাল ম্যাচে ব্যাট, বল দুই ডিপার্টমেন্টেই ভারতের ত্রানকর্তা হয়ে এলেন। প্রথমে বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড যুবাদের ব্যাটিং লাইন আপ তছনছ করলেন। এরপর ব্যাট হাতে দলের বিপদে ৩৫ রান করে জয় নিশ্চিত করেছেন।

রাজ আঙ্গাদ বাওয়া বিশ্বমঞ্চে ভারতের হয়ে যেই ৫ উইকেট নিলেন সেটা শুধু তাঁর একার অর্জন নয়। রাজের বাবা সুখবিন্দর সিংও এই উইকেট গুলোর মালিক। নিজের ছেলের মধ্যে দিয়েই নিজের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন এই বাবা।

বাবার কাছে রাজের ক্রিকেট হাতেখড়ি। বাবা সুখবিন্দর সিং বাওয়া বলেন, ‘ছোটবেলায় সে খুব ভালো ছাত্র ছিল। স্কুলে টপ করতো। তবে একটা ম্যাচ দেখার পর হঠাৎই ক্রিকেটের প্রতি তাঁর ভালবাসা তৈরি হয়। তখন থেকেই সে মনোযোগ দিয়ে ক্রিকেটটা খেলতে শুরু করে।’

রাজের জীবনের গল্প এখানেই শেষ হয়না। এই অলরাউন্ডার জন্মগত ভাবেই ডানহাতি। বোলিং থেকে শুরু করে সবকিছুই করেন ডানহাতে। তবে ব্যাটিং করতে নামলেন বাঁহাতি বনে যান। এরপিছনেও আছে গল্প। রাজ যখন ছোট তখন তাঁর বাবার একাডেমিতে মাঝেমাঝে আসতেন পাঞ্জাবের নায়ক যুবরাজ সিং। রাজের ক্রিকেট জীবনের নায়কও ভারতের সাবেক এই অলরাউন্ডার।

ছোটবেলা থেকেই কিংবদন্তি এই ক্রিকেটারকে দেখেছেন। তাই তাঁরও যুবরাজের মত বাঁহাতে ব্যাট করা চাই। রাজ যুবরাজকে নিয়ে বলেন, ‘আমার বাবা যুবরাজ সিংকে ট্রেনিং করাতো। আমি ছোটবেলা থেকেই তাঁকে দেখতাম। আমি তাঁর ব্যাটিং এর অনেক ভিডিও দেখেছি। সে আমার রোল মডেল ছিল।। ফলে তাঁর মত করেই সব করতে চাইতাম।’

এমনকি যুবরাজের মত করে নিজেও ১২ নাম্বার জার্সিটাই পড়েন রাজ। রাজের বাঁহাতি বনে যাওয়ার গল্পটা বলছিলেন তাঁর বাবা, ‘যুবরাজ আমাদের একাডেমিতে নেট করার জন্য আসতো। আর রাজ শুধু যুবরাজের ব্যাটিং দেখতো। এরপর নিজেও বাঁহাতে ব্যাটিং করা শুরু করলো। আমি প্রথম প্রথম ঠিক করে দিতাম। ডানহাতে ব্যাটিং করার জন্য বলতাম। তবে আমি চলে গেলেই সে আবার বাঁহাতে ব্যাটিং করা শুরু করতো। পরে আমিই হাল ছেড়ে দিয়েছিলাম।’

রাজের বাবাও ছিলে পেস বোলিং অলরাউন্ডার। তাই ছেলেও শুরুতে তাই হতে চাইতেন। তবে ছেলেকে নিজের মত হতে দিতে চাননি এই কোচ। চেয়েছেন ছেলে যেন ব্যাটিং, বোলিং দুইটাই সমানতালে করতে পারে।

সুখবিন্দর সিং বলেন, ‘আমি তাঁর ব্যাটিং এর দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছি। সে যেক ক্রাইসিসের সময় ভালো ব্যাটিং করতে পারে সেভাবেই প্রস্তুত করেছি। আমি চাইনি ও একজন বোলার হোক যে টুকটাক ব্যাটিং করতে পারে। আমি চেয়ে সে যুবরাজের মত ব্যাটিং করুক আর কপিল দেবের মত বোলিং করুক।’

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...