মানিক খেলবেন মায়ের জন্য

বাংলাদেশেরই আর দশটা সাধারণ ছেলের মত তিনি। গ্রামে বেড়ে উঠা, এরপর ক্রিকেটের টানে ঢাকায় আসা। সময়ের সাথে সাথে এই শহরে নিজেকে গড়ে তুলেছেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার জন্য। আরো বড় করে বললে বাংলাদেশের হয়ে খেলার জন্য। অথচ সময়ের ফেরে ছেলেটা বিমান ধরবে। একদিন ঢাকায় এসেছিলেন ক্রিকেট খেলার জন্য, এবার ওমান যাচ্ছেন মায়ের চিকিৎসার জন্য।

পাঁচ বছরের ক্রিকেট সাধনায় হয়ে উঠেছেন একেবারে নিখাঁদ অলরাউন্ডার। সতেরো বছর বয়সী এই ক্রিকেটারের নাম ইউসুফ নবী মানিক। বাংলাদেশে বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বারবার নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তবে বাংলাদেশে ক্রিকেটটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবার তেমন কোন সুযোগ পাচ্ছিলেন না তিনি। ঢাকা মেট্রো অনূর্ধ্ব ১৮ দলেও সুযোগ হবে হবে করে হয়নি।

এরপরও নানা ভাব, নানা জায়গায় নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছেন মানিক। শুধু একটা সুযোগের অপেক্ষা দিন কাটছিল এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের। ওদিকে একটা তাড়াও ছিল মানিকের। বাড়িতে অসুস্থ মা অপেক্ষায় আছেন। ছেলে একদিন বড় ক্রিকেটার হবে। টাকার অভাবে নিজের চিকিৎসাটাও করান না। মায়ের এই কষ্ট মানিক মেনে নিতে পারেননা।

ঢাকাউ সুযোগ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। এরই মাঝে তিনি পেলেন আরো বড় খবর। ওমান থেকে ক্রিকেট খেলার প্রস্তাব এসেছে তাঁর। তাও আবার দুই বছরের চুক্তিতে ওমান থেকে ক্রিকেট খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছেন তিনি। সেখানে সুযোগ থাকবে সারাবছর জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সাথে অনুশীনল করার। সাথে মাসে প্রায় ২০০ রিয়াল পারিশ্রমিক পাবেন।

সতেরো বছর বয়সী একজন ক্রিকেটারের জন্য নিশ্চয়ই খুব বড় খবর। তবে মানিকে মনে যতটা না আনন্দের জোয়ার বয়, তারচেয়ে বেশি ভাটা দিয়ে যায় লোকের কটু কথা। বাংলাদেশে বড় হয়ে মানিক কী তবে ওমানের হয়ে ক্রিকেট খেলবে। মানিক অবশ্য নিজের কাছে ভীষণ পরিষ্কার। ওমানে দুই বছর নিজেকে প্রস্তুত করে আবার দেশেই ফিরবেন তিনি। তবে ওমানে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণটা আসলে মানিকের মা। সেখানে নিজের পারিশ্রমিকের টাকা দিয়ে করাতে চান মায়ের চিকিৎসা।

মানিক বলছিলেন, ‘ওমানে  আমি দুই বছর খেলে নিজেকে প্রস্তুত করতে চাই। সেখানে সব ধরনের সুযোগ পাব আমি। বাংলাদেশে তো নিজেকে তৈরি করার তেমন সুযোগ পাচ্ছিনা। সেখানে দুই বছর থাকলেও আমি বাংলাদেশেই ফিরব। দেশে ফিরে সুযোগ পেলে সেখানে নিজেকে প্রমাণ করবো। ওমান যাওয়ার আরেকটা বড় কারণ আমার মায়ের চিকিৎসা। আমার মায়ের মুখে টিউমার আছে। আমার প্রথম তিন মাসের পারিশ্রমিক দিয়ে আমি মায়ের চিকিৎসাটা শুরু করতে চাই।’

পাঁচ বছর ধরেই কোচ মোহাম্মদ শামীম শেখের অধীনে ক্রিকেটটা খেলে যাচ্ছিলেন মানিক। প্রিয় ছাত্র ওমান চলে যাওয়ার খবরে খানিকটা আক্ষেপই কাজ করছে এই কোচের মনে। এই কোচের মতে মানিক দেশে থাকলে হতে পারতেন বাংলাদেশের জন্য বড় সম্পদ। বাঁহাতি স্পিনের সাথে তাঁর মিডল অর্ডারে তাঁর ব্যাটিংটাও বেশ কার্যকরী।

মানিকদের এই দেশ ছেড়ে যাবার পিছনে আসলে বাংলাদেশ ক্রিকেট কাঠামোরও অনেক বড় ব্যর্থতা ফুটে উঠে। দেশের আনাচে কানাচে থাকা অনেক ক্রিকেট প্রতিভাই নিজেদের প্রমাণের মঞ্চটা খুঁজে পাননা। ফলে একটা সময় কেউ ক্রিকেটটাই ছেড়ে দেন কিংবা মানিকদের পারি জমাতে হয় ভিন্ন কোন দেশে।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link