পান্ত নাকি কার্তিক: ইয়েট টু ডিসাইড!

বিশ্বকাপে ভারত ফিনিশিং এ যার দিকে তাকিয়ে সেই কার্তিক বিগত সাত ম্যাচে খেলেছেন কেবল নয়টি বল। যদি আপনি ভেবে থাকেন তিনি ব্যাট হাতে দুঃসময় পার করছেন, সেক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি এই সাত ম্যাচে তিনি আউট হয়েছেন মাত্র একবার

কেরালার থিরুভান্তাপুরমে লোকেশ রাহুল যখন খেলা শেষ করেন, ঠিক তখন সাংবাদিকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ে দারুণ এক দৃশ্য। ম্যাচে ব্যাটিং না পেয়ে মাঠের একজন কর্মীকে সাথে নিয়ে স্টেডিয়ামের একপাশে  প্রাকটিস করছেন ঋষাভ পান্ত। ততক্ষণে দর্শকরা মাঠ ছাড়তে শুরু করলেও কয়েকজন দর্শক খেয়াল করেন পান্তকে। তারাই পান্তকে উৎসাহ দিতে থাকেন বড় শট খেলার জন্য। পান্ত অবশ্য তাদের আবদারে নজর না দিয়ে ব্যাটে-বলে টাইমিং মেটাতেই ব্যস্ত ছিলেন। তবে একপর্যায়ে এতটাই জোরে হাঁকান যে ম্যাচপরবর্তী প্রেজেন্টেশন থামিয়ে দিতে হয়। পরে অবশ্য দু:খ প্রকাশ করে পান্ত মনোযোগ দেন ব্যাট-বলে টাইমিং মেলাতেই।

গত কয়েক মাস ধরে দলের সঙ্গেই আছেন পান্ত। কিন্তু ম্যাচে মনমতো ব্যাটিং করার সুযোগই পাচ্ছেন না। প্যাড পড়ে অপেক্ষায় থাকছেন ব্যাটিংয়ে নামার, কিন্তু অপেক্ষার প্রহর আর ফুরায় না। কিছু ম্যাচে বেঞ্চে বসতে হয়েছে দীনেশ কার্তিকের জন্য, আর বাকি ম্যাচগুলোতে নেমেছেন ১৬ কিংবা ১৭ ওভারের পরে। আর শেষ দুই ম্যাচে – নাগপুরে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে থিরুভান্তাপুরমে টপ অর্ডারেই ব্যাটাররাই ম্যাচ শেষ করে এসেছেন। 

গত কয়েক মাস ধরেই ব্যাট হাতে ঠিক পুরনো ঝলক দেখাতে পারছেন না পান্ত। ভেবেছিলেন বিশ্বকাপের আগে এশিয়া কাপ আর দ্বিপাক্ষিক সিরিজে সুযোগ পেয়ে ঝালিয়ে নেবেন নিজেকে। কিন্তু দলে নিজের ভূমিকাটাই বুঝে পাচ্ছেন না তিনি। দীনেশ কার্তিকের দারুণ ফর্মের সুবাদে টিম ম্যানেজমেন্টও আছেন দোটানায়, ফিনিশার নাকি ফ্লোটার কোন পজিশনে সুযোগ দেবেন পান্তকে। আবার জাদেজার অনুপস্থিতিতে দলে বাঁহাতি ব্যাটার না থাকায় পান্তকে দল থেকে বাদও দিতে পারছেন না তাঁরা। 

ফর্মে থাকা পান্ত এক লহমায় ঘুরিয়ে দিতে পারেন যেকোনো ম্যাচের চিত্রনাট্য। লাল বলের ক্রিকেটে এর আগে নিজের সেই সামর্থ্যের প্রমাণও দিয়েছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরুতে ভুগলেও কোচ রবি শাস্ত্রীর অধীনে দারুণ উন্নতি করেন পান্ত। অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড দুই জায়গাতেই ভারতকে ম্যাচ জিতিয়েছেন এক হাতে। টেস্টে পান্ত বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বিধ্বংসী ক্রিকেটারদের একজন। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে এখনো সেই ফর্মটা টেনে আনতে পারছেন না তিনি। মজার ব্যাপার হলো একই ঘটনা ঘটেছিল বীরেন্দর শেবাগের ক্ষেত্রে। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে প্রতিষ্ঠিত হবার আগেই শেবাগ খ্যাতি পেয়ে গিয়েছিলেন টেস্টে তাঁর ভয়ডরহীন ব্যাটিংয়ের জন্য।

এই কারণেই মূলত ম্যাচে পান্তের ব্যাটিং পাওয়াটা জরুরি। টি টোয়েন্টিতে একটা দারুণ ইনিংস বদলে দিতে পারে সাদা বলের ক্রিকেটে পান্থের ক্যারিয়ার। একটা সমাধান হতে পারে তাকে মিডল অর্ডারে সুযোগ দেয়া। টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে ভারতের টপ অর্ডার ভরসা দিতে পারছে না। প্রায় প্রতি ম্যাচেই দেখা যাচ্ছে টপ অর্ডারের ধীরগতির ব্যাটিং বিপদে ফেলছে দলকে। এখনই জরুরি সময় মিডল অর্ডারকে আরো বেশি সময় ক্রিজে থাকার সুযোগ দেয়া।

তাছাড়া বিশ্বকাপের আগে খুব বেশি সময়ও পাবে না রোহিত শর্মার দল। এশিয়া কাপের পরে অস্ট্রেলিয়া আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দুটি হতে পারতো তাদের প্রস্তুতির জন্য আদর্শ। পরে ব্যাট করে ম্যাচ জেতার চাইতে বিশ্বকাপের আগে আদর্শ প্রস্তুতি নেয়া এটাই হওয়া উচিত ভারতের প্রথম লক্ষ্য। 

কেবল রিশভ পান্তই নন, ভারতের আরেক ফিনিশার দীনেশ কার্তিকও ম্যাচে ব্যাটিং করার সুযোগ পাচ্ছেন না। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ম্যাচেই ব্যাট করার সুযোগ পেলেও খেলেছেন কেবল আট বল, এরমাঝে দুই ম্যাচেই ছিলেন অপরাজিত। এর আগে পুরো এশিয়া কাপে খেলেছেন মাত্র একটি বল। তারমানে দাঁড়ায় বিশ্বকাপে ভারত ফিনিশিং এ যার দিকে তাকিয়ে সেই কার্তিক বিগত সাত ম্যাচে খেলেছেন কেবল নয়টি বল।

যদি আপনি ভেবে থাকেন তিনি ব্যাট হাতে দু:সময় পার করছেন, সেক্ষেত্রে জানিয়ে রাখি এই সাত ম্যাচে তিনি আউট হয়েছেন মাত্র একবার। ম্যাচের সংখ্যাটা বাড়িয়ে যদি শেষ ১৭ ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখি, তাহলেও মাত্র ৯৫ বল খেলেছেন কার্তিক। অর্থাৎ ম্যাচপ্রতি মাত্র পাঁচ বল খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। 

যদিও অনেকে ভাবতে পারেন ভারতের টপ অর্ডার দারুণ ফর্মে আছে, ম্যাচের বেশিরভাগ বল তারাই খেলে ফলাফল দলের পক্ষে এনেছেন। দলের জন্য তো ভালোই হচ্ছে তাহলে। কিন্তু যদি তারা ব্যর্থ হন? রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, সুরিয়াকুমার যাদবসমৃদ্ধ ভারতের টপ অর্ডার অল্পতেই ফিরে যাওয়ার রেকর্ড খুব একটা পুরনো নয়।

গত বছরের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে, ২০১৯ বিশ্বকাপ সেমিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে কিংবা আরেকটু পেছনে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল ভারতীয় টপ অর্ডার। যদিও টপ অর্ডারের ফর্মে থাকা কিংবা ইনিংসের বেশিরভাগ বল ফেস করা দলের জন্য ভালো, কিন্তু বড় মঞ্চে সফলতার জন্য মিডল অর্ডার এবং ফিনিশারদের ফর্মে থাকা জরুরি। টি টোয়েন্টি সফল হতে পুরো দলকেই হতে হয় ‘পিকচার পারফেক্ট’। অন্যথায় আরো একবার শিরোপার খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসতে হবে ভারতকে। 

ভারতের তাই উচিত হবে বিশ্বকাপের আগে ঋষাভ পান্ত এবং দীনেশ কার্তিকের ম্যাচ ব্যাটিং এর সুযোগ করে দেয়া। দরকার হলে তাদের ব্যাটিং পজিশন উপরে এনে হলেও তাঁদের ম্যাচ প্রাকটিস দরকার। এতে অবশ্য আরেকটা প্রশ্ন উদয় হয়, উপরে এনে ব্যাটিং করালে তাদের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটবে কিনা। তবে এতে খানিকটা ক্ষতি হলেও, এই দুই ব্যাটসম্যানের ম্যাচ প্রাকটিসের ফলে আদতে দল উপকৃত হবে বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের। 

পান্ত এবং কার্তিকের ব্যাটিংয়ের জন্য আদর্শ হতে পারতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টি টোয়েন্টি। সফরকারীরা মাত্র ১০৬ রানে অল আউট হয়ে যাওয়ায় টিম ম্যানেজমেন্ট চাইলেই পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারতেন দল নিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিশ্বমানের পেসারদের সামনে নিজেদের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নিতে পারতেন এই দুই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান। কিন্তু সে পথে হাঁটেনি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। সিরিজে আরো দুই ম্যাচ থাকায় আশা করা যাচ্ছে নেটে প্রাকটিস কিংবা ওয়ার্মআপ বাদেও ম্যাচে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পাবেন তাঁরা। 

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...